পেট্রোল পাম্পে অনিয়ম, জরিমানার চেয়ে লাভ বেশি!

ভোক্তাকন্ঠ ডেস্ক:

জ্বালানি তেলে মিলছে ভেজাল, মাপে কম দেওয়াসহ নানা অভিযোগ রয়েছে পেট্রোল পাম্পগুলোর বিরুদ্ধে। এ থেকে বাদ যাচ্ছেনা সরকারি পাম্পগুলোও এমন দুর্নীতি ও অনিয়মের কথা জানিয়েছে জ্বালানি বিভাগ। গত আগস্ট ও অক্টোবরে পেট্রোল পাম্পে অভিযান ও জরিমানার যে পরিসংখ্যান জ্বালানি বিভাগে পাঠানো হয়েছে, তা রীতিমতো অবাক হওয়ার মতো।

জ্বালানি বিভাগের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, দেশের পেট্রোল পাম্পগুলোতে ভেজাল এবং পরিমাপে কম দেওয়ার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। মাঝে মধ্যে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করলেও নিয়মিত তদারকির অভাব রয়েছে। পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) যে নজরদারি করার কথা তারা তা করে না। এতে গ্রাহক প্রতারিত হন।

দেশে সরকারি পেট্রোল পাম্প হাতে গোনা। তারাই আবার ব্যক্তিমালিকানাধীন পাম্পের কাছে তেল বিক্রি করে। তবে সরকারি কোম্পানি যে বেসরকারি কোম্পানির কাছে তেল বিক্রি করে, সেই পাম্পের তদারকির দায়িত্ব সরকারি কোম্পানির ওপরই বর্তায়।

অক্টোবরে দেশের পাম্পগুলোতে মোট অভিযান হয়েছে ৪০টি। ৩২টিতেই জরিমানা করা হয়েছে। আগস্টে ৪১টি মোবাইল কোর্টের মধ্যে ২২টিতে জরিমানা করা হয়েছিল। অর্থাৎ অভিযান-জরিমানার পর দুর্নীতি আরও বেড়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কেউ মাপে কম দিচ্ছেন, কেউ মেশাচ্ছেন ভেজাল। মোবাইল কোর্ট জরিমানা করলেও তাতে গ্রাহকের উপকার হচ্ছে না। ভেজাল বা ওজনে কম দিয়ে পাম্প মালিক যে পরিমাণ লাভ করছে সে তুলনায় জরিমানার পরিমাণ সামান্য বলেই এমনটা হচ্ছে।

সূত্র বলছে, পেট্রোল পাম্পগুলোর বড় চুরি ওজনে কম দেওয়া। ডিজিটাল মেশিনে গ্রাহক এটা ধরতেও পারেন না। অনেক পাম্প মালিক আবার গ্যাসক্ষেত্র থেকে কম দামে কনডেনসেট কিনে তেলের মধ্যে মিশিয়ে বিক্রি করছে। এতে দুই ধরনের ক্ষতি হচ্ছে গ্রাহকের। প্রথমত, তিনি তেল পাচ্ছেন কম। দ্বিতীয়ত, ভেজালের কারণে ইঞ্জিনের ক্ষতি হচ্ছে।

তেলের পরিমাপ ঠিক রাখার জন্য ক্যালিব্রেশন করা হয়। এটি এমন এক পদ্ধতি যার মাধ্যমে শুরুতে আদর্শমান যাচাই করে নেওয়া হয়। কিন্তু অনেক পাম্পে ক্যালিব্রেশনেও সমস্যা রয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ শামসুল আলম বলেন, এ ধরনের অভিযানে কমার চেয়ে চুরি বাড়বে বলে আশঙ্কা করছি। কারণ, গ্যাসের লাইন কেটে দেওয়ার পরও দেখা যায় অবৈধ লাইন আবার স্থাপন হয়ে যায়। তেলের ভেজাল রোধে অভিযান পরিচালনাকারীরাও দেখা যাবে দুর্নীতিতে জড়িয়ে যাচ্ছে। এজন্য এক্ষেত্রে জনগণকে সম্পৃক্ত করতে হবে। সরকারের নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থাই পাম্পে তেল সরবরাহ করছে। পাম্পে আসার আগেই যে ভেজাল মেশানো হচ্ছে না সেটার নিশ্চয়তা কে দেবে? স্বচ্ছতা নিশ্চিত করে পুরো সিস্টেম বদলাতে হবে। তাতে ভোক্তারা হয়তো উপকৃত হবেন।