অন্তহীন অভিযোগে ভোক্তা অধিদপ্তরের জরিমানা মাত্র ১০ হাজার

নিজস্ব প্রতিবেদক:

খাবারের মধ্যে ঘুরছে তেলাপোকা, নোংরা পরিবেশে ক্রেতার জন্য তৈরি হচ্ছে খাবার, রান্না ঘরের যেখানে-সেখানে বাসী খাবারের ছড়াছড়ি, ফ্রিজে মেয়াদ উত্তীর্ণ খাবার সহ অন্তহীন অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া যায় ডোমেস্টিকাস নামের একটি রেস্টুরেন্টের বিরুদ্ধে। এতো অভিযোগের পরেও মাত্র ১০ হাজার টাকা জরিমানা করে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।

সোমবার দুপুরে রাজধানীর শ্যামলী স্কোয়ারে অভিযান চালায় ভোক্তা অধিদপ্তর। শপিংমলটির নিচ তলা থেকে ৭তম তলায় ফুড কোডে পৌঁছাতে-পৌঁছাতে ভোক্তা অধিদপ্তরের অভিযানের বিষয়ে খবর পেয়ে যায় রেস্টুরেন্ট মালিককরা। অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা পৌঁছানোর আগেই অনেক রেস্টুরেন্ট বন্ধ করে দেয় মালিকরা।

 

ডোমেস্টিকাস নামের রেস্টুরেন্টটির রান্না ঘর বন্ধ দেখা যায়। কিন্তু পাশেই ক্রেতাদের বসার স্থানে কয়েকজন ক্রেতাকে দেখা যায়। পরে রেস্টুরেন্টটির মালিককে খুঁজে এনে রান্না ঘরের সাটার খোলার নির্দেশ দেন ভোক্তা কর্মকর্তারা।

রান্না ঘরের ভিতরে ঢুকতেই পঁচা গন্ধে নাক সিটকে ওঠে। একে একে অনিয়মের চিত্র ধরা পরে কর্মকর্তাদের চোখে। নোংরা পরিবেশে তৈরি হচ্ছে খাবার, রান্না করা বাসী রাইস এবং মুরগীর মাংস পাওয়া যায়। এছাড়া খাবারের মধ্যে তেলাপোকার অবাদে চলাচলের দৃশ্যও চোখে পড়ে। ফ্রিজের মধ্যে পাওয়া যায় মেয়াদ উত্তীর্ণ খাবার।

 

এসব অভিযোগ আমলে নিয়ে অধিদপ্তর আইনের ৪৩ ধারায় দোসী সাবস্ত করে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করার সিদ্ধান্ত নেয় কর্মকর্তারা। তবে এই জরিমানার টাকা দিতে গিয়ে গড়িমসি শুরু করে ডোমেস্টিকাস’র এর দায়িত্বরত ব্যক্তি। দীর্ঘ সময় পরে অনেকের অনুরোধে ১০ হাজার টাকা কমিয়ে মাত্র ১০ হাজার টাকা জরিমানা ঘোষণা করা হয়। সেই টাকা দিতেও গড়িমসি করলে রেস্টুরেন্টটি বন্ধের সিদ্ধান্ত নিতে চাইলে তরিঘরি করে জরিমানার টাকা পরিশোধ করে ডোমেস্টিকাস’র এর দায়িত্বরত ঐ ব্যক্তি।

 

ভোক্তা কর্মকার্তাদের আসার খবরে দোকান বন্ধ করে পালানো, সঙ্গে এতো এতো অভিযোগ। এর পরেও জরিমানার টাকা দিতে গড়িমসি। অন্তহীন এসব অভিযোগের পরেও মাত্র ১০ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন ভোক্তা কর্মকর্তারা।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনের ৪৩ ধারায় বলা হয়েছে:
অবৈধ প্রক্রিয়ায় পণ্য উৎপাদন বা প্রক্রিয়াকরণ: মানুষের জীবন বা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতি হয় এমন কোন প্রক্রিয়ায়, যা কোন আইন বা বিধির অধীনে নিষিদ্ধ করা হয়েছে, কোন পণ্য উৎপাদন বা প্রক্রিয়াকরণ করা হলে অনুর্ধ্ব দুই বছরের কারাদণ্ড বা অনাধিক এক লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড হতে পারে।

 

এছাড়া পাশের ইস্পাসি মেহেরজান নামের আরও একটি রেস্টুরেন্টে অভিযান চালানো হয়। সেখানেও বাসী খাবার পাওয়ায় অধিদপ্তর আইনের ৪৩ ধারায় দোসী সাবস্ত করে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

অভিযানের খবরে বন্ধ করে দেওয়া মেক্সিকান স্পাইসি নামের রেস্টেুরেন্টরি মালিককে খুঁজে বের করে দোকানা খোলার নির্দেশ দেন কর্মকর্তারা। সেখানেও একই চিত্র দেখা যায়। এই প্রতিষ্ঠানকেও অধিদপ্তর আইনের ৪৩ ধারায় দোসী সাবস্ত করে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

 

এছাড়া নিত্যপণ্যের বাজার পরিদর্শন করে চাল, চিনি,পেঁয়াজ, কাঁচা সবজি, পোল্ট্রি, ভোজ্যতেলসহ অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য, পণ্য ক্রয়-বিক্রয় রসিদ, পণ্যের মূল্য তালিকা পরিবীক্ষণ করা হয়। এসময় বাজারে ন্যায্যমূল্যে নিত্যপণ্য বিক্রয়, পণ্য ক্রয়-বিক্রয়ের রসিদ সংরক্ষণ, মূল্য তালিকা প্রদর্শনের বিষয়ে ব্যবসায়ীদের হ্যান্ডমাইকে সতর্ক করা হয়।

ঢাকা মহানগরীতে অধিদপ্তরের ৩টি টিম কর্তৃক অভিযান পরিচালিত হয়। অভিযানে উপস্থিত ছিলেন- ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার, উপ-পরিচালক বিকাশ চন্দ্র দাস, ঢাকা জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. আব্দুল জব্বার মণ্ডল।

আরইউ