হাতিয়ায় ৫৩৫৫ হেক্টর আলু উৎপাদিত, হতাশ কৃষকরা

ভোক্তাকন্ঠ ডেস্ক: নোয়াখালীর হাতিয়ায় হিমাগার না থাকায় আলু সংরক্ষণ নিয়ে বিপাকে পড়েছেন চাষি ও ব্যবসায়ীরা। এদিকে এ বছর আলুর ফলন ভালো হয়েছে। তবে হিমাগার না থাকায় আলুচাষিরা খেতেই বিক্রি করে দিচ্ছেন। এতে ভালো দাম পাচ্ছেন না কৃষকরা।

উপজেলার বুড়িরচর ইউনিয়নের বড়দেইল গ্রামের পরীক্ষিত বাজারের পূর্ব পাশে বেড়িবাঁধের বাইরে বিস্তীর্ণ ফসলি জমি। এ মাঠে আলু উত্তোলনের কাজ করেছেন কৃষকরা। জমির আইলে লাঙলের টানে বেরিয়ে আসছে সাদা-লাল সারি সারি আলু। কৃষকরা এসব আলু জমি থেকে তুলে গোলা (স্তূপ) করছেন। জমিতে বসেই সেই স্তূপ বিক্রি করে দিচ্ছেন ব্যাপারীর কাছে।

বড়দেইল গ্রামের কৃষক গবিন্দ চন্দ্র দাস বলেন, ১০ বছর ধরে এখানকার জমিতে অন্য ফসলের সঙ্গে আলু চাষ করে আসছি। এবার আড়াই একর জমিতে আলু চাষ করেছি। তাতে প্রায় ৫০০ থেকে ৬০০ মণ আলু হবে। তবে হিমাগার না থাকায় খেতেই বিক্রি করতে হচ্ছে। দাম কম পেলেও নিরুপায় হয়ে বিক্রি করছি।

একই এলাকার আলুচাষি প্রদীপ চন্দ্র দাস (৫০) বলেন, বেড়িবাঁধের বাইরে পুরো এলাকাটা খুবই উর্বর। এখানে অন্য ফসলের চেয়ে আলু চাষ হয় বেশি। ১০ থেকে ১২ বছর ধরে আমরা এখানে আলু চাষ করছি। ফলন ভালো হওয়ায় লাভও ভালো হচ্ছে।
প্রদীপ চন্দ্র দাস আরও বলেন, এবার ফলন ভালো হলেও লাভ কম হবে। কারণ মৌসুমের শুরুতে অসময়ে বৃষ্টি হওয়ায় ক্ষেতের চারা নষ্ট হয়ে গেছে। পরে আমরা পুনরায় চারা রোপণ করেছি। এতে দুবার চাষ করতে গিয়ে সার-বীজসহ খরচ বেশি পড়ে গেছে। অন্যদিকে বিদ্যুৎ না থাকায় হিমাগার নাই এই উপজেলায়। এতে আমরা ভালো দাম পাচ্ছি না।

একই এলাকার আলুচাষি শ্রীরাম চন্দ্র দাসের (৬০) ছেলে সুজিত চন্দ্র দাস আলু তুলছিলেন। তিনি বলেন, জমিতে থাকা বেশির ভাগ আলু তুলে ফেলেছেন। ১০ দিন ধরে আলু তোলার কাজ করছি। দেড় একরে ২২০ মণ হবে বলে আশা করছি। বাড়িতে রাখার জায়গা নেই, তাই সব আলু খেতেই বিক্রি করে দিচ্ছি। এতে দাম কম পাচ্ছি। হিমাগার থাকলে সংরক্ষণ করে বিক্রি করলে আশানুরূপ দাম পেতাম।

বুড়িরচর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ফখরুল ইসলাম বলেন, বড়দেইল গ্রামটি শুধু উপজেলায় নয়, নোয়াখালী জেলার মধ্যে আলু চাষে সেরা। এখানে মাটি উর্বর হওয়ায় প্রচুর পরিমাণে আলু চাষ হয়। তবে হাতিয়ায় কোনো হিমাগার না থাকায় তোলার পরপরই আলু বিক্রি করে দিতে হচ্ছে। এতে দাম অনেক কম পান তারা। সরকারিভাবে একটি হিমাগার স্থাপন করা হলে হিমাগারে রেখে বছরের অন্য সময়ে আলু বিক্রি করতে পারলে আরও অনেক লাভবান হবে। সেই সঙ্গে ভাগ্য বদল হবে এ অঞ্চলের অবহেলিত কৃষকদের।

হাতিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল বাসেদ সবুজ বলেন, উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে আলুর চাষ হয়েছে। তার মধ্যে বুড়িরচর ইউনিয়নের শুধু বড়দেইল গ্রামে চাষ হয়েছে ২০০ হেক্টর। পুরো উপজেলায় চাষ হয়েছে ৩১৫ হেক্টর। আমাদের প্রায় ৯৯ শতাংশ আলু হারভেস্ট করা শেষ। মোট ৫ হাজার ৩৫৫ মেট্রিক টন আলু উৎপাদিত হয়েছে।