চেক ক্যাশ হয় না আলেশা মার্টের, ভোগান্তিতে গ্রাহকরা

ভোক্তাকন্ঠ ডেস্ক:

ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান আলেশা মার্টের গ্রাহকদর পণ্য দিতে না রারায় অনেককে চেক দেয়া হলেও সেই চেক ক্যাশ করা হচ্ছে না। এমনটাই জানিয়েছেন ভাক্তোভোগীরা।  সাঈদ নামের এক গ্রহক জানান, চলতি বছরের মার্চ মাসে আলেশা মার্ট থেকে একটি মোটরসাইকেল অর্ডার করেন। জুলাই মাসে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মোটরসাইকেল না দিতে পেরে টাকা ফেরতের প্রতিশ্রুতি দেয় প্রতিষ্ঠানটি।

অক্টোবরের ১০ তারিখ উল্লেখ করে আলেশা মার্ট লিমিটেডের অ্যাকাউন্ট থেকে আগস্ট মাসে ১ লাখ ১৮ হাজার টাকার একটি চেকও দেয় তারা। তবে ইসলামী ব্যাংকের বনানী শাখায় গিয়ে শেখ সাইদ জানতে পারেন আলেশার অ্যাকাউন্টে কোনো টাকা নেই।

একই দশা বায়েজিদ নামে আরেক গ্রাহকের। মোটরসাইকেল না দিয়ে ২০২২ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি তারিখ উল্লেখ করে তাকে চেক দিয়েছে আলেশা। এই চেকের টাকা আদৌ পাবেন কি না তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন।

বায়েজিদ বলেন, ‘৭ মাস ধরে চেকের জন্য ঘুরে ঘুরে অবশেষে নভেম্বর মাসে চেক পেলাম। টাকা তোলার তারিখ দিয়েছে ১০ ফেব্রুয়ারি। এ পর্যন্ত কাউকেই পেলাম না যে টাকা ফেরত পেয়েছে বলে জানিয়েছে।

শুধু আলেশা মার্ট না, আলেশা সল্যুশন্সের ডাচ বাংলা ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট এবং এবং আলেশা অ্যাগ্রো লিমিটেডের কর্পোরেট কার্যালয়ের অ্যাকাউন্টের চেক দিলেও তা নগদ করতে পারছেন না তারা।
এভাবে প্রতিদিন শত শত গ্রাহক তাদের পাওনা টাকার আলেশা মার্টের চেক নিয়ে বিভিন্ন ব্যাংকে গিয়ে ফিরে আসছেন। টাকা পাওয়া নিয়ে তাদের মধ্যে এখন শঙ্কা ও ভয় কাজ করছে।

শুধু আলেশা মার্ট না, আলেশা সল্যুশন্সের ডাচ বাংলা ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট এবং এবং আলেশা অ্যাগ্রো লিমিটেডের কর্পোরেট কার্যালয়ের অ্যাকাউন্টের চেক দিলেও তা নগদ করতে পারছেন না তারা।

মো. ইমামুজ্জামান নামে আরেক গ্রাহক বলেন, আমাকে ১৮ অক্টোবর তারিখের চেক দেওয়া হয়েছিল। তবে তাদের অ্যাকাউন্টে টাকা না থাকায় আমি ব্যাংক থেকে ফিরে আসি। পরে তাদের বনানীর অফিসে গেলে তারা জানায়, নতুন তারিখ এসএমএস করে দেওয়া হবে। তারিখ অনুযায়ী আলেশা মার্টের অফিসে গেলে তাদের নগদ টাকা দেওয়া হবে। তবে নভেম্বরের ১৪ তারিখ পর্যন্ত কোনো এসএমএস পাননি ভুক্তভোগী এ গ্রাহক।

