৫ বছরে ৩ লাখ ভারী যানবাহন চালক তৈরির উদ্যোগ বিআরটিসির

প্রতিবছর সড়কে ঝরছে কয়েক হাজার মানুষের প্রাণ। দুর্ঘটনায় পঙ্গুত্ব বরণ করা মানুষের সংখ্যাও নেহাত কম নয়। বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানো, প্রতিযোগিতা, ওভারটেকিং, চালকের অদক্ষতাই মূলত এর জন্য দায়ী। তাই সড়ক নিরাপদ রাখতে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশন (বিআরটিসি)। বছরে তারা তৈরি করবে ৬০ হাজার দক্ষ চালক।

বিআরটিসি সূত্র জানায়, সড়ক নিরাপদ করতে বিআরটিসির তত্ত্বাবধানে ভারী যানবাহন চালকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। আনা হবে সঠিক লাইসেন্সিংয়ের আওতায়। প্রাথমিকভাবে প্রতিষ্ঠানটির লক্ষ্য ২০২১ সাল থেকে আগামী পাঁচ বছরে তিন লাখ দক্ষ ভারী যানবাহন চালক তৈরি। প্রতিবছর ন্যূনতম ৬০ হাজার চালক পাবেন প্রশিক্ষণ। প্রথম ধাপে প্রশিক্ষিত করা হবে ১ লাখ ৫৭ হাজার জনের। পরের ধাপে প্রশিক্ষণ পাবেন আরও ১ লাখ ৪৩ হাজার জন।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, তিন লাখ দক্ষ চালক তৈরির জন্য ৯৭৭ কোটি ৬৩ লাখ টাকার আবদার করেছে বিআরটিসি। অক্টোবর ২০১৯ থেকে জুন ২০২৫ মেয়াদে বাস্তবায়নের জন্য প্রকল্প প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়। তবে করোনা সংকটসহ নানা কারণে প্রকল্পের কাজ থেমে ছিল। সংকট কিছুটা কাটায় নানা সংযোজন বিয়োজনের পর প্রকল্পটি ফের একনেক সভায় উপস্থাপন করা হবে।

নতুন করে ‘ভারী যানবাহন চালক তৈরির লক্ষ্যে প্রশিক্ষণ প্রদান’ শীর্ষক এ প্রকল্পে গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার।

প্রকল্পের উদ্দেশ্য

প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ চালক তৈরি করে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন ও দুর্ঘটনায় হতাহতের সংখ্যা কমিয়ে আনা প্রকল্পের প্রধান উদ্দেশ্য। এছাড়া হালকা অথবা মধ্যম লাইসেন্সধারী চালকদের মধ্যে যাদের ভারী যানবাহন চালানোর অভিজ্ঞতা আছে তাদের দুই সপ্তাহ মেয়াদি ভারী যানবাহন চালনার উপর উচ্চতর প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। হালকা ও মধ্যম লাইসেন্সধারী চালকদের মধ্যে যাদের ভারী যানবাহন চালানোর অভিজ্ঞতা নেই তারা পাবে চার সপ্তাহ মেয়াদি ভারী যানবাহন চালনার উপর উচ্চতর প্রশিক্ষণ। সড়কে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি দেশ-বিদেশে উচ্চ দক্ষতাসম্পন্নদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে চায় বিআরটিসি।

প্রকল্পের আওতায় প্রধান প্রধান কার্যাবলী

বেতন-ভাতাদি, প্রশিক্ষণ গাড়ির জ্বালানি (ডিজেল), দৈনিক খোরাকি ভাতা, পোশাক ভাতা, প্রশিক্ষণ ভাতা ব্যবস্থাপনা ব্যয় অন্য সম্পদ ভাড়া (ভারী যানবাহন), যানবাহন কেনা।

প্রশিক্ষণার্থীর সংখ্যা

প্রকল্পের আওতায় পাঁচ বছরে মোট তিন লাখ প্রশিক্ষণার্থীর প্রশিক্ষণ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রথম ধাপে দুই বছর মেয়াদে প্রশিক্ষণার্থীর সংখ্যার বিষয়ে বিআরটিসির প্রতিটি কেন্দ্রে একসঙ্গে দুটি ব্যাচ (দুই সপ্তাহ ও চার সপ্তাহ মেয়াদি) পরিচালনার মাধ্যমে মোট ১ লাখ ৫৭ হাজার ৯২০ জন প্রশিক্ষণার্থীর প্রশিক্ষণ দেওয়া সম্ভব হবে। এরমধ্যে বিআরসিটির ২৪টি কেন্দ্রে ৪০ হাজার ৩২০ জন, আর্মড ফোর্সেস ডিভিশনের (এএফডি) ২৪টি কেন্দ্রে ৪০ হাজার ৩২০ জন, রিজিওনাল ট্রান্সপোর্ট কমিটির (আরটিসি) ২৬টি কেন্দ্রে ৪৩ হাজার ৬৮০ জন, একটি বাংলাদেশ পুলিশ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ১ হাজার ৬৮০ জন এবং ১৯টি আউটসোর্সিং প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে (বিআরটিএ নিবন্ধিত সক্ষম ড্রাইভিং প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান) ৩১ হাজার ৯২০ জন প্রশিক্ষণার্থী পাবে প্রশিক্ষণ।

