বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাবের গণশুনানীতে ক্যাবের প্রশ্ন

ভোক্তাকণ্ঠ ডেস্ক:
পিডিবি’র বিদ্যুতের বাল্ক মূল্যহার বৃদ্ধির প্রস্তাব ও বিইআরসি’র টেকানক্যাল কমিটির (টিসি’র) সে-প্রস্তাবের মূল্যয়ন প্রতিবেদনের ওপর বিইআরসি আয়োজিত গণশুনানীতে ক্যাবের

প্রশ্নমালা
১.সরকারি মালিকানাধীন উৎপাদন, সঞ্চালন, ও বিতরণ ইউটিলিটি কোম্পানীসমূহের প্রায় প্রতিটির শতভাগ শেয়ারের মালিক কি পিডিবি? ওই সব কোম্পানীর জবাবদিহিতা ও দায়বদ্ধতা পিডিবি’র নিকট কিভাবে নিশ্চিত হয়?

২.২০২১-২২ অর্থবছরে বাল্ক (পাইকারি) বিদ্যুতে আর্থিক ঘাটতি প্রায় ৩০,২৫২ কোটি টাকা।বিদ্যমান বাল্ক মূল্যহার ৫.১৭ টাকা। মূল্যহার ঘাটতি বিবেচনায় নিয়ে বাল্ক বিদ্যুতের রাজস্ব চাহিদা প্রাক্কলন করা হয়েছে এবং মূল্যহার ৮.৫৮ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। ঘাটতি সমন্বয়ে সরকারি ভতুর্কি বিবেচনা করা হয়নি। সরকার কি ভর্তুকিপ্রদানে সম্মত নয়?

৩.প্রস্তাব পর্যালোচনায় দেখা যায়, বাল্ক বিদ্যুৎ সরবরাহের বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যয় কমিয়ে ঘাটতি কমানোর কোন কৌশল প্রস্তাব করা হয়নি। কেবলমাত্র মূল্যহার বৃদ্ধি দ্বারা ঘাটতি সমন্বয়ের প্রস্তাব করা হয়েছে। ব্যয় কমিয়ে ঘাটতি কমানোর কি কোন সূযোগ নেই?

৪.বিদ্যুৎ উৎপাদনে নির্ধারিত বিইআরসি কর্তৃক নির্ধারিত গড়ে ১৩২০ এমএমসিএফডি গ্যাস সরবরাহ না হওয়ায় তরল জ্বালানি তথা ফার্ণেসওয়েল-এর ব্যবহার বৃদ্ধি হওয়ায় ভর্তুকি বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৯-২০ এবং ২০২০-২১ অর্থবছওে এ-ক্ষেত্রে বর্ধিতভর্তুকি বা ঘাটতির পরিমান কত?
৫.২০১৯ সালে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির আদেশ মতে গড়ে ৮৫০ এমএমসিএফডি এলএনজি সরবরাহ হতে হবে। এই পরিমান অপেক্ষা এলএনজি কম সরবরাহ হওয়ায় ২০১৯-২০ এবং ২০২০-২১ অর্থবছরে ভর্তুকির পরিবর্তে গ্যাসে রাজস্ব উদ্বৃত্ত থাকে যথাক্রমে ৭,২৮৪.৩ এবং ৭,৬৪৮.৮ কোটি টাকা। ফলে তরল জ্বালানি তথা ফার্ণেসওয়েল-এর ব্যবহার বৃদ্ধিতে বিদ্যুৎ উৎপাদনে রাজস্ব ঘাটতি বৃদ্ধি পায়। সে-ঘাটতি গ্যাসে উদ্বৃত্ত্ব রাজস্ব দ্বারা সমন্বয়ের প্রস্তাব মন্ত্রণালয় কিংবা বিইআরসি অথবা অন্য কোন পর্যায় থেকে করা হয়েছিল কিনা?

