হিমাগারের আলু নিয়ে বিপাকে জয়পুরহাটের চাষি-ব্যবসায়ী

দাম কমের কারণে হিমাগারে সংরক্ষণ করা আলু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন জয়পুরহাটের চাষি, ব্যবসায়ী ও হিমাগার মালিকরা।

এলাকার কৃষক, ব্যবসায়ী ও হিমাগার সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অনুকূল আবহাওয়া থাকায় গত বছর আলুর বাম্পার ফলন হয়েছে। কৃষক ও ব্যবসায়ীরা অধিক লাভের আশায় বিক্রি না করে আলু হিমাগারে সংরক্ষণ করেন। ফলে গত বছরের তুলনায় হিমাগারে আলুর সংরক্ষণ এবার বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। যার প্রভাব পড়েছে চলতি মৌসুমে। হিমাগারে আলুর দাম কমেছে, পাশাপাশি কমেছে আলুর আনলোডের (খালাস) পরিমাণও।

আলু ব্যবসায়ী ও কৃষকরা জানান, ৬০ কেজির প্রতি বস্তা আলু ক্রয়, হিমাগার ভাড়াসহ আনুষঙ্গিক খরচ মিলে দেশীয় জাতের আলু সংরক্ষণ বাবদ খরচ হয়েছে ১ হাজার ২০০ টাকা। প্রতি বস্তা উফশী জাতের আলুতে খরচ পড়েছে এক হাজার ৫০ টাকা। কিন্তু বর্তমানে প্রতি বস্তা দেশীয় জাতের আলু সর্বোচ্চ ৬০০ ও উফশী জাতের আলু সর্বোচ্চ ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

কালাই উপজেলার মাদারপুর গ্রামের লোকমান হোসেন, বাদাউচ্চ গ্রামের মাজহারুল ইসলাম, মাদাই গ্রামের বেলাল হোসেনসহ অনেক আলু চাষী জানান, বাজার নিম্নমুখী হওয়ায় দুশ্চিন্তায় রয়েছি। হিমাগারে মজুত করা প্রতি বস্তা আলুতে ৪০০-৫০০ টাকা লোকসান গুণতে হচ্ছে।

কালাই উপজেলার মোলামগাড়ি হাটের আলু ব্যবসায়ী মজিবর রহমান মোহসিন বলেন, সংরক্ষণ মৌসুমে অনেকে হিমাগার মালিকদের কাছ থেকে শতকরা ২০-২৪ শতাংশ সুদে ঋণ নিয়ে আলু কিনে রাখেন। এখন বাজার পড়ে যাওয়ায় তাদের দিশেহারা অবস্থা। হিমাগার মালিকদের থেকে নেওয়া ঋণ কীভাবে পরিশোধ করবেন তা ভেবে পাচ্ছেন না। গত বছর দাম বেশির কারণে বাজার নিয়ন্ত্রণ করলেও এবার লোকসান ঠেকাতে সরকারের কোনো নজরদারি নেই।

কালাই উপজেলার আলু রপ্তানিকারক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ‘সূচি এন্টারপ্রাইজের’ স্বত্বাধিকারী মো. সুজাউল ইসলাম বলেন, ৯ বছর ধরে সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, জাপান, মালয়েশিয়া, সৌদি আরব, কুয়েত, দুবাই, নেপাল ও রাশিয়ায় আলু রপ্তানি করছি। এবার করোনার কারণে বিদেশি ব্যবসায়ী ও সরকার আলু নিতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না।

কালাই উপজেলার সালামিন ফুডস লিমিডেটের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রতন কুমার, মোলামগাড়ি হাট নর্থপোল কোল্ড স্টোরেজের ব্যবস্থাপক মনোয়ার হোসেন, পুনট কোল্ড স্টোরেজের ব্যবস্থাপক বিপ্লব কুমার ঘোষসহ হিমাগার সংশ্লিষ্টরা জানান, আলুর দাম না থাকায় কৃষক ও ব্যবসায়ীরা আলু নিতে আসছেন না। ফলে সংরক্ষণের অর্ধেকেরও বেশি আলু হিমাগারেই রয়েছে। ৬০ ভাগ আলু এখনো হিমাগারেই। অথচ হিমাগার খালি করার সময়সীমা ১৫ নভেম্বর।

এ ব্যাপারে জয়পুরহাট জেলা মার্কেটিং কর্মকর্তা সাখাওয়াত হোসেন বলেন, গত বছর ত্রাণ হিসেবে বিপুল পরিমাণ আলু কেনায় কৃষকের লাভ হয়েছিল। এবারও বিকল্প ব্যবস্থায় আলু কেনার কথা ভাবা হচ্ছে।

জয়পুরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) বাবলু কুমার সূত্রধর বলেন, জেলার ১৭ হিমাগারে সংরক্ষিত আলুর পরিমাণ প্রায় এক লাখ ৯০ হাজার মেট্রিক টন। গত বছর দাম বেশি পাওয়ায় এবার আলু সংক্ষরণও বেশি হয়েছে। দাম না পেলে কৃষক ক্ষতিতে পড়বেন। ফলে আগামী মৌসুমে আলু উৎপাদন ব্যাহতের সম্ভাবনা রয়েছে।