ভারতে আটকে থাকা ১৫ নাবিককে ফেরাতে নৌপরিবহণ অধিদফতরের চিঠি

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

ভারতের কলকাতার শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জি বন্দরে (কলকাতা পোর্ট) দুর্ঘটনার কবলে পড়া ‘এমভি মেরিন ট্রাস্ট-০১’ নামের বাংলাদেশি জাহাজের ১৫ নাবিক দেশে ফেরাতে চিঠি দিয়েছে নৌপরিবহন অধিদফতর। এছাড়াও আটকে থাকা নাবিকরা আকুতি জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিও বার্তা দিয়েছেন। ভাইরাল হওয়া ওই ভিডিও বার্তায় এক মাসেরও বেশি সময়ের বন্দিদশা থেকে নাবিকেরা মুক্তি চেয়েছেন।

একইসঙ্গে তাদের অভিযোগ, জাহাজটির বাংলাদেশি মালিকপক্ষের উদাসীনতায় তারা এখনো দেশে ফিরতে পারেনি। তাদের দ্রুত উদ্ধারের জন্য সরকারের কাছে আবেদন জানানো হয়েছে ভিডিও বার্তায়।

আটকেপড়া ১৫ বাংলাদেশি নাবিকের দ্রুত প্রত্যাবাসনে সহযোগিতা চেয়ে ভারতের নৌপরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর বৃহস্পতিবার (২৮ এপ্রিল) চিঠি দিয়েছেন বাংলাদেশের নৌপরিবহন অধিদপ্তর।

চিঠিতে বলা হয়েছে, দুর্ঘটনার কারণ খতিয়ে দেখতে বাংলদেশের পক্ষ থেকে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে এবং তারা দ্রুতই কলকাতায় দুর্ঘটনাস্থল এবং পরিত্যক্ত ঘোষিত জাহাজটি পরিদর্শন করবেন।

জাহাজটির মালিক প্রতিষ্ঠান মেরিন ট্রাস্ট লিমিটেড জানিয়েছে, আটকেপড়া নাবিকদের দেশে ফেরাতে আরও প্রায় সপ্তাহখানেক সময় লাগবে। আইনি প্রক্রিয়া শেষ হলেই তাদের ফিরিয়ে আনা হবে। দুর্ঘটনা কবলিত জাহাজটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে।

জাহাজটির প্রধান প্রকৌশলী ফাহিম ফয়সাল ভিডিও বার্তায় বলেন, গত ২০ মার্চ ১৫ জন নাবিক চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ‘এমভি মেরিন ট্রাস্ট-০১’ জাহাজ নিয়ে কলকাতায় যান। সেখানে তারা ২৩ মার্চ পৌঁছান। ২৪ মার্চ সকাল ৯টায় বন্দরের ৫ নম্বর লটে পণ্যবাহী কন্টেইনার তোলা শেষে একপাশে কাত হয়ে উল্টে যায় জাহাজটি। এসময় নাবিকেরা দ্রুত জাহাজ থেকে নেমে পড়েন। কলকাতা বন্দর কর্তৃপক্ষ তাদের নিয়ে মেরিন ক্লাব হোটেল (সি-ম্যান হোস্টেল) রাখে। সেখানে দীর্ঘ এক মাস ধরে তারা অবরুদ্ধ অবস্থায়। তাদের পাসপোর্ট নিয়ে নেওয়া হয়েছে।

কাত হয়ে যাওয়া বাংলাদেশি এ জাহাজটিতে ২০ ফুটের ১২০টি ও ৪০ ফুটের ৪৫টি কনটেইনার ছিল। লোড কন্টেইনারগুলোর ওজন ছিল ৩ হাজার ৮৯ মেট্রিকটন। ২৫ মার্চ কলকাতা থেকে জাহাজটি বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বন্দরে আসার কথা ছিল।

