গ্রাহকদের ২০০ কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা সুলতান কো-অপারেটিভ

নরসিংদীজেলা প্রতিনিধি,

নরসিংদীতে গ্রাহকদের ২০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে লাপাত্তার অভিযোগ উঠেছে শাহ সুলতান মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। ইসলামী শরিয়াহ মোতাবেক মুনাফার প্রলোভন দেখিয়ে হাজার হাজার গ্রাহকের কাছ থেকে আমানত সংগ্রহ করেছিল প্রতিষ্ঠানটি।

সমবায় অধিদপ্তরের নিবন্ধন নেয়া এ প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করে প্রতারণার শিকার হয়ে পথে বসেছেন জেলার চার উপজেলার হাজারো গ্রাহক। গ্রাহকদের অভিযোগ পেয়ে বিষয়টি তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের কথা জানিয়েছে জেলা সমবায় কার্যালয়।

ভুক্তভোগী গ্রাহকদের অভিযোগ, ২০১০ সালে নরসিংদী সদর উপজেলার চিনিশপুর ইউনিয়নের ঘোড়াদিয়া এলাকার একটি মার্কেটের ২য় তলায় প্রধান কার্যালয় গড়ে তোলে শাহ সুলতান মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড। সমবায় অধিদপ্তর কর্তৃক অনুমোদিত ও নিয়ন্ত্রিত দাবি করে প্রতিষ্ঠানটি ইসলামী শরিয়াহ মোতাবেক ব্যবসায়িক প্রকল্পের মাধ্যমে আকর্ষণীয় মুনাফার প্রলোভন দেখিয়ে প্রচারণা চালিয়ে গ্রাহকদের কাছ থেকে আমানত সংগ্রহ শুরু করে।

বেশ কিছুদিন চুক্তি ও শর্ত অনুযায়ী গ্রাহকদের মুনাফাও দিতে থাকে প্রতিষ্ঠানটি। এক পর্যায়ে শাহ সুলতান টেক্সটাইল মিল, শাহ সুলতান প্রোপার্টিজ, মার্কেটসহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা ও লাভজনক প্রলোভন দেখানোর কারণে বাড়তে থাকে গ্রাহক সংখ্যা।

পর্যায়ক্রমে জেলার পলাশ, শিবপুর ও মনোহরদী উপজেলায়ও গড়ে তোলা হয় শাহ সুলতান মাল্টিপারপাস কো অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডের শাখা অফিস। এসব অফিসে কর্মী হিসেবে কাজ শুরু করেন ইসলামী শিক্ষায় শিক্ষিত ও এলাকায় বিশ্বাসী হিসেবে পরিচিত লোকজন। এসব কর্মী গ্রাহকদের প্রলোভনে ফেলে সংগ্রহ করেন কোটি কোটি টাকা আমানত।

প্রতিমাসে ব্যবসায়িক মুনাফা পাওয়ায় অনেকে প্রবাসে আয় করা টাকা, জমি বিক্রির টাকা এমনকী অন্যান্য ব্যাংকে রাখা টাকাও উত্তোলন করে বিনিয়োগ করেন শাহ সুলতান নামের এই সমিতিতে।

জেলাজুড়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার পর জানুয়ারি মাস থেকে লাপাত্তা প্রতিষ্ঠানটি। এতে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন হাজারো গ্রাহক। করোনা পরিস্থিতির কারণে সাময়িকভাবে অফিস বন্ধ থাকার ঘোষণার নোটিশ টানিয়ে উধাও হয়ে গেছেন সমিতির পরিচালনা পরিষদে থাকা লোকজন।

একই সঙ্গে এই সমিতির কর্মী হিসেবে মাঠ পর্যায়ে কাজ করা লোকজনও লাপাত্তা। উপায় না পেয়ে আমানতের টাকা ফিরে পেতে জেলা প্রশাসকসহ স্থানীয় সমবায় দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেছেন গ্রাহকরা।

শিবপুর উপজেলার কলেজ শিক্ষক হাবিবুর রহমান বলেন, ২০১০ সালে সমিতির কার্যক্রম শুরুর পর ভালোই চলছিল। গ্রাহকদের পাওনা মুনাফা সময়মতো পরিশোধ করা হতো। তারা জমিজমাসহ বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করে, তবে এসব সমিতির নামে না করে কিছু ব্যক্তি নামে করে নিয়েছে। আমার আত্মীয়-স্বজনসহ জানামতে শিবপুর উপজেলার বিভিন্ন গ্রাহক থেকে প্রায় ১০ কোটি টাকা নিয়েছে।

সমিতির সদস্য পলাশ উপজেলার শিল্পাঞ্চল কলেজের শিক্ষক হাবিবুর রহমান বলেন, আমার নিজের ও স্ত্রীর নামে ১২ লাখ টাকা জমা রেখেছিলাম এই সমিতিতে। বর্তমানে সমিতির কাউকেই খুঁজে পাচ্ছি না, কার্যালয়ও তালাবদ্ধ।

যোগাযোগ করা হলে নরসিংদী জেলা সমবায় কর্মকর্তা মো. সালমান ইকবাল বলেন, বিধি অনুযায়ী এসব সমিতি বড় লেনদেন করতে পারে না। নিয়মিত অডিটের সময় এ সমিতি কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে এমন কোনো অনিয়ম বা অভিযোগ পাওয়া যায়নি। এখন তারা নাকী কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে এমন অভিযোগ আসছে। আমাদের বিভিন্ন উপজেলা দপ্তরে সমিতির সদস্য বা গ্রাহকদের দেয়া অভিযোগগুলো জেলা কার্যালয়ে আসার পর তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে সমিতির নিবন্ধন বাতিল করাসহ সমিতির সম্পদ বিক্রী করে সদস্যদের মধ্যে বিতরণ করা হবে।