রাইস ব্র্যান অয়েল উৎপাদন ও বিপণনে উৎসাহিত করবে সরকার

সুমন ইসলাম

সয়াবিন তেলের নির্ভরশীলতা কমাতে দেশিয় ভাবে রাইস ব্র্যান অয়েল উৎপাদন, বাজারজাত ও গুণাগুণ নিয়ে প্রচারণায় নামতে যাচ্ছে সরকার। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, আমাদের বার্ষিক চাহিদা ১২-১৩ লাখ মেট্রিক টন ভোজ্যতেল। যার মধ্যে ৮-৯ লাখ মেট্রিক টন ভোজ্যতেলই আমদানি করতে হয়। কিন্তু দেশে সরিষাসহ বিভিন্ন তেলজাতীয় শস্য থেকে মাত্র ৪ লাখ মেট্রিক টন ভোজ্যতেল উৎপাদন করা হয়। এই উচ্চমূল্যের বাজারে ভোজ্যতেলের চাহিদা পূরণ করতে পারে রাইস ব্র্যান অয়েল।

মন্ত্রণালয় সূত্র আরও জানায়, বর্তমানে দেশে ১ লাখ ১৮ হাজার টন রাইস ব্র্যান অয়েল উৎপাদিত হয়। যার কিছু অংশ দেশে বিক্রি হয়, কিছু রপ্তানি হয়।

বাংলাদেশ রাইস মিল অনার্স এসোসিয়েশনের তথ্যানুয়ী, বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় ১৭ হাজারের বেশি রাইস মিল রয়েছে। এর মধ্যে ৬০০টি অটোরাইস মিল এবং ৪০০টি সেমি অটোরাইস মিল। বাকিগুলো ম্যানুয়াল পদ্ধতির রাইস মিল। প্রতিটি অটোরাইস মিল থেকে প্রতিদিন গড়ে ৬ টন ধানের কুঁড়া উৎপন্ন হয়। সেই হিসাবে ৬০০ অটোরাইস মিল থেকে এক দিনে ৩ হাজার ৬০০ টন ধানের কুঁড়া উৎপন্ন হয়। এ হিসাবে বছরে অটোরাইস মিল থেকে ধানের কুঁড়া উৎপন্ন হয় ১৩ লাখ ১৪ হাজার টন।

অন্যদিকে, প্রতিটি সেমি অটোরাইস মিলে প্রতিদিন গড়ে ৩ দশমিক ৮০ টন চালের কুঁড়া উৎপন্ন হচ্ছে। সেই হিসাবে ৪০০টি সেমি অটোরাইস মিল থেকে বছরে ৫ লাখ ৫৪ হাজার ৪০০ টন ধানের কুঁড়া উৎপন্ন হচ্ছে।

এছাড়া, দেশের বিভিন্ন জেলায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ১৬ হাজার সাধারণ রাইস মিল। প্রতিটি সাধারণ রাইস মিল থেকে প্রতিদিন গড়ে এক টন ধানের কুঁড়া উৎপন্ন হয়। সে হিসাবে প্রতিদিন এসব সাধারণ রাইস মিল থেকে ১৬ হাজার টন ধানের কুঁড়া উৎপন্ন হচ্ছে। এ হিসাবে বছরে উৎপন্ন হচ্ছে ২৮ লাখ ৮০ হাজার টন কুঁড়া।

আর সব মিলিয়ে দেশে বছরে চালের কুঁড়া উৎপন্ন হচ্ছে ৪৭ লাখ ৪৮ হাজার ৪০০ টন।

উৎপাদিত এ ধানের কুঁড়াতে তেলের পরিমাণের ওপর ভিত্তি করে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এদের মধ্যে- পালিস, সেমি অটো পালিস, নোটিং পালিস এবং চাকী। পালিসে শতকরা ২৫-২৬ শতাংশ, সেমি অটো পালিসে ১৬-১৮ শতাংশ, নোটিং পালিসে ১৪-১৫ শতাংশ এবং চাকীতে ৮-১০ শতাংশ তেল পাওয়া যায়। এ হিসাবে ধানের কুঁড়া থেকে বছরে ৭ লাখ ১০ হাজার ৮১৬ টন ভোজ্যতেল উৎপাদন করা সম্ভব।

উৎপাদিত এ তেল দিয়ে দেশের চাহিদার ৫০ শতাংশ মেটানো সম্ভব। সে ক্ষেত্রে ৬-৭ লাখ টন ভোজ্যতেল আমদানির কোন প্রয়োজন হবে না।

কৃষি বিপণন অধিদফতরের এক কর্মকর্তা বলেন, ধানের কুঁড়া দিয়ে তেল উৎপাদন নিয়ে অধিদফতরের পক্ষ থেকে একটি গবেষণা করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, দেশে যে পরিমাণ ধানের কুঁড়া উৎপন্ন হয় তা থেকে দেশের চাহিদার অর্থেক তেল উৎপাদন করা সম্ভব। কিন্তু এই গবেষণাটি আমরা আরও আপডেট করছি।

কারণ ৮ ঘণ্টার মধ্যে ধানের কুঁড়া থেকে তেল না বের করা হলে তা নষ্ট হয়ে যায়। কুঁড়া দিয়ে কী পরিমাণ তেল উৎপাদন করা সম্ভব হবে তা আরও ভালো ভাবে জানা যাবে। এ নিয়ে অধিদফতরের পক্ষ থেকে কাজ চলছে।

সূত্র জানায়, বর্তমানে এ খাতে ছয়টি প্রতিষ্ঠান এগিয়ে এসেছে। তারা ১ দশমিক ১৮ লাখ টন তেল উৎপাদন করে বাজারজাত করেছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার (০২ জুন) বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে স্টেকহোল্ডারদের ডাকা হয়েছে। বৈঠকে কিভাবে দেশে রাইস ব্র্যান অয়েলের উৎপাদন বৃদ্ধি, সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা, প্রণোদনা, প্রচারণাসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হবে।

সম্প্রতি বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি জানিয়েছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধির ফলে দেশের বাজারে সয়াবিনের দাম বেড়েছে। এখন আলোচনায় এসেছে এর বিকল্প কি করা যেতে পারে। রাইস ব্র্যান অয়েল নিয়ে ভাবছি আমরা।

তিনি বলেন, দেশে এখন ৫০ থেকে ৬০ হাজার টন রাইস ব্রান্ড উৎপাদন হয়। এটা খুব সহজেই ৭ লাখ টনে উন্নীত করা সম্ভব। সে ক্ষেত্রে রাইস ব্রানের সুফল সম্পর্কে প্রচার করতে হবে। চিকিৎসকদের এ নিয়ে কথা বলতে হবে।