ধর্মঘটের অযুহাত, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজারে অস্থিরতা 

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা:

বেশ ক’মাস ধরে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজারে দাম নিয়ে চলছে অস্থিরতা। জরুরি পণ্যগুলোরই দাম বেড়েছে দফায় দফায়। এর মধ্যে হঠাৎ জ্বালানি তেল ও গ্যাসের দাম বৃদ্ধির সিদ্ধান্তে বাজারে যেন আগুন লেগেছে। শনিবার সকাল থেকেই প্রতিটি পণ্যের দাম কিছুটা বেড়েছে ৫ টাকা থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে পরিবহন ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় প্রভাব ফেলছে দ্রব্যমূল্যে। ধর্মঘটের কারণে পণ্যবাহী যান চলাচল বন্ধ থাকায় পণ্য সরবরাহে বিঘ্ন ঘটছে। এতেই পণ্যের দাম আরও বেড়ে যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এতে বিশেষ করে নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষ বড় ধরনের ভোগান্তির মুখে পড়বে।

শনিবারের মতো রোববারও রাজধানীর কারওয়ান বাজার, মালিবাগ, মগবাজার, সেগুনবাগিচা, বাড্ডা, যাত্রাবাড়ী, ভাষাণটেক, মাটিকাটাসহ বিভিন্ন পাইকারি ও খুচরা বাজার ঘুরে দেখা যায়, আলু, পটোল, টমেটো, গাজর, কাঁচা মরিচসহ বেশির ভাগ সবজির দাম পরিবহন ধর্মঘটের আগের তুলনায় পাঁচ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।

কারওয়ান বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, সবজি বেশি আসে নরসিংদী, বগুড়া, খুলনা, সাতক্ষীরাসহ অন্যান্য অঞ্চল থেকে। আগে যে ট্রাকের ভাড়া ছিল ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা, এখন সে ট্রাকের ভাড়া সাড়ে ১৩ হাজার থেকে ১৮ হাজার টাকা। সেই বাড়তি ভাড়া পণ্যের সঙ্গে যোগ করেই পাইকারি বাজারে দাম নির্ধারণ করা হচ্ছে। তাই দাম কিছুটা বেড়েছে। অনেক ব্যাপারী লোকসানের ভয়ে সবজি আনেন না।

ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে, গত বছর করোনার শুরুতে যে দাম বাজারে ছিল তার চেয়ে এখন সব ধরনের পণ্যে ২০ থেকে ৪৫ শতাংশ বেশি। গেল দুই সপ্তাহে বাজারে বেড়েছে পেঁয়াজ, মসুর ডাল, ব্রয়লার মুরগি, ডিম ও সবজির দাম। পেঁয়াজের দাম মোটামুটি দ্বিগুণ হয়ে গেছে। যে দেশি পেঁয়াজ ৪০ টাকা কেজিতে কেনা যেত, তা কিনতে এখন ৭০ টাকা লাগছে। ১২৫ টাকার ব্রয়লার মুরগি এখন দাঁড়িয়েছে ১৮০ টাকায়।

বেড়েছে নিত্যব্যবহার্য বিভিন্ন পণ্যের দামও। মাস তিনেক আগে বাজারে ১০০ গ্রাম ওজনের একটি সাবানের দাম ছিল ৩৫ টাকা। সেটা এখন ৪০ টাকায় বিক্রি করছে তারা। বেড়েছে ডিটারজেন্ট, টুথপেস্ট, নারকেল তেল, শৌচাগারে ব্যবহার করা টিস্যুসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম। সুপরিচিত আরেকটি ব্র্যান্ডের এক প্যাকেট টিস্যুর দাম ছিল ১৭ টাকা, যা এখন ২০ টাকায় কিনতে হচ্ছে।

রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, বাজারে প্রায় সব ধরনের সবজির দামই বেড়ে গেছে। দুই দিন আগে যে বেগুন ৫০-৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে, সেই বেগুন এখন ৭০-৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া যে সাইজের ফুলকপি দুইদিন আগে ৩০ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছে, সেগুলো এখন ৪০ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কোথাও কোথাও আবার ৫৫-৬০ টাকাও চাওয়া হচ্ছে।

দুইদিন আগে বাজারগুলোতে শিম বিক্রি হয়েছে ১২০-১৩০ টাকায়, একই মানের শিম গতকাল বিক্রি হয়েছে ১৩০ থেকে ১৪০ টাকায়। কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে বাড়তি দামে। বেড়েছে পেঁয়াজের দামও। দুইদিন আগে খুচরা বাজারে দেশি পিয়াজ কেজিতে ৫০-৫৫ টাকায় পাওয়া গেছে। তবে গতকাল একই মানের পেঁয়াজ বিক্রেতাদের ৬০-৬৫ টাকা দাম চাইতে দেখা যায়। এ ছাড়া গতকাল খুচরা বাজারগুলোতে ঢেঁড়স কেজিতে ৫০ থেকে ৬০ টাকা, টমেটো ১২০ থেকে ১৩০ টাকা, গাজর ১২০ থেকে ১৬০ টাকা, বরবটি ৫০ থেকে ৬০ টাকা, পটল ৪০ থেকে ৫০ টাকা, মূলা, চিচিঙ্গা ও ঝিঙে ৪০ থেকে ৫০ টাকা, করলা ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। এসব সবজির মধ্যে বেশির ভাগ সবজিই একদিন আগে মান ও প্রকারভেদে কেজিতে প্রায় ৫ থেকে ১০, ১৫ টাকা কমে পাওয়া গেছে।

ক্রেতা মামুনুর রশিদ বলেন, শনিবার তো সবজি কিনতেই পারি নাই। হঠাৎ এতো দাম যে বাড়বে সেটা কল্পনাও করতে পারিনি। শুধু সবজি নয়, বাজারে তো এখন কোনো কিছুই আর সস্তা নাই। দিন দিন শুধু দাম বাড়ছে তো বাড়ছেই। এসব দেখার কেউ নাই।

শাহজহানপুর এলাকার ব্যবসায়ী আনোয়ার মিয়া জানান, পাইকারিতে দাম বাড়ালে তাদের করার কিছু থাকে না। তিনি বলেন, আমরা তো আর লস দিয়ে বিক্রি করতে পারবো না। পাইকারি বাজার নিয়ন্ত্রণ করার কথাও বলেন তিনি।

কনজ্যুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, জ্বালানি তেলের দাম বাড়লে পরিবহন ব্যয় বেড়ে যায়। সাধারণত দেখা যায় অক্টোবর মাসে শাক-সবজির দাম চড়া থাকে। তারপর শীতের মৌসুমে সবজির সরবরাহ বাড়লে দাম কমে যায়। তখন বাজারে একটু স্বস্তি নামে। এবারো অক্টোবর মাসে দাম চড়া ছিল। যে সময় শীতের সবজি বাজারে আসছে। দামও কমের দিকে যাচ্ছে। এমন সময় জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি করায় ভোক্তাদের মধ্যে যে স্বস্তি আসার কথা ছিল, সেটি সম্ভবত আর আসবে না। বরং দাম আরও বাড়বে এবং মানুষের জীবন যাত্রার ব্যয় বেড়ে আরও দুর্বিষহ হয়ে উঠবে। অসহনীয় হয়ে উঠবে।