চিন্তায় দুগ্ধ খামারিরা

খামারিদের উৎপাদিত দুধের দাম দু’ দফা দাম বাড়িয়েছে প্রাণসহ দুগ্ধ সংগ্রহকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। এতে খুশি খামারিরা। তবে দুধের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় ব্যবসায়ীরা এখন পর্যাপ্ত দুধই যোগান দিতে পারছেন না।

গো-খাদ্যের দাম বেশি হওয়ায় খামারিরা আশানুরূপ লাভবান হতে পারছেন না বলে তারা জানিয়েছেন। সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় সরকারিভাবে গো-খাদ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানটি পুনরায় চালু করা ও এর মাধ্যমে সাবসিডি প্রদানের দাবি জানিয়েছেন। গো-খাদ্যের দাম না কমলে অনেকের পক্ষে গাভী পালনই সম্ভব হবে না বলে অনেক খামারি মনে করছেন।

উন্নতজাতের গাভী পালন করে এসব এলাকার হাজার হাজার কৃষক অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়ে ওঠেছে। এমন অনেক খামারি আছেন যাদের কৃষি কাজ করে এক সময়ে দু’বেলা পেটের ভাতই জুটত না সেই তারাই এখন গাভী পালন করে প্রতিদিন ১ থেকে ২ মণ দুধ বিক্রি করে প্রতিদিন ২ হাজার টাকা থেকে ৪ হাজার টাকা আয় করছেন। আয়ের অর্থ দিয়ে তারা প্রতি বছর জমি-জমা কেনা থেকে শুরু করে ছেলে-মেয়েদের স্কুল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করাচ্ছেন।

ফজলু খান নামের এক গো-খামারি জানায়, দু’বছর আগে তিনি ৪০ হাজার টাকা দিয়ে ‘ফ্রিজিয়ান-১০০’ জাতের একটি গাভী কিনে লালন-পালন করেন। গাভীটির বর্তমান মূল্য প্রায় ২ লাখ টাকা। ওই গাভীটি ১ বছর আগে একটি উন্নতজাতের বাছুর জন্ম দেয়।বাছুরটির বর্তমান দাম প্রায় ৫০ হাজার টাকা। ওই গাভীটি সম্প্রতি আরও একটি উন্নতজাতের বকন বাছুর প্রসব করেছে যার বর্তমান দাম প্রায় ৩০ হাজার টাকা। ২ বছরের মধ্যে গাভীটিসহ ২টি বাছুরের বর্তমান আয় ২ লাখ ৮০ হাজার টাকায় দাঁড়িয়েছে। এছাড়া ওই গাভীটি প্রতিদিন ২২ লিটার করে দুধ দিচ্ছে। গড়ে ৪৫-৫০ টাকা লিটার দরে প্রতিদিন ১ হাজার টাকা উপার্জন হচ্ছে।

বৃহত্তর পাবনা জেলায় অঞ্চলে প্রতিদিন প্রায় আড়াই লাখ লিটারের বেশি দুধ উৎপাদন হয়। দুগ্ধ উৎপাদনকারীরা পাবনার ভাঙ্গুড়া ক্রয় কেন্দ্র, সিরাজগঞ্জের লাহিড়ী মোহনপুর ও বাঘাবাড়ি মিল্কভিটায় প্রতিদিন প্রায় দেড় লাখ লিটার দুধ সরবরাহ করেন বলে জানান, বাংলাদেশ দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি হাসিব খান তরুণ।

এখন কাঁচা ঘাস ও খেসারি না থাকায় অনেক খামারিরা বাথান থেকে গরু খামারে নিয়ে এসেছেন। এ সময়ে গো-খাদ্য বেশি কেনা লাগছে খামারিদের। এজন্য দুধের উৎপাদন খচর বেশি পড়ছে। তবে চাষিরা দুধের দাম ভালো পাচ্ছেন। গো-খাদ্যের দাম কম থাকলে খামরি ও চাষিরা আরো লাভবান হতে পারতেন।

তিনি জানান, দু:খজনক ব্যাপার হলো গত তিন মাস ধরে সেখানে কোনো গো-খাদ্য উৎপাদন হচ্ছে না। নানা অজুহাতে বন্ধ রাখা হয়েছে। এ প্রতিষ্ঠানটির মাধ্যমে খামারিদের গো-খাদ্য কেনায় সহজেই সাবসিডি দেয়া সম্ভব। কারণ এখানে যরা দুধ দেবেন তারাই সাবসিডিতে গো-খাদ্য কিনতে পারবেন। এতে কোনো ভুয়া খামারির কমদামে গো-খাদ্য কেনার সুযোগ থাকবে না। খামারিদের লাভবান করতে এ প্রতিষ্ঠানটিকে সরকার ব্যাপকভাবে কাজে লাগাতে পারে। খামারিরা সশ্রয়ী দামে গো-খাদ্য কিনতে পারলে ভোক্তা এবং উৎপাদনকারী উভয়েই উপকৃত হবেন।

পাবনায় কাঁচা ঘাসের প্রাচুর্য রয়েছে। জেলায় প্রায় ৮ হাজার হেক্টর জমিতে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ঘাস চাষ করা হয়। তবে খাদ্যের দাম কিছুটা বেশি। সেটাতে ভর্তুকি দেয়ার ব্যাপারে তার স্থানীয়ভাবে কিছু করার নেই। এটা নীতি নির্ধারকদের বিবেচনার বিষয়। তবে চাষিরা ভালো দাম পাচ্ছেন এবং লাভবান হচ্ছেন বলে জানান, পাবনা জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা।