ট্রাকসেলে সিরিয়াল, ২৫০ পার হলেই ফিরতে হচ্ছে খালি হাতে

ভোক্তাকন্ঠ ডেস্ক:

টিসিবির ট্রাকসেলে ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড়ের কারণে ব্যবহার করা হচ্ছে অমোচনীয় কালি (মার্কার)। পণ্য কিনতে সারিতে দাঁড়ানো ক্রেতাদের হাতে সেই কালি দিয়ে সিরিয়াল নম্বর দেওয়া হচ্ছে। এরপর সে অনুযায়ী পণ্য দিচ্ছেন ডিলাররা। যার সিরিয়াল নম্বর কম, তিনি আগে পণ্য পাবেন।

তবে সাশ্রয়ীমূল্যের এ পণ্য পেতে প্রতিটি ট্রাকসেল পয়েন্টে সারিতে দাঁড়ানোদের অবশ্যই সিরিয়াল নম্বর ২৫০-এর মধ্যে থাকতে হবে। টিসিবির বরাদ্দ অনুযায়ী একটি ট্রাক থেকে আড়াইশ ক্রেতাকে পণ্য দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। যদিও অধিকাংশ ডিলার ২০০ জনের হাতে মার্কার দিয়ে সিরিয়াল নম্বর দিচ্ছেন। বাকি ৫০ জনের পণ্য সংরক্ষিত রাখা হচ্ছে। প্রতিবন্ধী বা বয়স্করা এলে তাদেরকে সংরক্ষিত ৫০ জনের পণ্য থেকে দেওয়া হচ্ছে।

রোববার (২৭ মার্চ) রাজধানীর বেশকিছু টিসিবির ট্রাকসেল ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

জানা গেছে, নিত্যপণ্যের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় টিসিবির পণ্য কিনতে স্বল্পআয়ের মানুষের সারি দীর্ঘ হয়েছে বেশ আগেই। প্রতিদিন চাহিদার চেয়ে কয়েকগুণ বেশি মানুষ ভিড় করছেন পণ্য কিনতে। তবে বরাদ্দ স্বল্পতায় পণ্য না পেয়ে অনেককে ফিরে যেতে হচ্ছে। এমন উৎকণ্ঠায় দীর্ঘসারিতে দাঁড়িয়ে বিশৃঙ্খলায় জড়িয়ে পড়ছেন তারা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অমোচনীয় কালিতে সিরিয়াল নম্বর দেওয়ার পথে হাঁটতে হয়েছে টিসিবির ডিলারদের।

সরেজমিনে দেখা গেছে, রোববার সেগুনবাগিচা এলাকায় টিসিবির ট্রাক আসে ঠিক ১১টায়। সেখানে আগে থেকেই প্রায় দেড় শতাধিক মানুষ উপস্থিত ছিলেন। এরপর শুরু হয় হাতে সিরিয়াল নম্বর দেওয়ার কাজ। বিশৃঙ্খলা হলেও পরে স্থানীয়দের সহযোগিতায় পণ্য বিক্রির কার্যক্রম চলে। কিন্তু আধাঘণ্টার মধ্যে মানুষের ভিড় আরও বেড়ে যায়। ২০০ জনকে নম্বর দেওয়ার পর বিক্রি বন্ধ করে দেওয়া হয়।গাড়ি আসার কিছুক্ষণ পরই সেখানে আসেন বৃদ্ধা হালিমা বেগম। তিনি সিরিয়াল নম্বর পাননি। হালিমা বেগম জাগো নিউজকে বলেন, ‘সকালে দুই বাসায় কাজ করি। এখন এসে দেখি সিরিয়াল নেই। কইছে দাঁড়াতে, সিরিয়াল শেষে মাল (পণ্য) থাকলে দেবে।’

সিরিয়াল না পাওয়া এমন কয়েকজন বলেন, তারা এর আগেও দাঁড়িয়ে পণ্য না পেয়ে ফিরে গেছেন। ট্রাক আসার কিছুক্ষণের মধ্যে সিরিয়াল শেষ হয়ে যায়। বেশিভাগ সময় পণ্য মেলে না। স্থানীয় যারা টিসিবির ডিলার ও বিক্রেতাকে সহায়তা করেন, তারা নিজেদের পরিচিতদের আগে নম্বর দেন।

ডিলার জাহানারা ট্রেডার্সের বিক্রয়কর্মী ইউসুফ হোসেন বলেন, আমরা যেভাবে পণ্য বরাদ্দ পাই, সেটা আড়াইশ মানুষকে দেওয়া যায়। কিন্তু ২০০ জনকে সিরিয়াল দেওয়া হয়। কিছু হাতে রাখা হয়। কারণ অনেক সময় অনেক বয়স্ক এবং প্রতিবন্ধীরা আসেন। তারা লাইনে দাঁড়াতে পারেন না। তাদেরকে এরমধ্য থেকে পণ্য দেওয়া হয়।’

তিনি জানান, বর্তমানে একজন ডিলারকে এক টন পেঁয়াজ, সাড়ে ৭০০ কেজি ছোলা, ৫০০ লিটার তেল, ৫০০ কেজি করে চিনি ও ডাল এবং ২৫০ কেজি খেজুর বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। একজন ক্রেতার কাছে সবোর্চ্চ পাঁচ কেজি পেঁয়াজ, তিন কেজি ছোলা, দুই লিটার তেল, দুই কেজি করে চিনি ও ডাল এবং এক কেজি খেজুর বিক্রির নির্দেশনা আছে।

বর্তমানে টিসিবির প্রতি কেজি পেঁয়াজ ২০ টাকা, ছোলা ৫০ টাকা, প্রতিলিটার সয়াবিন তেল ১১০ টাকা, প্রতি কেজি চিনি ৫৫ টাকা এবং খেজুর ৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে আজ রোববার থেকে ভোক্তাপর্যায়ে পেঁয়াজের দাম সমন্বয় করেছে টিসিবি। আগে ৩০ টাকা দরে টিসিবির পেঁয়াজ বিক্রি হতো। এখন বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকা দরে।