ইভ্যালি: ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জন্য দায়-দেনা অস্বাভাবিক নয়!

ভোক্তাকণ্ঠ ডেস্ক

ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. রাসেল পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে বলেছেন,  গ্রাহকের ক্ষোভ, ইভ্যালির দায়-দেনা ও বর্তমান পরিস্থিতিকে স্বাভাবিক বলে দাবি করেছেন। পুলিশকে তিনি বার বার বলেছেন- ‘একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জন্য এই দায়-দেনা অস্বাভাবিক কিছু নয়!’

সূত্রটি জানায়, রাসেল পুলিশের কাছে ইভ্যালির দায়-দেনার সর্বশেষ হিসাব দিয়েছেন। সেই হিসাব ও নিজস্ব অনুসন্ধানের আলোকে তদন্ত প্রতিবেদন প্রস্তুত করছে পুলিশ। পুলিশের প্রতিবেদনে ইভ্যালির দায়-দেনার বিষয়ে রাসেলের জিজ্ঞাসাবাদের তথ্যগুলো তুলে ধরা হচ্ছে। সেখানে রাসেল জানান, গত ১৯ ও ২৬ আগস্ট এবং ২ সেপ্টেম্বর প্রতিষ্ঠানের সম্পদের দায় বিবরণী, গ্রাহকের দেনা, গ্রাহকের সংখ্যা ও মার্চেন্টদের দায়-দেনার বিষয়ে অডিট করেন তিনি।

সূত্র জানায়, সেই অডিটের রিপোর্ট অনুযায়ী তার দায়ের পরিমাণ ৫৪২ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। এর মধ্যে মার্চেন্টরা পাবেন ২০৫ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। মার্চেন্টদের দেনার বিষয়ে রাসেল পুলিশকে জানান, যে কোনো ব্যবসার ক্ষেত্রে ক্রেডিট একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া, সব ধরনের ব্যবসাতেই এটি আছে। এছাড়া মার্চেন্টরা ইভ্যালির মাধ্যমে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ হারে মুনাফা পাচ্ছেন। তাই মার্চেন্টদের (২০৫ কোটি ৮৬ লাখ) যে দেনা রয়েছে এটি স্বাভাবিক এবং গ্রহণযোগ্য একটি পরিমাণ।

তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, রাসেল জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন, সর্বশেষ ১৬ আগস্ট পর্যন্ত গ্রাহকদের কাছে ইভ্যালির ৩১০ কোটি ৯৯ লাখ টাকা দেনা রয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংক যে কোনো পণ্যের অর্ডারে সর্বোচ্চ ১০ ভাগ অগ্রিম টাকা পরিশোধের অনুমতি দিচ্ছে। যখন অর্ডার নেওয়ার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে এবং ইভ্যালিতে কাঙ্ক্ষিত বিনিয়োগ আসবে তখন তিনি এই টাকা ফিরিয়ে দেবেন। যদিও বিনিয়োগ প্রাপ্তির অগ্রগতি ‘শূন্য’ বলে স্বীকার করেন তিনি।

রাসেল পুলিশকে জানান, গ্রাহকের পণ্য না দেওয়ার দায় ডেলিভারি প্রতিষ্ঠান ও বিক্রেতাদের ওপর চাপিয়েছেন রাসেল। গুলশান ও ধানমন্ডি থানার তথ্য অনুযায়ী, রাসেল জিজ্ঞাসাবাদে পণ্যের সঠিক ডেলিভারি না হওয়ার পেছনে ডেলিভারি প্রতিষ্ঠান (তৃতীয় পক্ষ) ও বিক্রেতা/সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকে দায়ী করেছেন।

রাসেল জানান, গ্রাহকদের অর্ডার করা পণ্যের মধ্যে ১২ থেকে ১৫ শতাংশ পণ্য ইভ্যালি নিজস্ব গুদাম থেকে কয়েকটি ডেলিভারি প্রতিষ্ঠানের (তৃতীয় পক্ষ) মাধ্যমে সরবরাহ করত। এছাড়া সিংহভাগ পণ্যের অর্ডারের বিষয়ে ইভ্যালি বিক্রেতা/সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানকে জানিয়ে দিত। সেসব প্রতিষ্ঠান পণ্য উৎপাদনের পর সরাসরি ডেলিভারি প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে দিত। তাই গ্রাহকের পণ্য না পাওয়ার পেছনে সরবরাহকারী ও ডেলিভারি প্রতিষ্ঠান দায়ী।

