তেল-চিনির সংকটের কারণ খুঁজতে বাজারে ভোক্তার ডিজি, কি পেলেন?

ভোক্তাকণ্ঠ রিপোর্ট: দাম বাড়ানোর প্রস্তাবের পর থেকে রাজধানীর বেশিরভাগ বাজারে ভোজ্যতেলের সংকট দেখা দিয়েছে। সেই সঙ্গে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না চিনিও। ভোক্তাদের চাহিদা অনুযায়ী মিলছে না এসব নিত্যপণ্য। যতটুকু সরবরাহ আছে, তা সরকারের নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে বলে অভিযোগ সাধারণ ভোক্তাদের।

ভোক্তাদের এমন অভিযোগের সত্যতা খুঁজতে মাঠে নামে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান। বুধবার রাজধানীর কাওরানবাজার এবং নিউ মার্কেট বাজারে মনিটরিং করেন তিনি।

এসময় মহাপরিচালকের সঙ্গে ছিলেন অধিদপ্তরের পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার, সহকারী পরিচালক মো. হাসানুজ্জামান, মো. মাগফুর রহমান।

কাওরানবাজারের কিচেন মার্কেটের কয়েকটি খুচরা দোকানে মনিটরিং করে দেখা যায়, পর্যাপ্ত পরিমাণে খোলা চিনি নেই। দুই একটি দোকানে পাওয়া গেলেও তা চাহিদার তুলনায় কম। এছাড়া প্যাকেট চিনি খুঁজে পাওয়া গেছে মাত্র দুটি দোকানে। এদের মধ্যে একটি দোকানে ৮৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছে বলে দাবি করেন দোকানী। আরেক দোকানে এগলু নামে এক প্যাকেট চিনি বিক্রি করছে ১০৮ টাকা। চিনির মোড়কে মূল্য লেখা রয়েছে। যেখানে গত ৬ অক্টোবর প্রতি কেজি চিনির দাম ৬ টাকা বাড়িয়ে খোলা চিনির দাম ৯০ টাকা ও প্যাকেটজাত চিনির দাম ৯৫ টাকা নির্ধারণ করে দেয় সরকার। সেখানে সরকার নির্ধারিত দামের থেকে কেজিতে ১৩ টাকা বাড়িয়ে প্রকাশ্যে মোড়কে দাম লিখে বিক্রি করছে এই কোম্পানি।

প্রমাণ স্বরূপ দোকান থেকে এক প্যাকেট চিনি কিনেন ভোক্তা অধিদপ্তর। এবং এই কোম্পানির সঙ্গে সরকার নির্ধারিত দামের থেকে বেশি দামে বিক্রির কারণ জানতে কথা বলবেন বলেও জানান ভোক্তার ডিজি।

পরে মনির এণ্ড ব্রাদার্স নামের একটি পাইকারী দোকানে গিয়ে খোলা ভোজ্যতেলের দাম যাচাই করেন। এসময় দোকানী মনির দাবি করেন তিনি, সরকার নির্ধারিত দামে তেল বিক্রি করছেন। পরে হাতেনাতে প্রমাণ নিতে, তেল কিনে নেওয়া এক ক্রেতার সঙ্গে সরাসরি কথা বলেন ভোক্তা অধিদপ্তরের ডিজি। দোকানীর কথার সঙ্গে ক্রেতার মূল্য মিলে যাওয়ায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন তিনি। তবে বাজারে পর্যাপ্ত ভোজ্যতেলের সংকট দেখা যায়।

বাজার ঘুরে মাত্র একটি দোকানে এক লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেল পাওয়া যায়। এছাড়া কাওরানবাজার ঘুরে তীর এবং ফ্রেস ব্র্যান্ডের কোনো বোতলজাত সয়াবিন তেল খুঁজে পায়নি ভোক্তা অধিদপ্তর।

কারওয়ান বাজারের খুচরা পর্যায়ে কেন চিনি নেই? এ প্রশ্নের জবাবে পাইকারি ব্যবসায়ী ও ডিলারদের অভিযোগ, মিল থেকে দিচ্ছে না। তবে দাম বাড়ালে সরবরাহ মিলবে বলে আশ্বাস পাচ্ছেন তারা।

কাওরানবাজার মনিটরিং শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ভোক্তা অধিদফতরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান। তিনি বলেন, বাজারে তেল, চিনির ঘাটতি রয়েছে, যদিও উৎপাদন পর্যায়ে স্বাভাবিক রয়েছে বলে দাবি করেছেন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো।

তিনি বলেন, এর আগে যখন আমরা মিল বা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছিলাম, তখন তারা গ্যাস এবং বিদ্যুৎ সংকটের কথা বলেছিলেন। তবে এখন প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় কারখানাগুলোতে গ্যাস এবং বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক করা হয়েছে। এবং আমরা যতটুকু জানি ভোক্তাদের যতটুকু দরকর মিলগুলো পর্যাপ্ত উৎপাদন করছে। সে রিপোর্টগুলো আমাদেরকে দিয়েছে। মিল থেকে ডিসট্রিবিউশনও ঠিক আছে। প্রতিদিন তারা মিল থেকে যে পরিমাণ চিনি এবং সয়াবিন তেল সরবরাহ করছে তা ভোক্তার জন্য যথেষ্ট। কিন্তু আমরা বাজারে এসে দেখছি, মার্কেট ড্রাইভ হয়ে যাচ্ছে। ড্রাইভ হবার কারণে মার্কেট অস্থির হয়ে যাচ্ছে। আমাদের অভিযানের মাধ্যমে এটি কন্ট্রোল করা যাচ্ছে না। সেক্ষেত্রে আমরা দেখবো, এই সাপ্লাইগুলো কোথায় গেল?

বাজারে তেল-চিনি সংকটের পেছনে তাহলে কি মিল মালিকরা দায়ি, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এই মুহুর্তে নির্ধারিত করে বলা যাবে না। কারণ মিল থেকে যে ডকুমেন্ট আমরা পাচ্ছি সেখানে সরবরাহ এবং উৎপাদন ঠিক আছে। এই সমস্যা পথে হচ্ছে কি না বা সেখানে বেশি বলা হচ্ছে কি না? এসব আমরা যাচাই করে দেখবো।