১১টি প্রস্তাবনা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে ডা. জাফরুল্লাহর খোলা চিঠি

করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে সরকারের করণীয় দিক গুলো উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আবারও চিঠি দিয়েছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।


আজ সোমবার (১৯ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ১১টার দিকে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রেস পরামর্শদাতা জাহাঙ্গীর আলম মিন্টু ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর চিঠি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পৌঁছে দেন। তিনি নিজেই এই বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।


ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর চিঠিতে করোনায় আক্রান্ত রোগীদের সাশ্রয়ী চিকিৎসার জন্য অক্সিজেন, ওষুধ, মেডিক্যাল যন্ত্রপাতি ও সামগ্রী থেকে বিশেষ স্টেচুটরি রেগুলেটরি অর্ডারের (এসআরও) মাধ্যমে সব ধরনের শুল্ক প্রত্যাহার করাসহ মোট ১১টি প্রস্তাবনা তুলে ধরেন।


চিঠিতে ডা. জাফরুল্লাহ বলেন, ‘অক্সিজেন, ওষুধ, মেডিক্যাল যন্ত্রপাতি ও সামগ্রী থেকে বিশেষ এসআরওর মাধ্যমে সব ধরনের শুল্ক, অগ্রিম আয়কর, মূসক প্রভৃতি প্রত্যাহার করা। আইসিইউ পরিচালনার জন্য জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসক ও নার্স প্যারামেডিকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা। ২০০ জন চিকিৎসক ও ৫০০ জন নার্স টেকনিশিয়ানকে আইসিইউতে দ্রুত অক্সিজেন প্রদান, নন-ইনভেসিব শ্বাস-প্রশ্বাস প্রক্রিয়া, শ্বাসতন্ত্রে টিউব মারফত অক্সিজেন সরবরাহ, অন্যান্য নিয়ন্ত্রিত শ্বাস-প্রশ্বাস ব্যবস্থাপনা প্রক্রিয়া এবং শ্বাসনালি ট্যাকিয়া ছিদ্র করে দ্রুত অক্সিজেন সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য এক মাসের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা। সব ওষুধের মূল্য এবং রোগ পরীক্ষার পদ্ধতিগুলোর চার্জ সরকার কর্তৃক নির্ধারণ করে দে‌ওয়া।’


চিঠিতে আরো বলেন, ‘কারাগারে আবদ্ধ সব ব্যক্তিকে দ্রুত টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়া এবং খুনের দায়ে ও দুর্নীতির কারণে দণ্ডিত অভিযুক্ত ছাড়া অন্য সব ব্যক্তিকে দ্রুত টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করা।’


সরকারি ও বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজগুলোতে প্রতিবছর ২০ হাজার ছাত্র ভর্তি করা এবং এমবিবিএস পাসের পর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে এক বছর বাধ্যতামূলক ইন্টার্নশিপ করানো।


আগামী বাজেটে সব ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের নিরাপত্তা বেষ্টনী সংস্কার, গভীর নলকূপ ও বিদ্যুতায়ন ব্যবস্থার উন্নয়ন, মেডিক্যাল, নার্সিং, ফিজিওথেরাপি ও টেকনিশিয়ানদের জন্য ডরমিটরি, ক্লাসরুম, লাইব্রেরি, ডাইনিংরুম এবং পাঁচজন চিকিৎসক ও ১০ জন নার্সিং, ফিজিওথেরাপি ও টেকনিশিয়ান প্রধানদের জন্য ৬০০-৭০০ বর্গফুটের বাসস্থান, বহির্বিভাগসহ ৩০ শয্যার হাসপাতাল, ল্যাবরেটরি ও অপারেশন থিয়েটার নির্মাণের জন্য ছয় কোটি টাকা এবং অপারেশন থিয়েটার, এক্স-রে আলট্রাসনোলজি, চক্ষু ও বিভিন্ন ল্যাবরেটরির যন্ত্রপাতির জন্য অন্যূন চার কোটি টাকা বরাদ্দের ব্যবস্থা নিন। এরূপ উন্নয়নে ইউনিয়নের প্রায় এক লক্ষ জনগণের জন্য আধুনিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে।লকডাউন কার্যকরে দরিদ্র ও নিম্নবিত্ত পরিবারগুলোকে সরাসরি আর্থিক প্রণোদনার পরিবর্তে বিনা মূল্যে মাসিক রেশন চালু করে চাল, ডাল, আটা, আলু, তেল, চিনি, পেঁয়াজ, রসুন প্রভৃতি দেওয়া। রেশন বিতরণের জন্য সামরিক বাহিনী, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং এনজিওকর্মীদের কাজে লাগানো।


