সয়াবিন তেলের আমদানি না কমলেও কমেছে সরবরাহ

ভোক্তাকন্ঠ ডেস্ক:

সয়াবিন তেলের দাম বেড়েই চলেছে । বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং আসন্ন রমজান; এসব কারণ দেখিয়েই অতিমুনাফার লোভে পণ্যটির দাম বাড়িয়ে চলেছেন ব্যবসায়ীরা। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ার অজুহাতে রিফাইনারি কোম্পানিগুলো হঠাৎ করে সয়াবিন তেলের সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে বাজারে। যার প্রভাব পড়ছে খুচরা বাজারে। যদিও গত সাত মাস ধরে বেড়েছে সয়াবিন আমদানির জন্য এলসি খোলা ও নিষ্পত্তির হার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, গত বছরের জুলাইতে সয়াবিন আমদানির জন্য এলসি খোলা হয়েছিল ১২ কোটি ২৯ লাখ ডলারের। এ বছরের জানুয়ারিতে খোলা হয়েছে প্রায় ২১ কোটি ডলারের।

জুলাই থেকে ডিসেম্বর— এই ছয় মাসে এলসি খোলা হয়েছিল ৯০ কোটি ডলারের। জানুয়ারিতে এর পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১১১ কোটি ৯৩ লাখ ডলারে। গত বছরের একই সময়ে এলসি খোলা হয়েছিল ৭৩ কোটি ২৮ লাখ ডলারের। অর্থাৎ, ভোজ্যতেল আমদানির এলসি খোলার হার ৫২ দশমিক ৭৪ শতাংশ এবং নিষ্পত্তির হার ২৫ দশমিক ৯৫ শতাংশ বেড়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, জুলাই থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত পরিশোধিত তেল আমদানির এলসি খোলার হার ৯৫ দশমিক ০৭ শতাংশ এবং নিস্পত্তির হার বেড়েছে ৫৬ দশমিক ৫৯ শতাংশ। তবে অপরিশোধিত তেলের এলসি খোলা ও আমদানি দুটোই কমেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, জানুয়ারি পর্যন্ত পরিশোধিত তেল আমদানির জন্য এলসি খোলা হয়েছে ৮৮ কোটি ডলার এবং অপরিশোধিত সয়াবিন আমদানির জন্য ২৩ কোটি ডলার। এছাড়া এই সময়ে পরিশোধিত তেল আমদানিতে এলসি নিষ্পত্তি হয়েছে ৬৮ কোটি ডলারের। অপরিশোধিত তেল আমদানিতে এলসি নিষ্পত্তি হয়েছে ১৮ কোটি ডলারের।

গত এক সপ্তাহে প্রতি লিটার সয়াবিনের দাম গড়ে ২০ থেকে ২৫ টাকা বেড়েছে। ১৭৫ থেকে ১৮০ টাকার সয়াবিন তেলে বেড়ে ১৯০ থেকে ২০৫ টাকায় উঠেছে। অনেক দোকানে তেল পাওয়া যাচ্ছে না। ঢাকার খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, কয়েকদিন ধরে সয়াবিন তেলের পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে ও পুরান ঢাকার মৌলভীবাজারে ঊর্ধ্বমুখী। অথচ এসব বাজারে সরবরাহে কমতি নেই।

খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, আন্তর্জাতিক বাজার থেকে তারা প্রতি টন ১ হাজার ৭৩০ ডলারে কিনছেন। এক্ষেত্রে ঢাকা ও চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের মধ্যে আন্তর্জাতিক বাজার থেকে কেনার মূল্যের পার্থক্য ২৪৮ ডলার।

এর আগে গত বুধবার বৈঠক শেষে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি সাংবাদিকদের বলেছেন, তার মন্ত্রণালয়ে তথ্য আছে যে, মধ্যস্বত্বভোগীরা ভোজ্যতেলের মজুত গড়েছেন। তিনি এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দেন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, ভোক্তা অধিকারসহ সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থাগুলোর সমন্বয়ে যৌথ অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে বাজার তদারকিও বাড়ানো হয়েছে। ইতোমধ্যে সরকারি একাধিক সংস্থা তদারকিতে নেমেছে। ঢাকার বাইরে বিভিন্ন স্থানে বেশি দামে তেল বিক্রির কারণে ব্যবসায়ীদের জরিমানাও করা হয়েছে।

এদিকে ব্যবসায়ীদের এলসি খোলার জন্য তাগাদাও দেওয়া হচ্ছে। এজন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ডলারের জোগান বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

রিফাইনারি কোম্পানিগুলোর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে গত ফেব্রুয়ারিতে প্রতি লিটারে খোলা সয়াবিনের দাম ৭ টাকা এবং বোতলজাত তেলের দাম লিটারপ্রতি ৮ টাকা বাড়ানো হয়। একই দাবিতে ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে প্রতি লিটারে আরও ১২ টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব করে রিফাইনারিগুলো। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক বৈঠকে ওই প্রস্তাব নাকচ করে দেয়। যদিও বাজারে সেটার প্রভাব পড়তে দেখা যায়নি।

৫ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম রাখা হচ্ছে ৮৩০ টাকা করে। গত সপ্তাহে যা ছিল ৭৯০ টাকা। খোলা পাম তেলেরও দাম রাখা হচ্ছে ১৫৮ টাকা প্রতি লিটার। গত সপ্তাহে যা ছিল ১৪০ টাকা।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান জানিয়েছেন, দেশের সব ভোজ্যতেল রিফাইনারি কোম্পানির কাছে আমদানির তথ্য চেয়েছে সরকার। পরিশোধনকারী কোম্পানিগুলো গত তিন মাসে কী পরিমাণ তেল আমদানি করেছে, কত পরিমাণ তেল পরিশোধন করা হয়েছে, কী পরিমাণ মজুত আছে— কাস্টমস পেপারসহ এ সংক্রান্ত তথ্য চেয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।