অল্প দূরত্বেও বেশি টোল এক্সপ্রেসওয়েতে

ভোক্তাকণ্ঠ ডেস্ক: ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে নামে পরিচিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মহাসড়কে শুক্রবার থেকে টোল দিতে হবে। অল্প দূরত্বে চললেও বেশি টোল লাগবে। দুর্ঘটনা রোধে এক্সপ্রেসওয়েতে মোটরসাইকেল চলাচল নিষিদ্ধ করার প্রস্তাব করেছে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ)।

এক্সপ্রেসওয়েতে টোল আদায়ে গতকাল বুধবার অপারেটর কোরিয়ান এক্সপ্রেসওয়ে করপোরেশনের (কেইসি) সঙ্গে চুক্তি করে সওজ। তেজগাঁওয়ের সড়ক ভবনে চুক্তি সই অনুষ্ঠানে সওজের প্রধান প্রকৌশলী এ কে এম মনির হোসেন পাঠান বলেন, নিষিদ্ধের প্রস্তাবে সরকার অনুমোদন দিলে পদ্মা সেতুর মতো এক্সপ্রেসওয়েতেও মোটরসাইকেল চলবে না। তবে পাশের সার্ভিস লেনে চলতে পারবে।

এদিকে, গতকাল সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ এক্সপ্রেসওয়ের অন্তর্বর্তী টোলের প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। ট্রেইলারে ১ হাজার ৬৯০ টাকা, বড় ট্রাকে ১ হাজার ১০০, মাঝারি ট্রাকে ৫৫০, বড় বাসে ৪৯৫, মিনি ট্রাকে ৪১৫, মিনিবাসে ২৭৫, মাইক্রোবাসে ২২০, প্রাইভেটকারে ১৪০ এবং মোটরসাইকেলে ৩০ টাকা টোল দিতে হবে।

এর আগে গত মঙ্গলবারের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছিল, নীতিমালা অনুযায়ী যথাসময়ে চূড়ান্ত টোল নির্ধারণ হবে। অন্যদিকে, গতকাল হাইকোর্টকে সওজ জানায়, এক্সপ্রেসওয়েতে টোল আদায় শুরু হওয়ায় ১ জুলাই থেকে পোস্তগোলা, ধলেশ্বরী ও আড়িয়াল খাঁ সেতুতে টোল দিতে হবে না।

চুক্তিসই অনুষ্ঠানে ছয়টি এন্ট্রি ও এক্সিট পয়েন্টের দূরত্বের ভিত্তিতে টোলের হিসাব দেওয়া হয়। এ তালিকা অনুযায়ী, ঢাকার যাত্রাবাড়ীর জিরো পয়েন্ট এবং ফরিদপুরের ভাঙ্গা ইন্টারচেঞ্জ দিয়ে এক্সপ্রেসওয়েতে প্রবেশ ও বের হওয়া যাবে। পথে পদ্মা সেতুর এপারে কেরানীগঞ্জের আবদুল্লাহপুর, ধলেশ্বরী প্লাজা, মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর এবং পদ্মা সেতুর ওপারে মাদারীপুরের পাচ্চর, মালিগ্রাম ও পুলিয়ায় এন্ট্রি এবং এক্সিট পয়েন্ট রয়েছে।

জিরো পয়েন্ট থেকে আবদুল্লাহপুর পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার পথে বড় বাসে টোল ৯০ টাকা। বাবুবাজার সেতু হয়ে ঝিলমিল থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরের আবদুল্লাহপুর গেলেও ৯০ টাকাই লাগবে। আবদুল্লাহপুর থেকে ধলেশ্বরী টোল প্লাজার দূরত্ব তিন কিলোমিটার। কিন্তু কোনো বাস আবদুল্লাহপুরে ঢুকে ধলেশ্বরী টোল প্লাজা অতিক্রম করলেই জিরো পয়েন্ট থেকে পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্তের শ্রীনগর পর্যন্ত পুরো ৩২ কিলোমিটারের ২৯০ টাকা দিতে হবে। পদ্মা সেতুর ওপারে পুলিয়া থেকে মালিগ্রাম চার কিলোমিটার পথ চললেও ধরা হবে বাসটি পদ্মা সেতুর পাচ্চর প্রান্ত থেকে চলছে। ১৬ কিলোমিটারের জন্য ১৪৫ টাকা লাগবে।