নিজেদের ভেরিফায়েড পেজ থেকে আলেশা মার্ট জানায়, ‘গ্রাহকদের সময় ও সহযোগিতা পেলে আলেশা মার্ট সফলভাবে রিফান্ড প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করবে-এই প্রতিশ্রুতিতে বদ্ধ পরিকর।’
আলেশা মার্টের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট রয়েছে, এমন একটি ব্যাংকের বনানী শাখার একজন কর্মকর্তা  বলেন, ‘২/৩ দিন পরপরই আলেশা মার্টের গ্রাহকদের চেক নিয়ে ব্যাংকে দীর্ঘলাইন করে দাঁড়িয়ে থাকেন গ্রাহকরা। তবে তাদের অ্যাকাউন্টে পর্যাপ্ত টাকা না থাকায় আমরা টাকা পরিশোধ করতে পারি না। তাদের কারণে আমাদের ব্যাংকের ইমেজের ওপরেও বিরূপ মনোভাব সৃষ্টি হয়। এব্যাপারে আমরা আলেশা মার্টের সঙ্গে কথা বলেছি। অ্যাকাউন্টে টাকা না রেখে গ্রাহকদের চেক না দেওয়ার অনুরোধ করেছি আমরা।’

চেকের বিষয়ে জানতে চাইলে আলেশা মার্টের দায়িত্বশীল কেউ কথা বলতে রাজী হননি। তবে নিজেদের ভেরিফায়েড পেজ থেকে আলেশা মার্ট জানায়, ‘গ্রাহকদের সময় ও সহযোগিতা পেলে আলেশা মার্ট সফলভাবে রিফান্ড প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করবে-এই প্রতিশ্রুতিতে বদ্ধ পরিকর।’

গত ১৩ নভেম্বর বনানী কার্যালয় থেকে বাজাজ পালসার মোটরসাইকেলের ডেলিভারি দেওয়ার কথা ছিল আলেশা মার্টের। সেদিন তাদের অফিসে গিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কার্যালয়ের নিচে বসে থাকেন গ্রাহকরা। আলেশা মার্টের অফিস ভেতর থেকে বন্ধ থাকলেও সারাদিন কেউ বের হননি অফিস থেকে। কথা বলেননি অপেক্ষারত গ্রাহকদের সঙ্গে।

সাঈদুর রহমান শাকিল নামের একজন গ্রাহক বলেন, ‘আমরা ১৩ তারিখ ৭ ঘণ্টা তাদের বনানী কার্যালয়ের নিচে ছিলাম। আমাদের বলা হলো ভেতরে কেউ নেই, দাঁড়িয়ে লাভ নেই। এরপর গুলশান-বনানী এলাকার যুবক নিজেদের সরকার দলীয় একটি অঙ্গসংগঠনের কর্মী দাবি করে আমাদের সরে যেতে বলে। আমাদের ধাক্কা দিয়ে অফিসের সামনে থেকে সরিয়ে দেয়। যারা বাইক নিতে এসেছিল তারাও পায়নি, চেক নিতে আসারাও পায়নি।’

এদিকে সোমবার ও মঙ্গলবার আলেশা মার্টের তেজগাঁও এবং বনানী অফিস বন্ধ পেয়ে অনেক গ্রাহক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট দেন। তারা পোস্টে লেখেন, আলেশা মার্টের প্রধান কার্যালয়সহ দুটি অফিস বন্ধ। পাওয়া যাচ্ছে না তাদের কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীকে। আলেশা মার্ট টাকা নিয়ে উধাও হয়ে গেছে।

আলেশা হোল্ডিংস লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ও চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঞ্জুরুল আলম সিকদার বলেন, কিছু কিছু সোশ্যাল মিডিয়া আমাদের বিরুদ্ধে ভুল তথ্য ছড়াচ্ছে। আমরা সম্পূর্ণ অপারেশনাল। আমাদের সবগুলো অফিস খোলা। আমরা সবগুলো কাস্টমারকে সাপোর্ট দেওয়ার চেষ্টা করছি। প্রতিদিন অফিস করছি। সাময়িক অসুবিধার জন্য দুঃখিত। আমরা সবার সহযোগিতা চাই।

এদিকে এরইমধ্যে আলেশা মার্টের সন্দেহজনক লেনদেনের বিরুদ্ধে ছায়া তদন্ত শুরু করেছে সিআইডি। সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইমের বিশেষ পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবির বলেন, মোট ৮টি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে সিআইডির ছায়া তদন্ত এখনো চলমান রয়েছে। সেগুলো হচ্ছে- ইভ্যালি, আলেশা মার্ট, সিরাজগঞ্জ শপিং, আলাদিনের প্রদীপ, বুম বুম, কিউকম, আদিয়ান মার্ট ও নিডস ডট কম বিডি।

খবর: ঢাকা পোস্ট