উত্তরা মেইল ট্রেন বন্ধ, বিপাকে যাত্রীরা

ভোক্তাকণ্ঠ ডেস্ক: চালক সংকটে বন্ধ হয়ে গেছে দিনাজপুরের পার্বতীপুর থকে রাজশাহীগামী উত্তরা মেইল ট্রেন। এতে চরম বিপাকে পড়েছেন যাত্রী, কাঁচামাল ব্যবসায়ী ছাড়াও সাধারণ মানুষ। সংকট নিরসন করে আবারও ট্রেনটি চালুর দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

পার্বতীপুর রেল স্টেশন মাস্টার অফিস সূত্রে জানা গেছে, ব্রিটিশ আমলে চালু হওয়া চিলাহাটি থেকে পার্বতীপুর হয়ে রাজশাহীগামী একমাত্র ট্রেন ছিল ৩২ নম্বর ডাউন উত্তরা মেইল। সে সময় এতে এসি বগিও ছিল। পরবর্তীতে তা পার্বতীপুর-রাজশাহী-পার্বতীপুর রুটে চালানো হয়। ট্রেনটি পার্বতীপুর রেল স্টেশন থেকে রাত ৩টা ৩৫ মিনিটে রাজশাহী উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায় এবং সকাল ১০টা ১০ মিনিটে রাজশাহী স্টেশনে পৌঁছে। আবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে রাজশাহী থেকে ছেড়ে রাত ৮টা ৫ মিনিটে পার্বতীপুর রেল স্টেশন আসে।

প্রতিটি স্টেশনে যাত্রা বিরতীর কারণে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠে এটি। স্বল্প দূরত্বের যাত্রায় সড়ক পথের পরিবর্তে এ ট্রেনকে নিরাপদ মাধ্যম হিসেবে বেছে নেন স্থানীয়রা। শুধু তাই নয়, উত্তরা মেইলের মাধ্যমে উত্তরাঞ্চলে কাঁচামাল, আত্রাই থেকে মাছ ও পোনা মাছসহ বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বহন করা হতো। এতে ব্যয় কম হওয়ায় আর্থিক ভাবে লাভবান হতেন ব্যবসায়ীরা। আন্তঃনগর বিভিন্ন ট্রেন চালুর পূর্বে এ অঞ্চলের মানুষের একমাত্র ভরসা ছিল উত্তরা মেইল। চালক সংকটের কারণে বন্ধ করে দেয়া হয় এ ট্রেনের যাত্রা। বর্তমানে ট্রেনটি পার্বতীপুর ইয়ার্ডে তিন নম্বর লাইনে ফেলে রাখা হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ট্রেনচালক জানান, দুই কারণে উত্তরা ট্রেনটি বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছে কর্তৃপক্ষ। তাদের দাবি অনুযায়ী দুই সেট ক্রু দিয়ে ট্রেনটি চালাতে হবে। অর্থাৎ যারা এ ট্রেনটি নিয়ে রাজশাহী যাবেন তারা সেখানে অবস্থান করবেন। ওখান থেকে আরেক সেট ক্রু ট্রেনটি নিয়ে পার্বতীপুরে আসবেন। সেই সঙ্গে রানিং স্টাফদের অবসরে যাওয়ার সময় ফাইনাল সেটেলমেন্ট বেসিকের বাড়তি সাড়ে সাত ভাগ টাকা দিতে হবে। কারণ তারা চাকুরির নির্দিষ্ট সময় ছাড়াও অতিরিক্ত কর্মঘন্টা কাজ করে থাকেন। রেল মন্ত্রণালয় চালকদের এ দাবি মেনে নিলেও অর্থ মন্ত্রণালয় মানেনি। ফলে সকল ট্রেন চালক উত্তরা মেইল ট্রেন না চালানোর সিদ্ধান্ত নেন।

আত্রাইয়ের মাছ ব্যবসায়ী গোলাম নবী বলেন, আমি দীর্ঘদিন যাবত উত্তরাঞ্চলে মাছের ব্যবসা করে আসছি। আত্রাই থেকে মাছ নিয়ে এসে এখানে সাপ্লাই দেই। পরিবহন খরচ কম হওয়ায় এ ট্রেনে মাল আনি। তবে, উত্তরা মেইল বন্ধ হওয়ায় দুই দিন ব্যবসা বন্ধ ছিল। এখন বাধ্য হয়ে বেশি খরচে সড়ক পথে মাল আনতে হচ্ছে।

বিজয় কুমার নামে এক যাত্রী বলেন, তিনি মোটরসাইকেল পার্টসের ব্যবসা করেন। প্রতিদিন এ ট্রেনে হিলি যাই। ট্রেনটি বন্ধ হওয়ায় বিপাকে পড়েছি।

পার্বতীপুর স্টেশন মাস্টার রফিক চৌধুরী বলেন, চালক সংকটের কারণে উত্তরা মেইল ট্রেনটি গত ২৮ জুলাই থেকে বাণিজ্যিক যাত্রা বন্ধ করে দেয়া হয়। অর্থ মন্ত্রণালয় চালকদের (এলএম/এএলএম) দাবি মেনে না নেয়ায় তারা এ ট্রেন চালানোর ক্ষেত্রে অপারগতা প্রকাশ করেন। এটি বন্ধ রেখে তাদের দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ তেলবাহী ওয়াগন অর্থাৎ মালগাড়ি চালানো হচ্ছে। তবে, ট্রেনটি বন্ধ হওয়ায় এলাকাবাসী চড়ম দুর্ভোগে পড়েছেন।