আটা-ময়দা-সুজি দিয়ে তৈরী হতো ১০ ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক

ভোক্তাকণ্ঠ ডেস্ক: বাজারে দুষ্প্রাপ্য এমন অ্যান্টিবায়োটিক টার্গেট করতো একটি প্রতারকচক্র। এরপর সেগুলোর মোড়ক থেকে শুরু করে যাবতীয় জিনিস নকল করে ভেতরে আটা-ময়দা-সুজি ঢুকিয়ে বাজারে ছাড়তো। এসব নকল অ্যান্টিবায়োটিক তৈরি করা হতো রাজধানীর অদূরে সাভারের একটি কারখানায়। আর পরে তা ট্রাক বা পিকআপে ভরে নিয়ে যাওয়া হতো বরিশাল। সেখানে গুদামজাত করে পরে ধীরে ধীরে বিভিন্ন জেলায় পাঠিয়ে দেওয়া হতো।

চক্রটি এভাবে নকল অ্যান্টিবায়োটিক তৈরি করে বাজারজাত করে আসছিল। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের মতিঝিল বিভাগ অভিযান চালিয়ে ওই চক্রের পাঁচ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য।

সোমবার রাজধানীর মিন্টো রোডের ডিবি কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন ঢাকা মহানগর পুলিশের অতরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।

গ্রেফতারকৃতরা হলেন- শাহীন (৩৪), শহীদুল ইসলাম (৪০), সিরাজুল ইসলাম (৩৬), হৃদয় (২০) ও হুমায়ুন (৩৬)। তাদের কাছ থেকে চার লাখ ৯৬ হাজার পিস নকল অ্যান্টিবায়োটিক উদ্ধার করা হয়। যার বাজারমূল্য প্রায় দুই কোটি টাকা। উদ্ধার অ্যান্টিবায়োটিকগুলো আটা, ময়দা, সুজি ও বিভিন্ন উপাদান দিয়ে তৈরি।

ডিবি বলছে, চক্রটি বাজারে থাকা ও বাজার থেকে বিলুপ্ত এমন ওষুধের মধ্যে রিলামক্স-৫০০ ট্যাবলেট, মক্সিকফ-২৫০, সিপ্রোটিম-৫০০ এমজি, এমোক্সস্লিন, জিম্যাক্স, মোনাস-১০ নকল করে ছাড়তো। তারা কাফকা ফার্মাসিউটিক্যালস, ডক্টর টিমস ফার্মাসিউটিক্যালস, জেনিথ ফার্মাসিউটিক্যালস, কুমুদিনী ফার্মাসিউটিক্যালস, ইউনিয়ন ফার্মাসিউটিক্যালসের ওষুধ নকল করতো।

তিনি বলেন, গ্রেফতার শহীদুল দীর্ঘদিন ধরে বরিশালের নথুল্লাবাদ এলাকায় নকল বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক মজুত করতেন। সেগুলো বিভিন্ন পরিবহন ও গ্রেফতার শাহীনের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করে আসছিলেন। গ্রেফতার হুমায়ুন রাজীব অপসোনিন কোম্পানির বিক্রয়কর্মী হিসেবে চাকরি করতেন। পাশাপাশি বিভিন্ন ফার্মেসিতে নকল অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি করতেন। এছাড়া সিরাজুল ইসলাম ও হৃদয় নকল ওষুধ বিক্রির যাবতীয় কাজে অধিক মুনাফার জন্য শহীদুলকে সহায়তা করতেন। কারখানায় নকল ওষুধ তৈরি করে সেগুলো কুমিল্লার জনৈক আবু বক্কর বিভিন্ন কুরিয়ারের মাধ্যমে বাজারে সরবরাহ করতেন।

ডিবিপ্রধান বলেন, মূলত কুমিল্লার আবু বক্বর এসব নকল ওষুধ তৈরি করে শহীদুলকে দিতেন। তিনি সেগুলো বরিশালে গুদামজাত করে পরে অন্যদের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠিয়ে দেওয়া হতো। যেসব ওষুধ কোম্পানি বাংলাদেশে নেই এবং যে ওষুধগুলো বাজারে নেই সেগুলোই তারা তৈরি করে বাজারজাত করতো। এছাড়া তারা বিভিন্ন ব্র্র্যান্ডের ওষুধ নকল করে সেগুলোর ভেতরে আটা, ময়দা ও সুজি ভরে রাখতো। আমরা তাদের কাছ থেকে দুই কোটি টাকার নকল ওষুধ উদ্ধার করেছি। এর আগেও তারা কোটি কোটি টাকার নকল ওষুধ তৈরি করে বিক্রিও করেছে।

তিনি বলেন, চক্রটি গত আট থেকে ১০ বছর ধরে এই ভেজাল ওষুধ তৈরি করে আসছিল। তাদের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত ১৫টি মামলা রয়েছে। আমরা তাদের তিন জনকে আগেও গ্রেফতার করেছিলাম। তারা জামিনে বেরিয়ে আবারও একই ব্যবসা শুরু করে।

হারুন অর রশীদ বলেন, এখন পর্যন্ত ৮০টি ইউনানি ওষুধ কোম্পানির ভেজাল ওষুধ তৈরির বিষয়ে তথ্য তারা ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরকে দিয়েছেন। সেই অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা।