‘বিপিসি লাভের ৪৫ হাজার কোটি টাকা সরকারকে দিয়েছে’

ভোক্তাকণ্ঠ রিপোর্ট: লোকসান থেকে বেরিয়ে এসে গত সাত বছরে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি) জ্বালানি তেল বিক্রিতে মুনাফা করেছে ৪৮ হাজার কোটি টাকা। আর এর মধ্যে থেকে দেশ পরিচালনা করার জন্য রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন এ প্রতিষ্ঠানটি সরকারকে ৪৫ হাজার কোটি টাকা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।

মঙ্গলবার রাতে একাদশ জাতীয় সংসদের ১৯তম অধিবেশনে বিরোধী দলীয় সংসদ সদস্যদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।

বিরোধী দলের সংসদ সদস্য হারুনুর রশিদকে উদ্দেশ করে নসরুল হামিদ বলেন, ‘আপনি কুরআনের আয়াত বললেন- ‘সত্যকে মিথ্যা দিয়ে ঢাকা যায় না। আপনারাই তো মিথ্যা কথা বলে যাচ্ছেন। তো মিথ্যাকে দিয়ে মিথ্যা ঢাকবেন কীভাবে? সারাক্ষণই মিথ্যা কথা বলে যাচ্ছেন। ৪৮ হাজার কোটি টাকা বিপিসি লাভ করেছে। তা আপনারা কি চান, সরকারি সংস্থা দেউলিয়া হয়ে যাক। ৪৮ হাজার কোটি টাকার মধ্যে ৪৫ হাজার কোটি টাকা সরকারকে দেওয়া হয়েছে দেশ পরিচালনা করার জন্য।’

তিনি বলেন, ‘বৈশ্বিক পরিস্থিতি ও প্রতিবেশী দেশ ভারতে পাচার হওয়ার আশঙ্কাসহ নানা কারণে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয়েছিল।’

তবে আরও আগে না বাড়ানোর কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘বিশ্বে যখন জ্বালানি তেলের দাম উচ্চে উঠেছিল, সেই সময় বৃদ্ধি করলে লিটারপ্রতি ৬০ টাকা বাড়াতে হত। বিশ্বে তেলের দাম আস্তে আস্তে কিছুটা কমার পর দাম সমন্বয় করেছি।’

বিরোধী দলের শাসনামলে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের চিত্র স্মরণ করিয়ে নসরুল হামিদ বলেন, ‘আমার মনে হয়, বিরোধী দলের গোল্ডফিশ মেমোরি। সব কিছু তারা ভুলে গেছেন। কীভাবে সরকার চালিয়েছিলেন এবং এখন তারা কোথায় আছেন। ভুতের মুখে রামনাম।’

তিনি বলেন, ‘জাতীয় পার্টি ক্ষমতায় থাকতে বিদ্যুতের সিস্টেম লস ছিল ৪৪ শতাংশ। বিএনপির সময়ে ছিল ২২ শতাংশ। এখন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় সিস্টেম লস সাত শতাংশ। বিশ্বের সবচেয়ে স্ট্যান্ডার্ড সিস্টেম লস হচ্ছে ৭ দশমিক ৬ শতাংশ। আপনারা চোখ বন্ধ করে থাকেন, এ জন্য বিদ্যুৎ আছে কী নেই, দেখতে পান না। হয়তো সেই পুরানো কথা মনে হয়, খাম্বা আছে। মাথা থেকে ওই জিনিস যায়ইনি।’

বিরোধী দলের সমালোচনার জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘সংসদ সদস্যের কাছে একটু গঠনমূলক পরামর্শ আশা করছিলাম। কিছুই আসলো না। ওই একই ভাঙা রেকর্ড- ক্যাপটিভ পাওয়ার, রেন্টাল পাওয়ার, ক্যাপাসিটি চার্জ। এর মধ্যেই তারা ঘুরপাক খাচ্ছে। এর থেকে বেরুতে পারছেন না।’

তিনি আরও বলেন, ‘আপনারা সারক্ষণ ফেসবুক, স্যোশাল মিডিয়ার তথ্য দিয়ে যাবেন, স্যোশাল মিডিয়া একটু খুলে দেখেন। পরিস্থিতি কী? কী অবস্থা জার্মানির? তাদের ৪০ শতাংশ গ্যাস কার্টেল করতে হবে। তারা বিপদে আছে শিল্প চলবে কীভাবে? শীতকালে বয়স্ক মানুষেরা কীভাবে হিটিং সিস্টেম চালাবে? ইউকে সিদ্ধান্ত নিয়েছে জানুয়ারি থেকে বিদ্যুৎ কাটঅফ করবে।’