এছাড়াও ট্রিপসের বাধ্যতামূলক লাইসেন্সের মাধ্যমে ভ্যাকসিন উৎপাদন সুবিধা সৃষ্টির জন্য নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত করে ইউরোপে পাঠানো।
চিঠিতে লেখা হয়েছে, ‘ভ্যাকসিন উৎপাদনের জন্য ০.৫ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করা। গত বছর দ্রুত সিনোজাকের ট্রায়াল অনুমোদন না দিয়ে যে ভুল করা হয়েছিল, তার পুনরাবৃত্তি কাম্য নয়। গণস্বাস্থ্য উদ্ভাবিত অ্যান্টিবডি অ্যান্টিজেন অনুমোদন ১ বছরে হয়নি। ড. বিজন কুমার শীলের ভিসা না হওয়ায় বাংলাদেশে ফিরতে পারছেন না। ক্ষতি হচ্ছে দেশের, বিষয়টি আপনাকে পুনরায় অবগত করলাম।’


চিঠিতে ‘দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণে জাতির কঠিন সমস্যা থেকে মুক্তির সম্ভাবনা অনেক বেশি’ বলে উল্লেখ করেন ডা. জাফরুল্লাহ। সেইসঙ্গে প্রধানমন্ত্রীকে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানান তিনি।
শুল্ক, অগ্রিম আয়কর, মূসক প্রত্যাহার করা হলে অক্সিজেন, ঔষধ এবং মেডিকেল যন্ত্রপাতির দামের পরিবর্তন আসতে পারে। সেক্ষেত্রে দাম কমলে ক্রেতাদের উপর চাপ কমবে।
চিকিৎসক এবং নার্স টেকনিশিয়ানদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা করা হলে রোগীরা দ্রুত এবং আগের তুলনায় সঠিক চিকিৎসা পাবে বলে আশা করা যায়। প্রস্তাবনায় উল্লেখিত সরকার নির্ধারিত মূল্যে ওষুধ বিক্রি করা হলে ভোক্তাদের ঔষধ মূল্য সংক্রান্ত সংশয় দূর হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।


সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেলে এমবিবিএস পাশের পর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে একবছরের বাধ্যতামূলক ইন্টার্নশিপ করানো প্রস্তাবনা দেন তিনি। এই প্রস্তাবনা কার্যকর হলে চিকিৎসাসেবায় কিছুটা হলেও পরিবর্তন আসতে পারে।
এছাড়া সব ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের উন্নয়নের জন্য বাজেট বরাদ্দ রাখার প্রস্তাবনা দেন। চিকিৎসা ও সেবা খাতের সমৃদ্ধিতে অংশ নিতে পারে এ প্রস্তাবনার বাস্তবায়নে।

লকডাউনে দরিদ্র ও নিম্নবিত্ত পরিবারকে সরাসরি আর্থিক প্রণোদনার পরিবর্তে বিনামূল্যে মাসিক রেশনের আওতায় আনার প্রস্তাবনাটি কতটা সমুচিত- সে বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে কোন নির্দেশনা আসার আগ পর্যন্ত বলা যাচ্ছে না।


তার প্রস্তাবনা অনুযায়ী বাজেট পাস করা হলে অন্যান্য পণ্য সামগ্রীর উপর করের প্রভাব পড়বে কিনা সে বিষয়ে এখনও বলা যাচ্ছে না। সেক্ষেত্রে পণ্য সামগ্রীর দাম বৃদ্ধি পেলে ভোক্তাদের দুর্ভোগও বাড়বে।