এর কারণ জানতে চাইলে প্রধান প্রকৌশলী বলেন, এক্সপ্রেসওয়েতে তিন-চার কিলোমিটার পথ চলতে নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। ১৮ ফুটের সার্ভিস লেন ট্রেইলার বা বড় ট্রাক চলাচলের উপযোগী কিনা- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, পৃথিবীর কোথাও এক্সপ্রেসওয়েতে গাড়ি অল্প দূরত্বে চলে না। মহাসড়কে মোটরসাইকেল বন্ধের পক্ষে মনির হোসেন পাঠান বলেন, একই লেনে বিভিন্ন গতির গাড়ি চললে দুর্ঘটনা হয়। তাই এক্সপ্রেসওয়েতে লেন পৃথক। বাংলাদেশের যাত্রী ও চালকের মানসিকতা উন্নত দেশের মতো নয়। মহাসড়কে সওজের ৪৬টি পর্যবেক্ষণ ক্যামেরা রয়েছে। তাতে দেখা যায়, মোটরসাইকেল দ্রুতগতির লেনে চলে আসে। বড় গাড়ি এত দ্রুত সরতে পারে না। ফলে দুর্ঘটনা ঘটে।

বর্তমানে পোস্তগোলায় ৪০, ধলেশ্বরীতে ১৮০ এবং আড়িয়াল খাঁতে ৯০ টাকাসহ মোট ৩১০ টাকা টোল দিতে হয় ৪০ আসনের বাসে। এই তিন সেতুতে টোলের বদলে এক্সপ্রেসওয়েতে লাগবে ৪৯৫ টাকা। এতে ১৮৫ টাকা খরচ বাড়ছে। পদ্মা সেতুতে মাঝারি বাসের টোল ২ হাজার টাকা। বন্ধের আগে ফেরিতে টোল ছিল ১ হাজার ৩৫০ টাকা। আগে ফেরি ও তিন সেতু মিলিয়ে টোল দিতে হতো ১ হাজার ৬৬০ টাকা। আগামীকাল থেকে দিতে হবে ২ হাজার ৪৯৫ টাকা। সব মিলিয়ে খরচ বাড়ছে ৮৩৫ টাকা।

আগামী পাঁচ বছর টোল আদায়, এক্সপ্রেসওয়ের রক্ষণাবেক্ষণ এবং ইন্টেলিজেন্ট ট্রাফিক সিস্টেম (আইটিএস) ইন্সটল ও পরিচালনা করে কেইসি ৭১৭ কোটি টাকা নেবে। এর মধ্যে ভ্যাট ও আয়কর ২১৮ কোটি টাকা। তাদের সহযোগী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের টেলিটেল কমিউনিকেশন।

গত ২২ জুন কেইসিকে নিয়োগের অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা কমিটি। আট দিনের প্রস্তুতিতে টোল আদায় করতে পারবে কিনা- এমন প্রশ্নে সওজের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী সবুজ উদ্দিন খান জানান, এক মাস ধরেই কাজ চলছে। সাময়িক সফটওয়্যার তৈরি হয়েছে, যা ম্যানুয়াল ও অটোমেটেডের মাঝামাঝি ধরনের। আগামী ১ জানুয়ারি থেকে টোল আদায় অটোমেশন হবে। আপাতত অস্থায়ী বুথে টোল তোলা হবে। আইটিএসের ফলে দুর্ঘটনার খবর ও ট্রাফিক নিয়ম ভঙ্গের খবর তাৎক্ষণিক পেয়ে হতাহতদের উদ্ধার করা যাবে।

কেইসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক লি হিউং সান জানান, তাঁদের প্রতিষ্ঠান দক্ষিণ কোরিয়ায় ৪ হাজার কিলোমিটারের বেশি এক্সপ্রেসওয়েতে টোল আদায় করছে। চুক্তিতে তিনি ও সবুজ উদ্দিন খান নিজ নিজ পক্ষে সই করেন।