সরকার নির্ধারিত দামে পণ্য পাচ্ছেন না ভোক্তা

ভোক্তাকণ্ঠ রিপোর্ট: খুচরা বাজারে পাঁচটি পণ্যের দাম সরকার নির্ধারণ করে দিলেও সেই দর ব্যবসায়ীরা মানছেন না। বাজারে অভিযান চালানোর পরও নতুন দর কার্যকর করানো যাচ্ছে না। একেক বাজারে একেক দামে এসব পণ্য বিক্রি হতে দেখা গেছে।

গত বৃহস্পতিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ৫ টাকা কমিয়ে ১৬৯ টাকা নির্ধারণ করে দেয়। তবে এখনো নতুন দামের তেল বাজারে আসেনি। অবশ্য ভোজ্যতেল বেশির ভাগ সময় নির্ধারিত দরে বিক্রি হলেও চিনিতে তা মানা হয় না।

মৌসুমের শুরুতে আলু প্রতি কেজি ১৫ টাকা এবং শেষ দিকে নভেম্বর-ডিসেম্বরে ৩৫ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি হয়। এবার সেপ্টেম্বরেই আলুর কেজি ৫৫ টাকায় উঠে গেছে। এমন অবস্থায় গত বৃহস্পতিবার প্রতি কেজি আলুর দাম নির্ধারণ করে দেওয়া হয় ৩৫ থেকে ৩৬ টাকা। কিন্তু বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৪৫ থেকে ৫০ টাকা দরে।

প্রতি কেজি খোলা চিনির নির্ধারিত দর ১২০ টাকা। বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা কেজিতে। প্রতি হালি ডিমের দর নির্ধারণ করা হয়েছিল ৪৮ টাকা, যা বাজার দরের চেয়ে সামান্য কম। সেই দরও কার্যকর হয়নি।

সরকারি সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তালিকা বলছে, প্রতি হালি ডিম বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫২ টাকা দরে। কিন্তু বাস্তবে পাড়া-মহল্লার দোকানগুলোতে বিক্রি হচ্ছে ৫৫ টাকা হালি।

দেশি পেঁয়াজের দাম কিছুটা কমেছে। বাজারে এখন দেশি পেঁয়াজ ৮০ থেকে ৯০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে, যা সরকার নির্ধারিত দরের চেয়ে ২১ থেকে ২৫ টাকা বেশি। তবে ইন্ডিয়ান পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজিতে।

এদিকে ব্যবসায়ীদের দাবি, সরকার অযাচিত পণ্যের মূল্য নির্ধারণ করেছে। তাদের বেঁধে দেওয়া মূল্যে এই তিনটি ভোগ্যপণ্য কেনাই যাচ্ছে না। পাইকারি বাজার থেকে বেশি দামে পণ্য কিনে কমে বিক্রি করা সম্ভব নয়।

কারওয়ান বাজারের একাধিক বিক্রেতার সঙ্গে কথা হলে তারা বলেন, আমাদের তো কিছু করার নেই। আজ দাম কমার কথা। কিন্তু সকালে এ দামে তো পেঁয়াজ পাইনি। সরকার দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে কিন্তু বাস্তবে তো পাচ্ছি না। তাই যে দামে কিনছি, সেটা থেকে তো লাভ করেই বিক্রি করতে হবে।

তবে সরকারের সংশ্লিষ্ট তদারকি সংস্থার কর্মকর্তারা বলছেন, নির্দেশনা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দাম কার্যকর করা কঠিন। কারণ, খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে নতুন দরের পণ্য পৌঁছাতে কিছুটা সময় লাগে। তাই তারা এখন উৎপাদন ও মজুত পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ এবং এসব পর্যায়ে নির্ধারিত দাম কার্যকরের বিষয়ে বেশি মনোযোগী। এসব স্তরে দাম স্বাভাবিক হলে খুচরায় নির্ধারিত দর কার্যকর হবে বলে মনে করেন তারা।

এদিকে, শুধু ভোক্তা অধিদপ্তরের একার পক্ষে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান।

গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, ‘বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে ভোক্তা অধিদপ্তর, কৃষি বিপণন অধিদপ্তর, প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সবাই বাজারে তদারকি করবে। কিন্তু ভোক্তা অধিদপ্তর ছাড়া কেউই বাজারে নামেনি। এত অল্প সংখ্যক জনবল দিয়ে সারাদেশে ভোক্তার অধিকার নিশ্চিত করা অনেক কঠিন। তারপরও চেষ্টা চলছে।’

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ঠেকাতে ডিম, আলু ও পেঁয়াজের দাম নির্ধারণ করে দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। অথচ সরকার নির্ধারিত এ দামের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে দৈনন্দিন এসব পণ্য। যার ফলে বেশি দামে পণ্য কেনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন ভোক্তারা।

-এসএম