চালক তৈরিতে দৈনিক ও খোরাকি ভাতা

প্রকল্পের আওতায় প্রথমে প্রশিক্ষণার্থী প্রতি দৈনিক খোরাকি ভাতা ৫শ টাকা ও খাবার ভাতা ৩শ টাকা হারে নির্ধারণ করা হয়। এত কম টাকা খোরাকি ও ভাতা নির্ধারণ করা হলে কাঙ্খিত প্রশিক্ষণার্থী পাওয়া যাবে না আশঙ্কা থেকে পরে খোরাকি ভাতা ১ হাজার টাকা ও খাবার বাবদ জনপ্রতি দৈনিক ৩শ টাকা হারে ভাতা নির্ধারণ করা হয়েছে।

পোশাক ভাতা
প্রতি সেট ২৫০ টাকা হারে প্রশিক্ষণার্থী প্রতি এক সেট টি-শার্টের জন্য ধরা হয়েছে মোট ৭ কোটি ৮৯ লাখ টাকা।

যানবাহন

প্রকল্পে ১২ দিন মেয়াদি ও ২৪ দিন মেয়াদি প্রশিক্ষণের জন্য অন্য সম্পদ ভাড়া (ভারী যানবাহন) বাবদ ৬৫ কোটি টাকা ধরা হয়েছে। গাড়িপ্রতি দৈনিক ভাড়া ছয় হাজার টাকা হারে ৯৪টি সেন্টারের প্রতিটির জন্য দুটি করে মোট ১৮৮টি ও ১২টি রিজার্ভ গাড়িসহ সর্বমোট দুশটি গাড়ি জন্য ৬৯ কোটি টাকার সংস্থান রাখা হয়েছে। তবে গাড়ির রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় বিআরটিসিকে বহন করতে হবে।

ব্যবস্থাপনা ব্যয়

প্রকল্পে ব্যবস্থাপনা ব্যয় (উদ্বোধনী, সমাপনী এবং ওভারহেড ব্যয়) হিসেবে মোট ৩৬ কোটি টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রস্তাব অনুযায়ী উদ্বোধনী ও সমাপনী অনুষ্ঠানের নাস্তা বাবদ জনপ্রতি ২শ টাকার স্থলে ১৫০ টাকা এবং ওভারহেড খাতে জনপ্রতি এক হাজার টাকা হারে ১ লাখ ৫৭ হাজার ৯২০ জন প্রশিক্ষণার্থীর জন্য মোট ১৮ কোটি ১৬ লাখ টাকা ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে।

প্রশিক্ষণ যানের জ্বালানি

প্রকল্পে প্রশিক্ষণ যানের জ্বালানি ব্যয় হিসেবে মোট ৫১ কোটি ৯৪ লাখ টাকার প্রস্তাব করা হয়। বর্তমানে ১ লাখ ৫৭ হাজার ৯২০ জন প্রশিক্ষণার্থীর প্রত্যেকে দৈনিক পাঁচ কিলোমিটার করে প্রশিক্ষণ যান চালনার সুযোগ পাবেন। প্রতি লিটার তেলে ২ দশমিক কিলোমিটার চালনা হিসেবে সর্বমোট ৫২ লাখ ১১ হাজার ৩৬০ লিটার জ্বালানি লাগবে। প্রতি লিটার ৬৬ টাকা হিসেবে জ্বালানির মোট ব্যয় ৩৪ কোটি ৩৯ লাখ টাকা টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

সার্বিক বিষয়ে বিআরটিসির চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত সচিব) মো. তাজুল ইসলাম বলেন, নিরপদ সড়ক মূলত দক্ষ চালকের উপর নির্ভর করে। সেই লক্ষ্যে আমরা প্রতি বছর ৬০ হাজার দক্ষ চালক তৈরির কাজ শুরু করবো। পর্যায়ক্রমে তিন লাখ ভারী যানবাহন চালক তৈরির উদ্যোগ হাতে নিয়েছি। আমি মনে করি দেশে যত বেশি দক্ষ চালক তৈরি হবে তত বেশি নিরাপদ হবে সড়ক।