১৩ শতাংশ মানুষ বন্ধু থেকে ধার নেন নগরবাসী !!

ভোক্তাকন্ঠ ডেস্ক:

ঋণ করার ক্ষেত্রে নগরবাসীর পছন্দের তালিকার দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে বন্ধুদের অবস্থান। প্রথমে রয়েছে বেসরকারি সংস্থা বা এনজিও। এছাড়া সিটি করপোরেশনের অর্ধেক বাসিন্দা এনজিওগুলোতে সঞ্চয় করেন। টাকা সঞ্চয় ও ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যাংকের চেয়ে বেশি আস্থা এনজিওতে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ‘নগর আর্থ-সামাজিক অবস্থা নিরূপণ’ শীর্ষক এক জরিপে এ তথ্য উঠে আসে।

জরিপ থেকে জানা যায়, নগরের ঋণগ্রহীতাদের মধ্যে ৬৪ দশমিক ৩০ শতাংশ ঋণ করেন এনজিও থেকে। যেখানে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক থেকে ঋণ নেয় মাত্র ০ দশমিক ৭৯ শতাংশ মানুষ।

অন্যদিকে ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে দ্বিতীয় পছন্দ বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশী। এদের কাছ থেকে ১২ দশমিক ৬৯ শতাংশ মানুষ ঋণ নেন।

একইভাবে সঞ্চয়ের জন্য ৪০ দশমিক ২২ শতাংশ মানুষ এনজিওতে টাকা রাখেন। অন্যদিকে ব্যাংকে টাকা রাখেন মাত্র ৩৪ দশমিক ৬৫ শতাংশ মানুষ।

এছাড়া বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ৭ দশমিক শূন্য ৮, কর্মদাতা থেকে ১ দশমিক ২৫, মহাজনের কাছ থেকে ৩ দশমিক শূন্য ৪, সমবায় সমিতি থেকে ১ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ নগরবাসী ঋণ নেন।

জরিপে দেখা যায়, সিটি করপোরেশনের মধ্যে ঋণগ্রহীতাদের ঋণের পরিমাণ গড়ে ৪৬ হাজার ৪৯ টাকা। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহানগরীর ঋণগ্রহীতারা ৪৫ হাজার ৭৪৫ টাকা ঋণ নেন। আর অন্য মহানগরের ঋণগ্রহীতাদের ঋণের পরিমাণ ৪৭ হাজার ১৮১ টাকা। ঢাকা-চট্টগ্রামের ঋণগ্রহীতাদের ঋণের পরিমাণ বেশি।

বিবিএস জানায়, বাংলাদেশে শহরে বসবাসকারী ঝুঁকির মুখে থাকা জনগোষ্ঠীকে সঞ্চয় ও ঋণে আগ্রহী করে তোলার ক্ষেত্রে বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়স্বজন ও ব্যাংকের মতো গতানুগতিক উৎসকে ছাপিয়ে প্রধান প্রতিষ্ঠান হিসেবে ভূমিকা রাখছে এনজিওগুলো।

সংস্থাটি আরও বলছে, অর্থনৈতিক দুরবস্থার সময় সঞ্চয়ের টাকা দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে যে কোনো খারাপ পরিস্থিতি মোকাবিলায় নিয়ামক হিসেবে সহায়তা করে। পাশাপাশি ভূমিকা পালন করে তাদের ভোগের প্রবণতাকে স্থিতিশীল রাখতে।

এদিকে গড়ে ৩৩ শতাংশ খানা (পরিবার) উল্লেখ করেছে যে, তাদের কোনো না কোনো সঞ্চয় রয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহানগর এলাকায় এ হার অন্য নগর এলাকার থেকে অর্ধেক। খানার গড় সঞ্চয় ৪৭ হাজার ৫৪২ টাকা। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহানগরীর সঞ্চয়কারী খানার হার মাত্র ২৭ দশমিক ৮৬ শতাংশ।

অন্যদিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম ছাড়া সঞ্চয়কারীর হার ৫১ দশমিক ৫৪ শতাংশ। গড়ে ৪২ দশমিক ২২ শতাংশ সঞ্চয়কারী এনজিও ব্যবহার করেন। অন্যদিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহানগরীর ৪৭ দশমিক ২৭ শতাংশ সঞ্চয়কারী ব্যাংকে টাকা রাখেন। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহানগর ছাড়া অন্য সিটি করপোরেশন এলাকার ২৮ দশমিক ৯৪ শতাংশ সঞ্চয়কারী ব্যাংক ব্যবহার করেন। গড়ে ব্যাংকে সঞ্চয় করেন মাত্র ৩৪ দশমিক ৬৫ শতাংশ মানুষ।

সব নগরীর ৩ দশমিক ৭৪ শতাংশ মানুষ নিজ ঘরে সঞ্চয় রাখেন। সমবায় সমিতির কাছে ৩ দশমিক ৫৫, কর্মসংস্থানের প্রভিডেন্ট ফান্ডে ১ দশমিক ৯৩, বিমা কোম্পানির কাছে ৫ দশমিক ৮৫ ও পোস্ট অফিসে ৩ দশমিক ৫৫ শতাংশ মানুষ সঞ্চয় করেন।

ব্যাংকের চেয়ে এনজিওতে মানুষের আস্থা বেশি কেন- এমন প্রশ্নে বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ আবাসিক মিশনের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, অনেকের ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খোলার মতো যোগ্যতা থাকে না। এটা আস্থার বিষয় নয়, অ্যাকসেসের বিষয়। নগরীতে বস্তিবাসীর সংখ্যা বেশি। এনজিওগুলো আবার এদের নিয়ে কাজ করে। সে কারণে এনজিও থেকে বেশি ঋণ নেন নগরবাসী।

বিবিএস জানায়, ‘নগর আর্থসামাজিক অবস্থা নিরূপণ’ জরিপে তথ্য সংগ্রহ করেছে ৪৪ জন। তথ্য সংগ্রহকারীদের ৬০ শতাংশই ছিলেন নারী। বিবিএসের বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ের মোট ১০ জন সুপারভাইজিং কর্মকর্তা মাঠ তদারকিতে ছিলেন।

এছাড়া সব খানার তালিকার জন্য ২০১৯ সালের ৪ ডিসেম্বর থেকে তথ্য সংগ্রহ কার্যক্রম শুরু হয়। খানা তালিকা প্রস্তুত কার্যক্রমটি ক্যাপি অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করে ওই বছরের ১৩ ডিসেম্বর শেষ হয়। এরপর দিন ১৪ ডিসেম্বর শুরু হয় মূল জরিপের তথ্য সংগ্রহ কার্যক্রম, যা শেষ হয় ২০১৯ সালের ২৬ ডিসেম্বর। ট্যাবলেট ও স্মার্টফোনের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করা হয়।