মাত্রাতিরিক্ত ফি শ্রমিকদের বিদেশ গমনে বাধা

শ্রমিকদের বিদেশ যাওয়ার ক্ষেত্রে বড় একটি বাধা হচ্ছে মাত্রাতিরিক্ত ফি বা চার্জ। রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো বেশি টাকা দাবি করায় বিদেশ যেতে পারছে না তারা।

নিউজ বাংলা টুয়েন্টিফোরের মাধ্যমে জানা যায়, করোনা মহামারির প্রভাবে দেশে কর্মসংস্থান ও অভিবাসনের ওপর কী ধরনের প্রভাব পড়েছে তার ওপর জরিপ করে সানেম। প্রবাসী ও স্থানীয় শ্রমিক এবং দেশের মধ্যে কাজ করেন এমন ব্যক্তিদের ওপর টেলিফোনে জরিপটি পরিচালনা করে সংস্থাটি। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত জরিপ চালানো হয়।

গবেষণা সংস্থা সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) এক জরিপে এ তথ্য উঠে এসেছে। এতে বলা হয়েছে, ভ্রমণ খরচ বেড়েছে সাড়ে ১২ শতাংশ এবং বিদেশ যাওয়ার খরচ বেড়েছে ২৩ শতাংশ।

জরিপে দেখা গেছে, করোনাকালীন (গত বছরের মার্চ থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত) দেশের ৪৯ শতাংশ কর্মজীবী চাকরি হারিয়েছেন। বেতন বন্ধ, কম বেতন, কিংবা বাসাভাড়াসহ অন্যান্য খরচ চালাতে না পারায় এদের অধিকাংশই তখন ঢাকা শহর ছেড়ে গ্রামে চলে যান।

সানেম বলছে, করোনা পরিস্থিতি ধীরে ধীরে উন্নতি হওয়ার পর চাকরিচ্যুত ব্যক্তিদের অনেকেই পুনরায় ঢাকায় ফেরেন এবং এদের কেউ কেউ কাজে যোগ দিলেও প্রায় ৯ শতাংশ কোনো কাজ পাননি। মানে, তারা এখনও বেকার।

জরিপে দেখা গেছে, করোনার সময়ে ২০ শতাংশ প্রবাসী শ্রমিক কাজ হারিয়েছেন এবং এদের মধ্যে ৫ শতাংশ দেশে ফেরত আসেন।

করোনা মহামারির প্রভাবে দেশের কর্মসংস্থান ও অভিবাসনের ওপর কী ধরনের প্রভাব পড়েছে, তার ওপর জরিপ করে সানেম। প্রবাসী ও স্থানীয় শ্রমিক এবং দেশের মধ্যে কাজ করেন এমন ব্যক্তিদের ওপর টেলিফোনে জরিপটি পরিচালনা করে সংস্থাটি। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত জরিপ চালানো হয়।

বুধবার এক ওয়েবিনারে জরিপের ফল তুলে ধরেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও সানেমের গবেষণা পরিচালক ড. সায়মা হক বিদিশা।

গত বছরের মার্চ থেকে ডিসেম্বের ৬২ শতাংশ শ্রমিকের আয় কমেছে। কোনো কাজ না পেয়ে সাড়ে ৫ শতাংশ শ্রমিক তাদের পেশা বদল করেন বলে জরিপে উঠে এসেছে। চাকরিজীবী ও শ্রমজীবীর পাশাপাশি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ক্ষতির বিষয়টি গবেষণায় উঠে এসেছে।

জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ৮০ শতাংশ বলেছেন, ওই সময়ে তাদের প্রতিষ্ঠানের আয় কমে যায়। ৫২ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন, একই সময়ে তাদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান সাময়িক বন্ধ করে দেন। অবশ্য পরে চালু হলেও এখনও স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসেনি বলে গবেষণায় তুলে ধরে সানেম।

দেশের অর্থনীতির প্রধান খাত কৃষি, উৎপাদনশীল (ম্যানুফ্যাকচারিং) খুচরা–পাইকারি ব্যবসা, পরিবহন ও স্বাস্থ্য করোনার প্রাদুর্ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জরিপে উঠে এসেছে।

আলোচনায় অংশ নিয়ে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘লোকজন ধীরে ধীরে কাজে ফিরে যাচ্ছে, এটি ইতিবাচক। যদি নতুন বিনিয়োগ না হয়, তাহলে কাজের সুযোগ সৃষ্টি হবে না। গ্রামে কর্মসংস্থানের সুযোগও কমে যাচ্ছে।’

রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিটের (রামরু) প্রধান ড. তাসনীম সিদ্দিকি বলেন, ‘মার্চ থেকে ডিসেম্বর এই সময়ে চার লাখ শ্রমিক ফিরে এসেছেন। এদের অনেকেই নিঃস্ব অবস্থায় জীবন যাপন করছেন। এদের জন্য সরকারের নীতি সহায়তা দেয়া জরুরি হয়ে পড়েছে। তা না হলে সামাজিক অস্থিরতা বাড়বে।’

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম সরকারি বিনিয়োগের গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, ‘দেশের প্রান্তিক অঞ্চল, বিশেষ করে দক্ষিণাঞ্চলের জন্য সরকারি বিনিয়োগ কর্মসংস্থান তৈরিতে বিরাট ভূমিকা রাখতে পারে। পরবর্তী বাজেট এই বিনিয়োগের কথা মাথায় রেখে সাজানো দরকার।’

সানেমের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান বলেন, ‘মহামারির আগে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ এবং কর্মসংস্থানের গতি শ্লথ ছিল। করোনার প্রাদুর্ভাবে এ সমস্যা আরও তীব্র হয়েছে। ফলে, অর্থনৈতিক ও সামাজিক পুনরুদ্ধারের প্রক্রিয়া নির্ভর করছে কত দ্রুত শ্রমবাজার পুনরুদ্ধার করা যায়।’

সানেমের গবেষণা পরিচালক ড. সায়মা হক বিদিশা বলেন, ‘পরিবহন, নির্মাণ, হোটেল-রেস্টুরেন্ট খাত এখনও পিছিয়ে আছে। এসব খাতের দ্রুত পুনরুদ্ধারে বেশি প্রণোদনা দিতে হবে।’