১৬টি দেশের ১০ কোটিরও বেশি শিশু ক্লাসের বাইরে

করোনাভাইরাস মহামারি, জলবায়ু পরিবর্তন, দারিদ্র্যের মতো সমস্যাগুলোর তীব্রতা অভূতপূর্ব হারে বেড়ে যাওয়ায় সুতোয় ঝুলছে বিশ্বের কোটি কোটি শিশুর শিক্ষাজীবন। ফলে ১৬টি দেশের ১০ কোটিরও বেশি শিশু ক্লাসের বাইরে রয়েছে।


 সংক্রমণের ধাক্কা কাটিয়ে বিশ্বের কিছু অংশে স্কুল-কলেজ খোলার প্রস্তুতি চললেও পৃথিবীর এক চতুর্থাংশ দেশেই শিক্ষাব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙে পড়ার হুমকিতে রয়েছে। 


সোমবার (৬ সেপ্টেম্বর) সেভ দ্য চিলড্রেনের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। খবর দ্য গার্ডিয়ানের।


জাতিসংঘের হিসাবে, করোনাভাইরাস মহামারিতে ইতিহাসে প্রথমবারের মতো প্রায় দেড়শ কোটি শিশু স্কুলবঞ্চিত হয়েছে। এদের মধ্যে অন্তত এক-তৃতীয়াংশের কাছে ঘরে বসে শিক্ষাগ্রহণের সুযোগও ছিল না।

বর্তমানে উন্নয়নশীল বিশ্বের দেশগুলো চরম দারিদ্র্য, কোভিড-১৯, জলবায়ু পরিবর্তন, আন্তঃসম্প্রদায় সহিংসতাসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত। এর ফলে সেখানে ‘শিক্ষার্থীদের একটি হারিয়ে যাওয়া প্রজন্ম’ তৈরি হওয়ার আশঙ্কা ক্রমেই বাড়ছে।


এ ধরনের পরিস্থিতি বিবেচনায় ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর একটি তালিকা করেছে সেভ দ্য চিলড্রেন। এ তালিকায় কঙ্গো, নাইজেরিয়া, সোমালিয়া, আফগানিস্তানসহ আটটি দেশের শিক্ষাব্যবস্থা ‘মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।


সংস্থাটির গবেষণায় করোনারোধী টিকাদানের পরিসর, জলবায়ু পরিবর্তন, শারীরিক আক্রমণ এবং স্কুলশিক্ষার্থীদের বাড়িতে ইন্টারনেট সংযোগের মতো বিষয়গুলোও বিবেচনা করা হয়েছে। এতে বলা গেছে, ইয়েমেন, বুরকিনা ফাসো, ভারত, ফিলিপাইন, বাংলাদেশসহ আরও ৪০টি দেশের শিক্ষাব্যবস্থা ভেঙে পড়ার ‘উচ্চ ঝুঁকি’ রয়েছে।


সেভ দ্য চিলড্রেন যুক্তরাজ্যের প্রধান নির্বাহী গোয়েন হাইনস বলেন, আমরা জানি যে, করোনায় স্কুল বন্ধের ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দরিদ্র শিশুরা। কিন্তু দুঃখজনকভাবে, শিশুদের শিক্ষা ও জীবনকে হুমকির মুখে ঠেলে দেওয়া বিষয়গুলোর মধ্যে মাত্র একটি হচ্ছে কোভিড-১৯।


তার মতে, আমাদের এ ভয়াবহ অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিতে হবে এবং এখনই কাজ করতে হবে। কিন্তু বিষয়গুলো যেমন ছিল তেমনটি তৈরি করাই যথেষ্ট নয়। এটিকে আশা ও ইতিবাচক পরিবর্তনের সুযোগ হিসেবে ব্যবহার করে আমাদের ‘অগ্রগামী এবং ভিন্নভাবে’ সব কিছু গড়ে তুলতে হবে।


ইউনিসেফের তথ্যমতে, উন্নত দেশগুলোর বেশিরভাগ অংশে স্কুলগুলো ফের চালু হলেও বাকি বিশ্বের অন্তত ১৬টি দেশে কঠোর লকডাউনের কারণে ১০ কোটিরও বেশি শিশু ক্লাসের বাইরেই থাকছে।


আশঙ্কা করা হচ্ছে, এক থেকে দেড় কোটি শিশু হয়তো আর কখনোই স্কুলজীবনে ফিরতে পারবে না। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে মেয়ে শিশুরা।


ইউনিসেফের শিক্ষা বিষয়ক বৈশ্বিক পরিচালক রব জেনকিন্সের মতে, করোনা মহামারির আগেও বিশ্বের বেশিরভাগ অঞ্চল শিক্ষা সংকটের মুখে ছিল। তিনি বলেন, এখন আমরা শিক্ষার্থীদের একটি প্রজন্ম হারানোর ঝুঁকিতে রয়েছি। এটি আজীবন প্রভাব ফেলতে পারে যদি না আমরা শিশুদের পূর্ণাঙ্গ ও ব্যাপক সহায়তা প্রদান করে এমন কর্মসূচির দিকে না যাই। শুধু শিক্ষার জন্যই নয়, তাদের মানসিক স্বাস্থ্য, পুষ্টি সহায়তা এবং সুরক্ষা অনুভূতির জন্যেও সহায়তা দরকার।


প্রসঙ্গত, প্রায় দেড় বছর বন্ধ থাকার পর আগামী ১২ সেপ্টেম্বর ফের স্কুল-কলেজ খুলছে বাংলাদেশে। গত বছর ৮ মার্চ দেশে করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার পর ওই বছর ১৭ মার্চ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়। পরে দফায় দফায় ছুটি বাড়িয়ে ২০২১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নেওয়া হয়।