নসরুল হামিদ বলেন, ‘হঠাৎ করে ইউক্রেইন-রাশিয়া যুদ্ধ যখন শুরু হল, ১৭০ ডলার হয়েছিল জ্বালানি তেলের দাম। এক সংসদ সদস্য বলেছেন, সেই সময় কেন দাম বাড়ানো হল না? আরে সেই সময় যদি আমরা দাম বাড়াতাম, তাহলে প্রতি লিটার ৬০ টাকা করে বাড়াতে হত। আমরা অপেক্ষায় ছিলাম দামটা একটু কমুক, তখন অ্যাডজাস্টমেন্টে যাব। দাম আস্তে আস্তে কমে ১৩৯ ডলার যখন হয়েছে, ভারতের থেকে তখনও আমাদের ৪০ টাকা লিটার প্রতি পার্থক্য ছিল। যার কারণে সম্ভাবনা ছিল ভারতে তেল পাচার হয়ে যাওয়ায় … সেই কারণে আমাদের একটি ব্যবস্থা নিতে হয়েছে।’

বৈশ্বিক অবস্থার কথা তুলে ধরে নসরুল হামিদ বলেন, ‘বৈশ্বিক অবস্থা, তেলের ঘাটতি, ঊর্ধ্বমুখী তেলে দাম এবং পাচার হওয়ার ঘটনা অনেক কিছু মিলিয়ে এই দাম আমাদের সমন্বয় করতে হয়েছে। আমরা তো দাম বৃদ্ধি করিনি। আমরা সমন্বয় করেছি। অস্বীকার করার কিছু নেই। আমরা জানি সকলেই কষ্টে আছেন। আমরা এটা বার বার বলেও আসছি। সারা পৃথিবীর মানুষ কষ্টে আছে। উদাহরণ দেওয়ার কোন প্রয়োজন নেই।’

রেন্টাল, কুইকরেন্টাল ইসুতে তিনি বলেন, ‘রেন্টাল পাওয়ার বলতে কিছু নেই। আমাদের স্বল্প মেয়াদী, মধ্যম মেয়াদী ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা ছিল। স্বল্প মেয়াদের পরিকল্পনায় ছিল ইমিডিয়েট, কয়েক মাসের মধ্যে কীভাবে বিদ্যুৎকেন্দ্র করা যায়। সে জন্য আমরা ভাড়া করে নিয়ে আসছিলাম। ইংরেজিতে সেটাকে বলে রেন্টাল পাওয়ার। একটাও পাওয়ার প্লান্ট তো এখন রেন্টাল না। আমরা যতগুলোকে এক্সেটেনশন দিয়েছি, স্ট্যান্ডবাই রেখেছি। একটারও কোন ক্যাপাসিটি চার্জ নেই।’

প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘ক্যাপাসিটি চার্জের কথা বললেন? সারা বিশ্বে তো আপনি কোন পাওয়ার প্ল্যান্ট করতে পারবেন না যদি ক্যাপাসিটি চার্জ না দেন। একটি পাওয়ার প্ল্যান্ট ১০/২০ বছরের জন্য নেবেন, তার প্রতিদিনে যে অর্থ খরচ হবে, তা দেবেন না? আপনি বলবেন, আমি যখন ইচ্ছে তখন চালাব। পৃথিবীর কেউ আপনার কাছে ইনভেস্টমেন্ট করবে? দুই বছরের জন্য ঘর ভাড়া নিয়ে মালিককে যদি বলেন, যখন থাকবেন ভাড়া দেবেন, আর না থাকলে ভাড়া দেবেন না। কেউ কি ভাড়া দেবে? এটা হাস্যকর কথা। অর্থনীতি সম্পর্কে কোন ধারণাই আপনাদের নেই। ওই স্যোশাল মিডিয়ায় দেখেন- রেন্টাল, রেন্টাল, রেন্টাল। ক্যাপাসিটি চার্জ, ক্যাপাসিটি চার্জ। বোঝারও চেষ্টা করেন না আমাদের বিরোধী দলের বন্ধুরা।