পুলিশি তদন্তে উঠে এসেছে, ইভ্যালি অর্ডার নেওয়ার পর পণ্য ডেলিভারির জন্য সরবরাহকারী ও বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানকে জানিয়ে দিত এবং ‘ধরে নিত’ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই সেটি ডেলিভারি হয়ে গেছে। সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ও বিক্রেতা আদৌ ডেলিভারি করেছে কি না সেটি নিজ থেকে জানার উপায় ছিল না ইভ্যালির। আবার জানার চেষ্টাও করত না।

জিজ্ঞাসাবাদে রাসেল পুলিশকে  আরো বলেন, ‘আমরা সিংহভাগ পণ্য সরবরাহকারী/বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানকে ডেলিভারির দায়িত্ব দিতাম। কোনো গ্রাহক যদি পণ্য না পেতেন তাহলে তারা আমাদের জানানোর আগ পর্যন্ত আমরা ধরে নিতাম যে পণ্য ডেলিভারি হয়ে গেছে।’ এটাকে ইভ্যালির ব্যবসায়িক পতনের অন্যতম কারণ বলে উল্লেখ করেছে পুলিশ।

ইভ্যালির বিরুদ্ধে রাজধানীর গুলশান ও ধানমন্ডি থানার দুটি মামলার তদন্ত করছে পুলিশ। উভয় থানার মামলায় তাদের ৩টি ধারায় অপরাধের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। ফৌজদারি দণ্ডবিধির ধারাগুলো হচ্ছে ৪২০, ৫০৬ ও ৪০৬। দণ্ডবিধির ৪২০ নম্বর ধারাটিতে প্রতারণা করে সম্পত্তি বা অর্থ হাতিয়ে নেওয়া, ৪০৬ নম্বর ধারায় ‘বিশ্বাসঘাতকতা’ এবং ৫০৬ নম্বর ধারায় ভিকটিমকে ‘হত্যা বা আঘাত করার ভয়ভীতি’ দেখানোর অপরাধের কথা বলা হয়েছে।

তদন্ত-সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ইভ্যালির বিরুদ্ধে গুলশান থানার মামলাগুলোর চার্জশিট মোটামুটি প্রস্তুত হয়ে গেছে। আনুষঙ্গিক কিছু কাজ কেবল বাকি আছে। এগুলো গুছিয়ে আনা হলেই আদালতে চার্জশিট জমা দেওয়া হবে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক ওয়াহিদুল ইসলাম এ বিষয়ে সুনির্দষ্ট কিছু বলতে রাজি হননি।

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশের একটি সূত্র বলছে, ইভ্যালির রাসেলসহ অন্যদের বিরুদ্ধে এই মাসেই অর্থাৎ অক্টোবর মাসের মধ্যেই চার্জশিট জমা দেওয়া হতে পারে।

ইভ্যালির বিরুদ্ধে প্রতারণাসহ বেশ কয়েকটি মামলার তদন্ত করছে সিআইডি। তবে তারা মূলত অর্থ পাচারের বিষয়গুলোই তদন্ত করছে। সিআইডি জানায়, তাদের কাছে যেসব প্রতারণার মামলা এসেছে সেগুলোর তদন্তে যদি অর্থ পাচারের কোনো তথ্য পাওয়া যায় সেক্ষেত্রে তারা মামলায় মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের নতুন ধারা সংযোজন করবে।

ইভ্যালিসহ অনলাইন প্লাটফর্ম ব্যবহার করে যারা প্রতারণা করে গ্রাহকের টাকা আত্মসাৎ করেছে তাদের বিরুদ্ধে অনেকগুলো মামলা হয়েছে। এই মামলাগুলোর তদন্ত চলমান আছে। যারা প্রতারণা করেছে এবং যারা সহযোগিতা করেছে সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে। খবর: ঢাকা পোস্ট