এদিকে দুর্ঘটনার পরপরই জাহাজের ১৫ নাবিককে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়। তবে আটকেপড়া নাবিকদের অভিযোগ, তাদের সরিয়ে নেওয়া হলেও প্রায় একমাস ধরে তাদের দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে যথাযথ উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। তারা কলকাতা বন্দর কর্তৃপক্ষের হেফাজতে কলকাতা মেরিন ক্লাব হোটেলে অবস্থান করছেন।

ওই ১৫ নাবিক মিলে ২৮ এপ্রিল বিকেলে সাড়ে তিন মিনিটের একটি ভিডিও বার্তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আপলোড দেয়। ভিডিও বার্তায় তারা দেশে ফেরার আকুতি জানান। পরিবারের সঙ্গে ঈদ করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন।

ফাহিম ফয়সাল বলেন, এক মাস ধরে সি-ম্যান হোস্টেলে ১৫ নাবিক আটকে থাকলেও তাদের ফেরাতে কেউ উদ্যোগ নিচ্ছেন না। জাহাজের মালিকপক্ষ তাদের দেশে ফিরিয়ে নেওয়ার আশ্বাস দিলেও কদিন ধরে তারাও যোগাযোগ করছেন না। তাই আটকেপড়া ১৫ নাবিককে ফেরাতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়েছে ভিডিও বার্তায়।

এ বিষয়ে নৌ-বাণিজ্য দপ্তরের প্রিন্সিপাল অফিসার ক্যাপ্টেন গিয়াসউদ্দিন আহমেদ বলেন, কলকাতা বন্দরে আটকেপড়া ১৫ বাংলাদেশি নাবিককে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে নৌ-পরিবহন অধিদপ্তর কাজ করছে। এরইমধ্যে ‘এমভি মেরিন ট্রাস্ট-০১’ নামের জাহাজটিকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। আমরা জাহাজের মালিকপক্ষকে নাবিকদের ফিরিয়ে আনার বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে বলেছি।

বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন বিএমএমওএ সাধারণ সম্পাদক মেরিন ইঞ্জিনিয়ার মো. সাখাওয়াত হোসাইন শুক্রবার সন্ধ্যায় জাগো নিউজকে বলেন, কলকাতা বন্দরে ১৫ বাংলাদেশি নাবিক আটকে থাকার বিষয়টি আমরা জানি। জাহাজ দুর্ঘটনায় পড়লে আন্তর্জাতিক রুলস রয়েছে। সে অনুযায়ী নাবিককের ফিরিয়ে আনার বিষয়ে আমরা সহযোগিতা দেবো। আমরা বিষয়টি এখনো কোন পর্যায়ে আছে সেটি জানার চেষ্টা করছি।

জাহাজের মালিক প্রতিষ্ঠান মেরিন ট্রাস্ট লিমিটেডের ক্যাপ্টেন সাহিকুল ইসলাম বলেন, জাহাজটি ২৪ মার্চ দুর্ঘটনায় পড়ে। আমরা গত ২২ এপ্রিল এটিকে পরিত্যক্ত ঘোষণা করি। কলকাতা বন্দর কর্তৃপক্ষ ও বীমা প্রতিষ্ঠানকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। জাহাজ দুর্ঘটনার পর আমরা নাবিকদের উদ্ধার করে আমাদের খরচে হোটেলে রেখেছি। কোনো জাহাজ দুর্ঘটনায় পড়লে সংশ্লিষ্ট বন্দরেরও কিছু দায়বদ্ধতা, নিয়মকানুন রয়েছে। আমরাও এরইমধ্যে বাংলাদেশের ডিজি শিপিংকে বিষয়টি জানিয়েছি। বাংলাদেশের ডিজি শিপিং থেকে সে দেশের ডিজি শিপিংকে চিঠি দিয়ে নাবিকদের দেশে পাঠানোর বিষয়ে অনুরোধ জানানো হয়েছে।