৬.২০২০ সালে বিদ্যুতের বাল্ক মূল্যহার বৃদ্ধির আদেশে ৪৫ টাকা জ্বালানি ব্যয়হারে ফার্ণেসওয়েলভিত্তিক বিদ্যুতের উৎপাদন ব্যয়হার নির্ধারণ করা হয়।বিইআরসি’র লাইসেন্সী হওয়া সত্ত্বেও বিইআরসি’র পরিবর্তে বিপিসি নিজেই পরবর্তিতে ফার্ণেসওয়েলের মূল্যহার নির্ধারণ করে। বর্তমানে সে-মূল্যহার ৭৪ টাকা।অতএব এই মূল্যহারে যদি বিইআরসি ফার্ণেসওয়েলভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনে জ্বালানি ব্যয় বিবেচনায় নিয়ে বিদ্যুতের বাল্ক মূল্যহার নির্ধারণ করে, তাহলে বিইআরসি নিজেই নিজের আইন লংঘন করার দায়ে কি অভিযুক্ত হবেনা?

৭.মূল্যহার বৃদ্ধির প্রস্তাবে ২০২১-২২ অর্থবছরে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ফর্ণেসওয়েল ব্যবহার হবে (ক) পিডিবিসহ সরকারি, আইপিপি, ও কুই্যক রেন্টাল প্লান্টসমূহে যথাক্রমে ৬১৬.৩, ১৩৩, ও ৪০৪১.৭২ মিলিয়ন লিটার। কোন কোন ক্ষেত্রে কত কত মূল্যহারে কি কি প্রক্রিয়ায় উক্ত জ্বালানি সরবরাহ হয়?

৮.২০২০ সালে বিদ্যুতের বাল্ক মূল্যহার পরিবর্তন আদেশের ৮.১০ নং আদেশ:
“তেলীভত্তক রেন্টাল এবং কুই্যক বিদ্যুৎ কেন্দ্রসমূহের বিদ্যুৎ ক্রয়চুক্তির
মেয়াদকাল শেষ হবার পর পুনরায় মেয়াদ বৃদ্ধি করা যাবেনা।”
উক্ত আদেশ এখনও বলবৎ আছে। ফলে রেন্টাল এবং/বা কুই্যক রেন্টাল বিদ্যুৎ ক্রয় বাবদ ব্যয় সমন্বয়ে উক্ত মূল্যহার নির্ধারণের কোন সুয়োগ কিবিইআরসি’র আছে?

৯.২০২১ সালের ১৭ জুন তারিখে বিইআরসি’কে প্রদত্ত ৩৫০ নং পত্রে বিদ্যুৎ বিভাগ ফার্ণেসওয়েলভিত্তিক ৫টি রেন্টাল/কুই্যক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের মেয়াদ বৃদ্ধির বিষয়ে অনাপত্তি প্রদানের অনুরোধ জানায়। জবাবে বিইআরসি জানায়,‘অনাপত্তি জ্ঞাপনের জন্য বিইআরসি আইন, ২০০৩-এর ধারা ৩৪মতে গণশুনানীর ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ অপরিহার্য।’ অথচ উক্ত সিদ্ধান্ত ব্যতিত মূল্যহার বৃদ্ধির প্রস্তাব মতে কুই্যক রেন্টাল থেকে ফার্ণেসওয়েলভিত্তিক বিদ্যুৎ কেনা হবে ৫৯৯.৮ মিলিয়ন ইউনিট। এই ব্যয় সমন্বয়ে বিদ্যুতের ব্লাক মূল্যহার নির্ধারণ করার কোন সুযোগ কি বিইআরসি’র আছে?

১০.বিদ্যুৎ বিভাগেরপত্রেরজবাবে রেন্টাল/কুই্যক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রসমূহে জ্বালানী সরবরাহকারী ও মূল্য পরিশোধকারী এবং এ-সব বিদ্যুৎকেন্দ্রের জ্বালানি দক্ষতা সম্পর্কিত তথ্যদি বিদ্যুৎ বিভাগের নিকট চাওয়া হয়। সেই সাথে এসব বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিদ্যুৎ গ্রহণের ক্ষেত্রে ‘ইকনমিক মেরিট ওডার’ অনুসরণ বিষয়ক তথ্যাদিও চাওয়া হয়। কিন্তু এ-সব তথ্যদি পাওয়া যায়নি। তা কি পিডিবি’র নিকট থেকে পাওয়া সম্ভব?

