এক দাবি, সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বৃদ্ধি

ভোক্তাকন্ঠ ডেস্ক:

সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছেন চাকরিপ্রত্যাশীরা। দাবি আদায়ে সংবাদ সম্মেলন, মানববন্ধন, বিক্ষোভ-সমাবেশ, কর্তৃপক্ষ বরাবর স্মারকলিপি পেশ, শাহবাগ মোড় অবরোধসহ বেশকিছু কর্মসূচিও পালন করেছেন তারা।

শুরুর দিকে কয়েকটি সংগঠন একসঙ্গে আন্দোলন করলেও ধীরে ধীরে বিভক্ত হয়ে পড়েন আন্দোলনকারীরা। আন্দোলনে অংশ নেওয়া বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র পরিষদ দুই ভাগ হয়ে যায়। একাংশের নেতৃত্ব দেন ইমতিয়াজ হোসেন। অন্য অংশের নেতৃত্বে আলামীন রাজু ও ইউসুফ জামিল প্রমুখ। এছাড়া আলাদা হয়ে দুই পক্ষের কর্মসূচিতে সমর্থন দেয় বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র কল্যাণ পরিষদ। তারা সবাই নিজ নিজ সংগঠনের ব্যানারে চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন।

মহামারি করোনার কারণে চাকরির নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি না হওয়ায় দুই বছর সময় নষ্ট হয়েছে— উল্লেখ করে চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩২ করার দাবিতে আন্দোলন শুরু করে সর্বদলীয় চাকরিপ্রত্যাশী ঐক্য পরিষদভুক্ত সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য পরিষদ ও চাকরিপ্রত্যাশী যুব প্রজন্ম। এর নেতৃত্বে ছিলেন মানিক হোসেন রিপন, সাজিদ সেতু, রিগান মাহমুদ, ওমর ফারুক, মিলন প্রমুখ। পরে তাদের সঙ্গে যোগ দেন বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র পরিষদের একাংশের সভাপতি ইমতিয়াজ হোসেন।

তারা ‘বয়সসীমা’ উল্লেখ না করে শুধুমাত্র চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা স্থায়ীভাবে বাড়ানোর দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন। এছাড়া তাদের তিনটি দাবি ছিল। দাবিগুলো হলো- নিয়োগ দুর্নীতি ও জালিয়াতি বন্ধ করতে হবে, নিয়োগ পরীক্ষার (প্রিলিমিনারি ও লিখিত পরীক্ষা) প্রাপ্ত নম্বরসহ ফল প্রকাশ করতে হবে; চাকরিতে আবেদনের ফি সর্বোচ্চ ১০০ টাকা করতে হবে এবং একই সময়ে একাধিক নিয়োগ পরীক্ষা বন্ধ করে সমন্বিত নিয়োগ পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে।

আমাদের সঙ্গে যারা আন্দোলন করছেন তাদের বেশির ভাগেরই বয়স ৩০ পার হয়েছে। তাদের কেউ চাকরিতে ঢোকার বয়স ৩৫ এবং অবসরে যাওয়ার বয়স ৬১ নিয়ে কাজ করতে চাইছেন। তবে প্রধানমন্ত্রী যেহেতু ৩৫ বছর বয়সটা নেগেটিভলি নিয়েছেন, তাই আমরা ৩৫ নয়; ৩২-এর দাবিতে আন্দোলন করেছি

তবে দীর্ঘদিন আন্দোলন পরিচালনা করেও তারা সফল হননি। এরই মধ্যে আবারও ভাঙনের সুর। একটি অংশ চায় চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩২ হলেও চলবে। এ অংশে আছেন মানিক, রিগান, ওমর ও মিলন। অন্যপক্ষের সাফ কথা ৩৫-ই করতে হবে। এ অংশে আছেন ইমতিয়াজ হোসেনের সাধারণ ছাত্র পরিষদের নেতারা। যারা চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩৫ চান। তারা এরই মধ্যে মানিক, রিগান, ওমর ও মিলনের নেতৃত্ব মানতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র পরিষদের একাংশের সভাপতি ইমতিয়াজ হোসেন বলেন, ‘করোনার কারণে দুই বছর পিছিয়ে যাওয়ায় অনেকেই বয়সসীমা ৩২ চাই দাবিতে আন্দোলন করেছিল। এখন তো করোনার সমস্যা নেই, সার্কুলারও হচ্ছে নিয়মিত। তাই এখন ৩২ দাবির যৌক্তিকতা নেই। তারপরও তারা এ দাবিতে অটল রয়েছে। কিন্তু যারা ৩৫ চেয়ে আন্দোলন করছেন, তারা এটা মানছেন না। আবার তাদের মধ্যে দু-একজন ছাড়া বাকিরা ৩৫-এর পক্ষে। বিষয়টি নিয়ে সূক্ষ্ম একটা মতভেদ তৈরি হয়েছে। আমরাও চাই ৩৫ বছর করা হোক। সামনের আন্দোলন ৩৫-এর দাবিতেই হবে।’

