ভ্রাম্যমান বিক্রয় কেন্দ্রে সাধারণের স্বস্তি

নিজস্ব প্রতিবেদক

আমি একটি কোম্পানিতে কর্মরত। তারপরও এখানে লাইনে দাঁড়িয়েছি, সন্তানের মুখে একটু ভালো খাবার তুলে দেওয়ার জন্য। কথাগুলো বলছিলেন আবদুল হাকিম।

তিনি বলেন, মাস শেষে ৩৫ হাজার টাকা বেতন পেলেও গত এক বছরে গরুর মাংসের দোকানে যাওয়ার সাহস হয়নি। পরিবারের দুই সন্তানের মুখে তুলে দিতে পারেন না, একটু ভালো খাবার।

অবশেষে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে পহেলা এপ্রিল থেকে রাজধানীতে পরিচালিত সুলভ মূল্যে দুধ, ডিম ও মাংসের ভ্রাম্যমাণ বিক্রয় কেন্দ্র থেকে পরিবারের মুখে তুলে দিচ্ছেন একটু ভালো খাবার। তাতেই সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন তিনি।

হাকিম জানান, বেতনের অর্ধেক টাকা ব্যয় হয়ে যায় ঘর ভাড়া, বিদ্যুৎ বিল, গ্যাস বিল আর পানি বিল বাবৎ। দুই সন্তানের স্কুলের খরচ মিটিয়ে কোনো রকম চলছে তার সংসার।

এর মাঝে পরিবারের কোনো সদস্য অসুস্থ হলে পড়তে হয় বিড়ম্বনায়। মাঝে মাঝে ঋণ নিয়ে পরিবারের সাময়িক চাহিদা মেটাতে গিয়ে সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। পরের মাসে ঝামেলা পোহাতে হয় দৈনিন্দন হিসেব কষতে।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে রাজধানীতে পরিচালিত সুলভ মূল্যে দুধ, ডিম ও মাংসের ভ্রাম্যমাণ বিক্রয় কেন্দ্রগুলোতে স্বল্প আয়ের মানুষের পাশাপাশি রয়েছে এমন শত মানুষের ভিড়।

নিয়মিত বাজারের তুলনায় কিছুটা কম মূল্যে মাংস, ডিম ও ব্রয়লার পেয়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন হাকিমসহ অনেকেই।

সন্তুষ্টির পাশাপাশি অনেকের রয়েছে হতাশা। কারণ মাংস কিনতে না পেরে খালি হাতে ফিরতে হচ্ছে বাসায়।

শনিবার রাজধানীর খামার বাড়ি এলাকার বিক্রয় কেন্দ্রের সামনে মানুষের উপচে পড়া ভিড়। দুই ঘণ্টার মাঝে শেষ হয়ে যায় নির্ধারিত সকল পণ্য।

হতাশা ব্যক্ত করেন সাধারণ মানুষ। তাদের দাবি চাহিদা প্রচুর থাকলেও পণ্য পরিমাণ কম থাকে। যারফলে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করেও খালি হাতে ফিরে যেতে হয় অধিকাংশ মানুষকে।

নাখালপাড়া লোকাসমোড় থেকে হতাশা নিয়ে বাসায় ফিরছেন এনজিওর কর্মকর্তা মোহাম্মদ রাসেল। বাসা থেকে বের হওয়ার সময় ছেলে মাসুম বলে দিয়েছে আজকে যেন গোশত নিয়ে বাসায় ফেরি। আমিও বললাম ঠিক আছে কিন্তু এখন না নিয়ে ফিরতে হবে! এভাবেই ভাষা ব্যক্ত করেন রাসেল।

ক্রেতারা বলছেন, জিনিসপত্রের প্রচুর দাম। স্ত্রী-সন্তানদের মুখে ভালো কিছু তুলে দিতে পারি না। মাংসের কেজি ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যেটা কেনার ক্ষমতা আমাদের নেই। এখানে কিছুটা কম টাকায় পাচ্ছি। কেনারও সাহস করছি।

সরকারের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে তারা বলেন, সরকার যেন সবসময়ের জন্য এমন আয়োজন করেন। কোনো না কোনো প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে শুধু রমজান না সারাবছর যেন আমাদের সহযোগিতা করেন।

তবেই আমরা কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস নিতে পারি।

শুরুর দিকে রাজধানীর ১০টি স্থানে বিক্রির কার্যক্রম চালু রাখার কথা থাকলেও মানুষের চাহিদার ভিত্তিতে বাড়ানো হয়েছে। গত ৬ এপ্রিল থেকে খিলগাঁও, নাখালপাড়ার লুকাস মোড়, সেগুনবাগিচা ও উত্তরার দিয়াবাড়ি এলাকা নতুন করে যুক্ত করা হয়।

বিক্রেতা কর্মীরা বলছেন, মানুষের চাহিদা প্রচুর রয়েছে। চাহিদা অনুপাতে আমরা কর্তৃপক্ষকে জানাচ্ছি। তারাও পণ্যের পরিমাণ বাড়িয়ে দিচ্ছে, কিন্তু তাতেও ক্রেতাদের চাহিদার পরিমাণে হচ্ছে না।

তারা আরো বলেন, আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি, সুন্দর ও সুশৃঙ্খলভাবে যেন আমাদের কার্যক্রম সম্পন্ন করতে পারি।

সকালের দিকে মানুষের ভিড় উল্লেখ করে তারা বলেন, গাড়ি পৌঁছার সাথে সাথে মানুষের প্রচন্ড চাপ থাকে। গরুর মাংসের চাহিদা প্রচুর থাকায় এইচাপ পরিলক্ষিত হয়। ঘণ্টাখানেকের মধ্যে মাংস শেষ হয়ে গেলে মানুষের ভিড়ও কমতে থাকে।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়, মানুষের চাহিদার কথা বিবেচনা নিয়ে পণ্যের বিক্রয় কেন্দ্র এবং সরবরাহ বাড়িয়েছি। ঈদের পূর্বের কথা বিবেচনা নিয়ে পরিকল্পনা করা হচ্ছে। খামারিদের সাথে যোগাযোগ করে সরবরাহ আরো বাড়ানোর পরিকল্পনা থাকছে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।

উল্লেখ্য, রাজধানীতে ১ রমজান থেকে শুরু হওয়া এ কার্যক্রম চলবে ২৮ রমজান পর্যন্ত। প্রতিটি ভ্রাম্যমাণ গাড়িতে পাস্তুরিত তরল দুধ প্রতি লিটার ৬০ টাকা, গরুর মাংস প্রতি কেজি ৫৫০ টাকা, খাসির মাংস প্রতি কেজি ৮০০ টাকা, ড্রেসড ব্রয়লার প্রতি কেজি ২০০ টাকা এবং ডিম প্রতি হালি ৩০ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর এ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্প ভ্রাম্যমাণ এ কার্যক্রমে সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করছে। এছাড়াও বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মারস অ্যাসোসিয়েশন এবং বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল এ কার্যক্রমে সম্পৃক্ত রয়েছে।