চট্টগ্রামে দ্রুত বিদ্যুৎ সরবরাহ বাড়ানোর দাবি ক্যাবের

ভোক্তাকণ্ঠ ডেস্ক: পবিত্র মাহে রমজানের আগে বিদ্যুৎ, গ্যাস ও ওয়াসা কর্তৃপক্ষ বার বার নগরবাসীতে আ​শ্বস্ত করেছিলো সেবা সার্ভিসের কোনো সংকট হবে না। কিন্তু মাস পেরোনের আগেই চট্টগ্রামে ইফতার-সেহরিতেও নিস্তার নেই, তীব্র লোডশেডিং। নগরীতে দিনে ৬-৮ ঘণ্টা, গ্রামে ১০-১২ ঘণ্টার বেশি ভয়াবহ লোডশেডিং এ বিপর্যস্ত জনজীবন।

বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, জাতীয় গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ কমেছে। আর সে কারণে চট্টগ্রামে দৈনিক ৩৮০-৪২০ মেগাওয়াট ঘাটতি থাকছে সবসময়। রমজানের শুরু থেকে শুরু হয়েছে ওয়াসার পানি সংকট ও লবনাক্ততা। এখন ‘মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে এসেছে বিদ্যুতের চরম লোডশেডিং। পুরো দিনে ১২-১৪ বার লোডশেডিং হচ্ছে। অনেক সময় ঘন্টায় দুই থেকে তিন বারও লোডশেডিং, যা তীব্র গরমে জনজীবনকে চরম অতিষ্ঠ করে তুলেছে। এ অবস্থায় বিষয়টি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে চট্টগ্রামে জরুরি ভাবে জাতীয় গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন দেশের ক্রেতা-ভোক্তাদের স্বার্থ সংরক্ষণকারী সংগঠন কনজুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রামের নেতৃবৃন্দ।

সোমবার চট্টগ্রামে ভয়াবহ লোডশেডিং এ বিপর্যস্ত জনজীবনে স্বস্তি আনতে জাতীয় গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ বাড়ানোর দাবিতে গণমাধ্যমে প্রেরিত এক বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন ক্যাব কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন, ক্যাব চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাধারণ সম্পাদক কাজী ইকবাল বাহার ছাবেরী, ক্যাব মহানগরের সভাপতি জেসমিন সুলতানা পারু, সাধারণ সম্পাদক অজয় মিত্র শংকু, ক্যাব চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা সভাপতি আলহাজ্ব আবদুল মান্নান প্রমুখ।

বিবৃতিতে নেতৃবন্দ বলেন, বিদ্যুৎ বিভাগ একসময় লোডশেডিং শব্দটি বাদ দিয়ে বিদ্যুৎ লাইনে​ ত্রুটি বা বিদ্যুৎ বিভ্রাট ব্যবহার করলেও গ্রীষ্মকাল শুরুর সময়ে ভয়াবয় আকারে লোডশেডিং এর ফিরে এসেছে। যার কারণে চট্টগ্রামের বাকলিয়া ও কল্পলোক আবাসিক এলাকা, পাথরঘাটা, স্টেডিয়াম, ষোলশহর, কালুরঘাট, বাকলিয়া, মাদারবাড়ি, আগ্রাবাদ, হালিশহর, পাহাড়তলী, খুলশী, রামপুর, নিউমুরিং বিদ্যুৎ বিতরন কেন্দ্রগুলো ঘন্টার পর ঘন্টা লোডশেডিং করছে। নগরীর বাইরে ফৌজদারহাট, হাটহাজারী, মোহরা, বাড়ব​কুন্ড, সন্দ্বীপ, পটিয়া, সাতকানিয়া, দোহাজারী, বাশখালীতে ঘণ্টার পর ঘন্টা লোডশেডিং করা হচ্ছে। একই ভাবে রাঙ্গামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি ও কক্সবাজার বিতরণ বিভাগ এবং পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের এলাকাগুলোতেও ঘন্টার পর ঘন্টা লোডশেডিংয়ের কারনে গ্রামাঞ্চলের মানুষের জনজীবন চরমভাবে বিপর্যস্ত। দিন-রাত মিলিয়ে কোথাও কোথাও ছয় থেকে আট ঘণ্টা, কোথাও ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ থাকছে না।

নেতৃবৃন্দ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, একসময় বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে বলা হয়েছিলো বিদ্যুৎ উৎপাদন উদ্বৃৃত্ত আছে। যার কারনে ভাড়া ভিত্তিক ও কুইকরেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্টগুলোকে বসিয়ে রেখে ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে বাধ্য হয়েছিলো। যার ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদনে সরকারের  ভর্তুকির বোঝা ও খরচের পাল্লা দিন দিন বেড়েগেছে। যার পুরো দায়ভারই জনগনকে বহন করতে হচ্ছে। সরকার প্রতিনিয়তই ভর্তুকি সমন্বয়ের জন্য বিদ্যুতের দাম বাড়ালেও জনগনের নিরবিছিন্ন বিদ্যুৎ প্রাপ্তির বিষয়টি সুদর পরাহত হচ্ছে। চট্টগ্রামে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)র তথ্য অনুযায়ী  চট্টগ্রামে বিদ্যুতের চাহিদা প্রায় এক হাজার ২৮০ মেগাওয়াট। এর বিপরীতে জাতীয় গ্রিড থেকে পাওয়া যাচ্ছে ৯০০ মেগাওয়াট। ফলে প্রতিনিয়তই চট্টগ্রামে লোডশেডিং হচ্ছে ৩৮০-৪২০ মেগাওয়াট পর্যন্ত।

নেতৃবৃন্দ আরও বলেন বিদ্যুতের লোডশেডিং ও বিদ্যুৎ বিভ্রাট নিয়ে সরকারি তথ্য গোজামিলে ভরপুর, প্রকৃত চিত্র আরও ভয়াবহ এবং অনেক বেশি লোডশেডিং হচ্ছে। যেখানে মানুষ নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎসেবা পাওয়া যাচ্ছে না, সেখানে বারবার বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে মানুষের জীবনজীবিকার খরচ বাড়িয়ে জনজীবনকে অতিষ্ঠ করে তুলেছে। বেসরকারী ভাড়াভিত্তিক ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নামে ক্যাপাসিটি চার্জ দিয়ে উৎপাদন সক্ষমতার অধিক মূল্য দিতে বাধ্য হতে হচ্ছে। যা কোনো ভাবেই কাম্য নয়।