ফুটপাতে হাঁটার জায়গা খালি করতে যে উদ্যোগ নিল ডিএসসিসি

ভোক্তাকণ্ঠ রিপোর্ট: গণপরিসর থেকে স্ট্রিট ভেন্ডরদের উচ্ছেদ করা কোন স্থায়ী সমাধান নয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী উক্ত এলাকা ত্যাগ করলেই আবার তাদের আনাগোনা শুরু হয়ে যায়। এই প্রেক্ষাপটে, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন স্ট্রিট ভেন্ডরদের পরিচালনা এবং ফুটপাতে হাঁটার জায়গা খালি করতে গণপরিসরে স্ট্রিট ভেন্ডর ব্যবস্থাপনা বিষয়ে একটি নতুন প্রকল্প হাতে নিয়েছে।

এটি একটি পাইলট প্রকল্প যেখানে ফুটপাথের দোকানগুলোকে শুধুমাত্র ফুটপাতের নির্ধারিত অংশে বিকাল ৪টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত ব্যবসা করার অনুমতি রয়েছে। বাকি সময়ে সমগ্র ফুটপাত খালি রাখতে হবে। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের এই প্রকল্প ইতিমধ্যে মিরপুর-১০ এলাকার অধিকাংশ স্ট্রিট ভেন্ডরদের উচ্ছেদ না করে একটি ব্যবস্থাপনা পদ্ধতির আওতায় আনতে কাজ করছে। এই প্রকল্পের সফলতার উপর ভিত্তি করে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের অন্যান্য সকল এলাকায় এই কার্যক্রম ধীরে ধীরে বাস্তবায়ন করা হবে।

শনিবার (১৫ এপ্রিল) দুপুরে গণপরিসরে স্ট্রিট ভেন্ডর ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমের অগ্রগতি যাচাই ও পরবর্তী কর্মপন্থা নির্ধারণে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের অঞ্চল-৪-এর কার্যালয়ে একটি মতবিনিময় সভা আয়োজন করা হয়। উক্ত মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও ভারপ্রাপ্ত মেয়র মোঃ জামাল মোস্তফা।

সভায় অন্যান্যের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন ১৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোঃ হুমায়ুন রশিদ (জনি), অঞ্চল-৪ এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আবেদ আলী, প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ মাকসুদ হাসেম, মিরপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ মহসীন, কাফরুল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (অপারেশন) মোঃ আব্দুল বাতেন, মিরপুর-১০ নম্বর গোলচত্ত্বর সংলগ্ন স্ট্রিট ভেন্ডর, ব্র্যাক প্রতিনিধি ও ডিএনসিসির অন্যান্য কর্মকর্তাবৃন্দ।

মতবিনিময় সভার শুরুতে মিরপুর-১০ নম্বর গোলচত্ত্বর সংলগ্ন এলাকায় ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের স্ট্রিট ভেন্ডর ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম বিষয়টি তুলে ধরেন। সকল হকারবৃন্দ ঢাকা উত্তর সিটিকর্পোরেশনের কার্যক্রমের প্রশংশা করেন। তবে সিটি কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপনায় আসার পরেও লাইনম্যানদের চাদাবাজি বন্ধ হচ্ছে না সে বিষয়ে অনেক হকাররা অভিযোগ করেন।

ডিএনসিসির ৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও ভারপ্রাপ্ত মেয়র মোঃ জামাল মোস্তফা বলেন, ‘মাননীয় মেয়র মোঃ আতিকুল ইসলাম আমাকে এই কাজের দায়িত্ব দিয়েছেন যাতে কোন চাদাবাজ কোন হকারদের উপর অত্যাচার করার সুযোগ না পায়। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন এই ফুটপাতের চাদাবাজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করেছে। আপনাদের সার্বিক সহযোগিতা ছাড়া এই যুদ্ধে জয় সম্ভব নয়। মেয়র মহোদয় আমাদের সবাইকে একটি নান্দনিক ঢাকা উপহার দিতে চান। আর এই নান্দনিক ঢাকা গঠনে গণপরিসরে স্ট্রিট ভেন্ডর ব্যবস্থাপনার কোন বিকল্প নেই।

তিনি সকল হকারদের চাদাবাজদের বিরুদ্ধে একসাথে প্রতিবাদ করতে অনুরোধ জানান এবং ঢাকা উত্তর সিটিকর্পোরেশনের হকার ব্যবস্থাপনার নিয়ম-কানুন না মানলে তিনি নিজে দাঁড়িয়ে থেকে সব উচ্ছেদ করবেন বলেন হুশিয়ারি দেন।

এসময় ১৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোঃ হুমায়ুন রশিদ জনি বলেন, ‘মিরপুর ১০ নম্বর এলাকায় ২৪৩৬ টা দোকান আছে। আপনার সবাই একতাবদ্ধ থাকলে সকল চাদাবাজদের রুখে দেয়া সম্ভব।’

হকারদের পাশে থেকে সকল ধরনের সাহায্য সহযোগিতার আশ্বাস দেন তিনি।

ডিএনসিসির প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ মাকসুদ হাসেম বলেন, ‘গনপরিসরে স্ট্রিট ভেন্ডর ব্যবস্থাপনার যে প্রকল্প সিটি কর্পোরেশন হাতে নিয়েছে সেখানে সকল হকারদের সক্রিয় অংশগ্রহণ ছাড়া সফলভাবে বাস্তবায়ন সম্ভব নয়।’ তিনি সকল হকারদের ফুটপাত ব্যবস্থাপনার নিয়ম-কানুন মেনে চলার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন।

মিরপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ মহসীন বলেন, ‘মিরপুর মডেল থানার নামে কোন টাকা তোলা যাবে না। যদি কেউ তোলে তাহলে আপনারা সরাসরি থানায় অভিযোগ করবেন, আমি তদন্ত করে ব্যবস্থা নিব। তবে মূল রাস্তায় কোন দোকান বসানো যাবে না। তিনি আরো বলেন আমি ওসি, মিরপুর মডেল থানা, আইনের মধ্যে থেকে আপনাদের সর্বোচ্চ সহযোগিতা করে যাবো।

এসময় কাফরুল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (অপারেশন) মোঃ আব্দুল বাতেন সিটি কর্পোরেশনের প্রকল্পের প্রতি তার সংহতি প্রকাশ করেন এবং চাদাবাজি ও চাদাবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবার বিষয়ে সকল হকারদের অবহিত করেন।

আরইউ