‘৫ টাকায় ভিক্ষাও হয়না, জ্বালানী তেলের এমন দাম কমায় স্বস্তি ফিরবে না’

ভোক্তাকন্ঠ রিপোর্ট: দেশে জ্বালানি তেলের রেকর্ড দাম বাড়ানোর পর তীব্র সমালোচনার মুখে লিটারে ৫ টাকা কমানো হয়েছে। তবে ৫ টাকায় এখন ফকিরের ভিক্ষাও হয় না। তাই এরকম দাম কমানোয় ভোক্তা পর্যায়ে কোন প্রভাব পড়বে না বলে মনে করছেন কনজুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ও জ্বালানি উপদেষ্টা প্রফেরস ড. এম শামসুল আলম। 

মঙ্গলবার রাতে ক্যাবের ডিজিটাল অনলাইন প্লাটফর্ম ভোক্তাকণ্ঠকে দেওয়া বক্তব্যে এ মন্তব্য করেন তিনি।

জ্বালানি তেলের দাম লিটারে ৫ টাকা কমিয়ে সরকার তামাশা করছে- ভোক্তাদের উক্তি দিয়ে এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, সরকার যেখানে (অকটেন) লিটারে ৪৬ টাকা মূল্য বৃদ্ধি করলো। সেখানে ৫ টাকা কমিয়েছে। এটি তামাশা বললেও হালকা হয়ে যাবে।

এসময়ে তিনি বলেন, জ্বালানী তেলের দাম বৃদ্ধির উদ্দেশ্য ছিল ঘাটতি  কমানো, ভর্তুকি না দেওয়া। কিন্তু সেখানে সরকারের রাজস্ব আয় কমানোর কথা ভাবা হয়নি। বিপিসি’র (বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন) মুনাফা কমানোর কথা ভাবা হয়নি। বিপিসির দুর্নীতি, অযৌক্তিক মূল্য বৃদ্ধি বা ব্যায় বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণের কথা ভাবা হয়নি। পাশাপাশি ভোক্তাদের উপর একতরফাভাবে মূল্য বৃদ্ধি করে ঘাটতি কমানো হয়েছে।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ শামসুল আলম বলেন, দেশে জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির পিছনে বেআইনি যুক্তি বা দর্শন ছিলো। এখানে ৫ টাকা কমানো, এটা নামমাত্র কমানো হয়েছে। যেহেতু বিপিসি প্রচন্ড জন-অসন্তোষে রয়েছে। তাই সেটাকে মোকাবিলা করার জন্যেই সরকার এ কৌশল নিয়েছে। তবে এখানে ভোক্তাদের স্বার্থ বিবেচনা করে এটা করা হয় নি। সুতরাং এই কমানোর মাধ্যমে ভোক্তাদের লাভ-ক্ষতির প্রশ্নই এখানে নেই। এখানে সরকারের উদ্দেশ্যটাই বড় করে দেখা হয়েছে।

ক্যাবের এ উপদেষ্টা  আরো বলেন, সরকার যে ৫ টাকা কমিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছে, বলতে গেলে এখন ৫ টাকায় ফকিরের ভিক্ষাও হয়না। তাই সেরকম পরিমাণ দাম কমিয়ে ভোক্তার জনজীবনে স্বস্তি ফেরানো যাবে না। আর এটা যারা করেছে তারাও ভোক্তার কথা চিন্তা করে করেন নি। তাই আমরাও এটা মনে করি না -এই দাম কমানোর মাধ্যমে ভোক্তা উপকৃত হবে। 

উল্লেখ্য, বিশ্ব বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির দোহাই দিয়ে চলতি মাসের ৫ আগস্ট কেরোসিন ও ডিজেলের দাম প্রতি লিটারে ৮০ টাকা থেকে ৩৪ টাকা বাড়িয়ে ১১৪ টাকা, অকটেন ৮৯ টাকা থেকে ৪৬ টাকা বাড়িয়ে ১৩৫ টাকা এবং পেট্রোলে ৮৬ টাকা থেকে ৪৪ টাকা বাড়িয়ে ১৩০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল। 

তবে দেশ জুড়ে রাজনৈতিক ও সামজিক সংগঠন গুলোর প্রতিবাদের মুখে ডিজেল, কেরোসিন, পেট্রোল ও অকটেনে লিটারে ৫ টাকা কমানোর সিদ্ধান্ত নেয় বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়।

নতুন দর অনুযায়ী, সোমবার (২৯ আগস্ট) দিবাগত রাত ১২টার পর থেকে ডিপোর ৪০ কিলোমিটারের মধ্যে ভোক্তা পর্যায়ে ডিজেল ও কেরোসিন ১০৯  টাকা , অকটেন ১৩০ টাকা এবং পেট্রোল ১২৫ টাকা লিটার করা হয়। 

এর আগে ওইদিন (সোমবার) জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এক প্রজ্ঞাপনে ৩১ ডিসেম্বর ২০২২ পর্যন্ত ডিজেলের ওপর আরোপ করা সমুদয় আগাম কর থেকে অব্যাহতি এবং আমদানি শুল্ক ১০ শতাংশর পরিবর্তে ৫ শতাংশ নির্ধারণ করে। যারে ফলেই ভোক্তা পর্যায়ে জ্বালানি তেল ডিজেল, কেরোসিন, অকটেন ও পেট্রোলের মূল্য সমন্বয় করা হয়।