জানতে চাইলে সর্বদলীয় চাকরিপ্রত্যাশী ঐক্য পরিষদের সমন্বয়কারী মানিক হোসেন রিপন বলেন, আমাদের সঙ্গে যারা আন্দোলন করছেন তাদের বেশির ভাগেরই বয়স ৩০ পার হয়েছে। তাদের কেউ চাকরিতে ঢোকার বয়স ৩৫ এবং অবসরে যাওয়ার বয়স ৬১ নিয়ে কাজ করতে চাইছেন। তবে প্রধানমন্ত্রী যেহেতু ৩৫ বছর বয়সটা নেগেটিভলি নিয়েছেন, তাই আমরা ৩৫ নয়; ৩২-এর দাবিতে আন্দোলন করেছি। পরে সবাই যাতে একই প্ল্যাটফর্মে আসতে পারেন, সেজন্য আমরা চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বৃদ্ধির আন্দোলন শুরু করি, যেখানে বয়সসীমার উল্লেখ ছিল না।

‘আমরা রাজু-জামিলদের (বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র পরিষদ) সঙ্গে বসেছি। তারা বলেছেন, ইমতিয়াজ হোসেনরা থাকলে আমাদের সঙ্গে থাকবেন না তারা। এখন আবার তারা এক হতে চাচ্ছেন। আমরা সবাইকে নিয়েই আন্দোলন করতে চাই।’

তিনি আরও বলেন, আমাদের সঙ্গে আন্দোলন করেছেন, এমন অনেকের বয়স ৩২ বছর পার হয়েছে। তারা কিন্তু হতাশ। এ কারণে এখন তারা ৩৫ চাচ্ছেন। যেহেতু বেশির ভাগই ৩৫ চাচ্ছেন, সবার সঙ্গে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র পরিষদ ও বাংলাদেশ ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এবং স্বদেশী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী আলামীন রাজু বলেন, ‘একসঙ্গে আন্দোলন করার জন্য আমরা তাদের বারবার বলেছি। কিন্তু তারা বিভিন্নভাবে বিষয়টি এড়িয়ে গেছেন। সব গ্রুপ মিলে আমরা এখন একটা গ্রুপে পরিণত হয়েছি। তাদেরও আমন্ত্রণ জানিয়েছি। আমরা ৩৫ নিয়েই আন্দোলন শুরু করেছি, এটার বিকল্প আমরা চিন্তা করি না।’

বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র কল্যাণ পরিষদের প্রধান সমন্বয়ক মুজাম্মেল মিয়াজী বলেন, করোনার কারণে আমাদের আন্দোলনে কিছুটা ধীরগতি ছিল। আমাদের মধ্যে যেহেতু বিভাজন ছিল, অনেকে গ্রুপিং করে ওই সময় আন্দোলন করছে। আমরা কিন্তু সরাসরি আন্দোলনে না গিয়ে তাদের আন্দোলনে একাত্মতা পোষণ করেছি। এখন আমরা শুরু করব, ইনশাল্লাহ।

‘করোনার মধ্যে যারা চাকরির আবেদন করতে পারেনি, তাদের একটি অংশ বয়সসীমা ৩২ চান। আমরা যারা সামগ্রিকভাবে আন্দোলন করছি, তারা শুরু থেকেই ৩৫-এর দাবিতে আন্দোলন করে আসছি এবং এখনও এ দাবিতে অটল আছি।’

১৯৯১ সালে চাকরিতে প্রবেশের বয়স শেষবার ২৭ থেকে করা হয় ৩০ বছর। তখন ১৯৯১ সালে গড় আয়ু ছিল ৫৭ বছর। এরপর ২০১১ সালে এসে অবসরের বয়স বেড়ে হয় ৫৯, আর মহান মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য হয় ৬০। অবসরের এ দু-তিন বছর বাড়ার কারণে এ সময় তেমন চাকরি নিয়োগের সার্কুলার হয়নি।

১৯৯১ থেকে ২০২১— এই ৩০ বছরে গড় আয়ু ১৬ বছর বেড়ে হয়েছে ৭৩ বছর। কিন্তু চাকরিতে প্রবেশের বয়স বাড়েনি। অবসরের বয়স যেহেতু দুই বছর বেড়েছে, সে ক্ষেত্রে চাকরিতে প্রবেশের বয়স দুই বছর বাড়ালে সেটাও আর সাংঘর্ষিক হয় না— দাবি চাকরিপ্রত্যাশীদের।