রোডসাইড কিচেন’কে লাখ টাকা জরিমানা

ভোক্তাকণ্ঠ রিপোর্ট: রেস্টুরেন্টের ভেতরে সাজসজ্জার অভাব নেই, কিন্তু রান্নাঘরে ভোক্তা স্বার্থবিরোধী অপরাধের অভয়ারণ্য। বার্গারের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে ফাকশা পড়া মেয়াদোত্তীর্ণ রুটি, ফ্রিজে বাসি রাইস, গ্রিলের মাংসসহ অন্যান্য খাবার সংরক্ষণ করা হয়েছে। এছাড়া বাসি রান্না করা খাবারের সঙ্গে একই ফ্রিজে রাখা হয়েছে কাঁচা মাছ-মাংস। এর সঙ্গে রান্নাঘরে তেলাপোকার দৌরাত্ম তো রয়েছেই।

এমন দৃশ্য রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকার নুরজাহান সড়কের ‘রোডসাইড কিচেন’ নামের একটি রেস্টুরেন্টের। ভোজনরসিকদের আকৃষ্ট করতে রেস্টুরেন্টটির বাহ্যিক দিক সাজানো হয়েছে বাহারি রঙে রাঙিয়ে। বাইরের রূপ দেখে ফিটফাট মনে হলেও ভেতরের অবস্থা সদরঘাটের থেকেও খারাপ।

মঙ্গলবার নিয়মিত তদারকির অংশ হিসেবে মোহাম্মদপুরের এই রেস্টুরেন্টে অভিযান পরিচালনা করে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। অভিযানের নেতৃত্ব দেন অধিদপ্তরের ঢাকা জেলা কার্যালয়ের অফিস প্রধান ও সহকারী পরিচালক মো. আব্দুল জব্বার মণ্ডল এবং সহকারী পরিচালক মো. মাগফুর রহমান।

‘রোডসাইড কিচেন’ ভোক্তাদের অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়াচ্ছে এমন অভিযোগের ভিত্তিতেই মূলত এখানে অভিযান চালানো হয়। এর আগেও একই অপরাধে এই রেস্টুরেন্টে অভিযান চালানো হয়েছিল বলে জানিয়েছেন রেস্টুরেন্টের দায়িত্বে থাকা ম্যানেজার। তবে নিজেদের না শুধরে আবারও ভোক্তাদের অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়াচ্ছিল রেস্টুরেন্টটি।

অভিযানে দেখা যায়, বার্গারের ব্যবহারের জন্য রুটির মেয়াদ শেষ হয়েছে তিন দিন আগে। রুটির উপর ফাকশা পড়েছে। তারপরও সেই রুটি দিয়েই তৈরি করা হচ্ছে বার্গার। এছাড়া নোংরা ফ্রিজের মধ্যে বাসি খাবারের ছড়াছড়ি। বাসি রাইস, গ্রিলের মাংস, চিকেন ফ্রাই ফ্রিজে সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে। ফ্রিজের এক চেম্বারের মধ্যে বাসি রান্না করা খাবারের সঙ্গে কাঁচা মাছ-মাংস রাখা হয়েছে। রান্নাঘরের পরিবেশও নোংরা। সেই সঙ্গে রান্না ঘরের চারপাশে তেলাপোকার দৌঁড়াদৌঁড়ি।

অভিযানের বিষয়ে আব্দুল জব্বার মণ্ডল বলেন, ‘রোডসাইড কিচেন’ নামের রেস্টুরেন্টের বিরুদ্ধে আগে থেকেই অভিযোগ ছিল। অভিযানে এসে ভোক্তা স্বার্থবিরোধী বিভিন্ন অপরাধের প্রমাণ হাতেনাতে পেয়েছি। মেয়াদোত্তীর্ণ রুটি, বাসি খাবার সংরক্ষণ, ফ্রিজে রান্না করা বাসি খাবারের সঙ্গে কাঁচা মাছ-মাংস রাখা এবং অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে খাবার তৈরি করার অপরাধে এই প্রতিষ্ঠানকে ভোক্তা অধিকার আইন ২০০৯ অনুসারে এক লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

এছাড়া, একই সড়কের পাশের খানা’স নামের আরও একটি রেস্টুরেন্টে অভিযান চালায় ভোক্তা অধিদপ্তর। এই রেস্টুরেন্টে চার দিন আগের পোড়া তেল আজকেও ব্যবহার করছে। যা মবিলের মতো কালো এবং গাঢ় আকার ধারণ করেছে। তারপরও এই পোড়া তেলেই ভাজা হচ্ছে খাবার। এই অপরাধে প্রতিষ্ঠানটিকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

পরে ক্যাফি আল মামুন নামের আরও একটি প্রতিষ্ঠানকে ভোক্তা স্বার্থবিরোধী অপরাধে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

জব্বার মণ্ডল বলেন, ‘ভোক্তা স্বার্থবিরোধী অপরাধে আজ তিনটি প্রতিষ্ঠানকে মোট এক লাখ ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।’

পরে মোহাম্মদপুর টাউন হল মার্কেটের কয়েকটি মুরগির দোকান ঘুরে দাম, পাকা রশিদ যাচাই করা হয়। এ সময় কয়েকটি দোকানে পাকা রশিদ না থাকায় প্রাথমিক ভাবে সতর্ক করে দেন ভোক্তা কর্মকর্তারা।