কমে আসছে ব্যাংকের উদ্বৃত্ত তারল্য

ভোক্তাকণ্ঠ ডেস্ক: ডলার বিক্রির কারণে একদিকে বাজার থেকে টাকা উঠে আসছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে। একই সময়ে পণ্যের দর বৃদ্ধির প্রভাবে বেসরকারি খাতে ঋণ বাড়ছে। তবে মূল্যস্ফীতি ব্যাপক বেড়ে যাওয়াসহ বিভিন্ন কারণে আমানত তেমন বাড়ছে না। এতে করে কমে আসছে ব্যাংক খাতের উদ্বৃত্ত তারল্য। গত আগস্ট শেষে ব্যাংক খাতে উদ্বৃত্ত তারল্য ১ লাখ ৭৪ হাজার ১৭৭ কোটি টাকায় নেমেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জুন শেষে ব্যাংক খাতে উদ্বৃত্ত তারল্য ছিল ২ লাখ ৩ হাজার ৪২৪ কোটি টাকা। গত জুলাইয়ে ১ লাখ ৮৮ হাজার ৭২৫ কোটি টাকায় নামে। আগস্টে কমেছে আরও ১৪ হাজার কোটি টাকা। গত বছরের আগস্ট শেষে ব্যাংক খাতে উদ্বৃত্ত তারল্য ছিল ২ লাখ ৩১ হাজার কোটি টাকার বেশি।

সংশ্নিষ্টরা জানান, বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় প্রতিনিয়ত ডলার বিক্রি করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। চলতি অর্থবছরে এ পর্যন্ত বিভিন্ন ব্যাংকের কাছে ৩৭৫ কোটি ডলারের বেশি বিক্রি করা হয়েছে। বিক্রির বিপরীতে বাজার থেকে ৩৬ হাজার কোটি টাকার বেশি উঠে এসেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে। গত অর্থবছর ৭৬২ কোটি ডলার বিক্রির বিপরীতে বাজার থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে ঢোকে প্রায় ৭০ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে আবার গত আগস্টে বেসরকারি খাতের ঋণপ্রবৃদ্ধি বেড়ে ১৪ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ হয়েছে, যা ৪৫ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। গত জুলাই শেষে প্রবৃদ্ধি ছিল ১৩ দশমিক ৯৫ শতাংশ। সাধারণভাবে বিনিয়োগ বৃদ্ধির প্রভাবে বেসরকারি খাতে ঋণ বাড়ে। তবে এখন বাড়ছে মূলত আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দর বৃদ্ধির কারণে।

ব্যাংকাররা জানান, আয়ের তুলনায় ব্যয় বাড়লে মানুষের মধ্যে সঞ্চয় প্রবণতা কমে। সাম্প্রতিক সময়ে মূল্যস্ফীতি ব্যাপক বাড়ছে। গত আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের ওপরে উঠেছে বলে জানা গেছে। প্রায় এক যুগের মধ্যে যা সর্বোচ্চ। মূল্যস্ফীতির চাপে আশানুরূপ হারে আমানত বাড়ছে না। গত জুন পর্যন্ত এক বছরে আমানত মাত্র ৯ দশমিক ৩৬ শতাংশ বেড়ে ১৬ লাখ ২৪ হাজার ৪৭১ কোটি টাকা হয়েছে। এ সময়ে ঋণ ১৪ দশমিক ৩৬ শতাংশ বেড়ে ১৩ লাখ ২০ হাজার ৭৮০ কোটি টাকা হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনার আলোকে ব্যক্তি পর্যায়ের মেয়াদি আমানতে ব্যাংকগুলোকে তিন মাস আগের গড় মূল্যস্ফীতির চেয়ে বেশি সুদ দিতে হয়। যদিও কোনো ব্যাংক ঋণে ৯ শতাংশের বেশি সুদ নিতে পারে না। তহবিল সংকট থাকায় কিছু ব্যাংক এখন দৈনন্দিন চাহিদার একটা অংশ মেটাচ্ছে আন্তঃব্যাংক ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ধার করে। এ ক্ষেত্রেও সুদহার বেড়েছে। গত বৃহস্পতিবার শুধু কলমানি থেকে ব্যাংকগুলো ৭ হাজার ৮৫৬ কোটি টাকা ধার করে। একই দিনে রেপোর বিপরীতে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকেও বড় অঙ্কের ধার নিয়েছে। আমানত সংগ্রহে সুদহার বৃদ্ধির কারণে ঋণে ৯ শতাংশ সুদহারের সীমা পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়ে আসছে ব্যাংকগুলো। যদিও কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাতে সায় দিচ্ছে না।

প্রসঙ্গত, ব্যাংকগুলোর উদ্বৃত্ত তারল্যের পুরোটাই অলস নয়। বরং এর বড় অংশই সরকারি বিল-বন্ডে বিনিয়োগ রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী, প্রতিটি ব্যাংকের মোট আমানতের ৪ শতাংশ সিআরআর হিসেবে নগদে রাখতে হয়। আর এসএলআর বা বিধিবদ্ধ তারল্য হিসেবে প্রচলিত ধারার ব্যাংকগুলোকে ১৩ শতাংশ এবং ইসলামী ব্যাংকগুলোকে সাড়ে ৫ শতাংশ রাখতে হয়। সিআরআর ও এসএলআর সংরক্ষণের পর অতিরিক্ত অংশকে উদ্বৃত্ত তারল্য বলা হয়।