বায়ু দূষণে নাকাল রাজধানীবাসী

ভোক্তাকন্ঠ ডেস্ক:

প্রায়ই দূষিত শহরের তালিকায় এক নম্বরে আসছে রাজধানী ঢাকা। এই মুহূর্তে মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, পূর্বাচল এক্সপ্রেসওয়ে, ঢাকা-গাজীপুর মহাসড়ক, বিমানবন্দরের তৃতীয় টারমিনালের মতো বড় উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর কাজ চলছে। সঙ্গে সরকারি-বেসরকারি নানা ভবন নির্মাণ তো আছেই। স্বাভাবিকভাবেই তাই বাতাসে ভাসছে বালি আর মাটির কণা। এদিকে শীতে বৃষ্টি না হওয়ায় ধূলিকণা বাতাসেই থেকে যাচ্ছে। ঢুকে পড়ছে ঘরে, এমনকি মানুষের ফুসফুসেও। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বক্ষব্যাধির বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বায়ুদূষণ। দূষণ রোধে তাই সকল পক্ষকে দ্রুত চিন্তা-ভাবনার অনুরোধ জানিয়েছেন তারা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, উন্নয়নকাজ বন্ধ রাখা যাবে না। আবার বায়ুদূষণও করা যাবে না। বেছে নিতে হবে বিকল্প সমাধান। বড় উন্নয়ন প্রকল্পগুলোতে ধূলা নিয়ন্ত্রণে পানি ছিটানো হলেও তা যথেষ্ট নয় বলে অভিযোগ রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বিশ্বের বায়ুমান যাচাই বিষয়ক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ‘এয়ার ভিজ্যুয়াল’ এর বায়ুমান সূচক (একিউআই) অনুযায়ী আজ সোমবার (৩১ জানুয়ারি) বেলা ১১ টা ২০ নাগাদ ঢাকা আবার উঠে এসেছে শীর্ষ অবস্থানে, গত কয়েকদিনের বৃষ্টিতে কিছুটা দূষণ কমলে আজ আবার আগের অবস্থানে এসেছে। এর আগে অবশ্য গত ২১ থেকে ২৬ জানুয়ারি টানা দিনের কোনও না কোনও সময় ঢাকা উঠে এসেছে একেবারে শীর্ষ অবস্থানে। আজ অবস্থানের সাথে সাথে মাত্রাও বেড়েছে কয়েকগুণ বেশি। এর আগের কদিন মাত্রা ছিল ৩০০ এর নিচে, যাকে বিশেষজ্ঞরা অস্বাস্থ্যকর মাত্রা বলে থাকেন, আজ সে মাত্রা ৪১৯। যার অর্থ দুর্যোগপূর্ণ, ‘জরুরি অবস্থা’ জারি করার মতো অবস্থা।

ঢাকার বায়ুদূষণ প্রসঙ্গে ক্যাপসের পরিচালক অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার বলেন, “নগর পরিকল্পনায় ঘাটতি, আইনের দুর্বলতা, আইন প্রয়োগের সীমাবদ্ধতা ঢাকার বায়ুদূষণের অন্যতম কারণ। ২০২২ সালের জানুয়ারির ২৫ দিনের গড় বায়ুমান সূচক ২১৯.৫২-তে দাঁড়িয়েছে যা খুবই অস্বাস্থ্যকর।”

অধ্যাপক মজুমদার আরও বলেন, ‘গত ছয় বছরের মধ্যে ঢাকার মানুষ মাত্র দুই ভাগ (৩৮ দিন) সময় ভালো বাতাস পায়। ঢাকার দূষণের মান সবচেয়ে খারাপ অবস্থানে থাকে রাতে। এতে রাজধানীবাসীর স্বাস্থ্যজনিত সমস্যাও বেড়ে যাচ্ছে। বেড়েছে ইনহেলারের ব্যবহারও।’

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমডোর এস এম শরিফ-উল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা প্রতিদিন গাড়ি দিয়ে পানি দিচ্ছি। আমাদের এ কাজে ১৪টি গাড়ি আছে। বায়ু দূষণ অ্যাপ একিউএস-এর মাধ্যমে কোন এলাকায় বেশি দূষণ হচ্ছে সেটা দেখে পানি দিচ্ছি। মেট্রোরেল, এয়ারপোর্ট, গাবতলী, রোকেয়া সরণিতে বেশি পানি দিতে হচ্ছে। ছোট গলিতে পানি দেওয়াটা বড় সমস্যা। সেখানেও ছোট গাড়িতে করে পানি দেওয়ার চেষ্টা করছি। কিন্তু সিটি করপোরেশনের একার পক্ষে পানি দিয়ে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। এজন্য মানুষকে সচেতন হতে হবে। নির্মাণকারী সংস্থা, প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তির উদ্যোগও থাকতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আরও গাড়ির প্রয়োজন। আমরা উদ্যোগ নিচ্ছি। পরিকল্পনা করা হয়েছে।’

খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, রাজধানীর কিছু এলাকায় দুই সিটি করপোরেশন পানি ছিটালেও তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। যেসব গাড়ি দিয়ে পানি ছিটানো হয় সেগুলো প্রধান সড়কের বাইরে অলিগলিতে যেতে পারে না। অন্যদিকে, ঝাড়ু দিয়েও খুব একটা লাভ হয় না। এতে ধূলা বাতাসেই থেকে যায়।

বিশেষজ্ঞ বলছেন উন্নত দেশে নির্মাণকাজের সময় নির্মাণাধীন ভবন চট বা পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখা হয়। এতে বাইরে কোনও ধূলাই যেতে পারে না। অনেক ক্ষেত্রে নির্মাণকাজের এলাকায় মোটা ভেজা ম্যাটও বিছিয়ে রাখা হয়। আমাদের দেশে এসবের রেওয়াজ নেই বললেই চলে।