১১.উক্ত বিদ্যুৎকেন্দ্রসমূহের মেয়াদ বৃদ্ধি এবং চুক্তি নবায়নের যুক্তিতে বিদ্যুৎ বিভাগ বলেছে, যেহেতু উক্ত বিদ্যুৎকেন্দ্্রসমূহ হতে বিদ্যুৎ ক্রয়ে ক্যাপাসিটি পেমেন্ট/চার্জ প্রদান করতে হবেনা বিধায় বিদ্যুতের ক্রয় মূল্যহার কমে আসবে ও আর্থিক সাশ্রয় হবে এবং যেহেতু উক্ত বিদ্যুৎকেন্দ্রসমূহ ‘সিস্টেম ফ্রিকোয়েন্সিরক্ষা ও রিলাইয়েবিলিটি বৃদ্ধি’ করবে; সেহেতু আর্থিক সাশ্রয় ও ‘সিস্টেম ফ্রিকোয়েন্সিরক্ষা ও রিলাইয়েবিলিটি বৃদ্ধি’ সংক্রান্ত ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণধর্মী একটি প্রতিবেদন বিইআরসি’র প্রদত্ত জবাবে বিদ্যুৎ বিভাগের নিকট চাওয়া হয়। সে প্রতিবেদনও পাওয়া যায়নি। পিডিবি’র নিকট থেকে কি তেমন কোন প্রতিবেদন পাওয়া সম্ভব?

১২.২০২০ সালের আদেশে বিইআরসি ডিজেলের মূল্যহার ৬৫ টাকা সমন্বয় করে বিদ্যুতের ব্লাক মূল্যহার নির্ধারণ করে। পরবর্তিতে জ্বালানি বিভাগ উক্ত মূল্যহার পরিবর্তন করে ৭৮ টাকা নির্ধারণ করার কারণে বিইআরসি আইনের ধারা ৩৪লংঘন ও বিইআরসি’র এখতিয়ার খর্ব হয়। তাই ক্যাব উক্ত মূল্যহার নির্ধারণ কর্তৃত্ত্ব চ্যালেঞ্জ ও মূল্যহার রিভিউ সংক্রান্ত একটি রীট মামলা হাইকোর্টে দায়ের করে। মামলাটি নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত জ্বালানি বিভাগ কর্তৃক নির্ধারিত ওই বিতর্কিতমূল্যহার সমন্বয়ে বিদ্যুতের বাল্ক মূল্যহার নির্ধারণ কি ন্যায্য ও যৌক্তিক?

১৩.মূল্যহার বৃদ্ধির প্রস্তাবে বলা হয়েছে, জুন/২০২০ থেকে ফার্ণেসওয়েল আমদানি পর্যায়ে শুল্ক ও করাদি অব্যাহতি সুবিধা প্রত্যাহার করায় এ-জ্বালানিতে ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে ৩৪%। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যবৃদ্ধি অব্যাহত থাকার কারণে শুল্ক-করাদি বাবদ ব্যয় বৃদ্ধি অব্যাহত আছে। ফেব্রুয়ারী/২০২০ বিদ্যুতের বাল্ক মূল্যহার বৃদ্ধির আদেশে ফার্ণেসওয়েলের মূল্যহার ৪৫ টাকা ধরা হয়। তখন শুল্ক ও করাদি অব্যাহতি সুবিধা ছিল। এখন নেই। এখন সে-মূল্যহার ৭৪ টাকা। এই মূল্যহারে শুল্ক ও করাদির পরিমান কত টাকা? প্রস্তাবে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত ফর্ণেসওয়েলের পরিমান ও মূল্য কত কত ধরা হয়েছে এবং তাতে শুল্ক ও করাদি বাবদ ব্যয় কত?

১৪.জুলাই/২০১৯ হতে কয়লায় ০৫% ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে। আবার আন্তর্জাতিক বাজারে কয়লার মূল্যবৃদ্ধি অব্যাহত আছে। বতর্মান টাকার মূল্যমানে টনপ্রতি আমদানিকৃত কয়লার মূল্য কত? তাতে ভ্যাট, শুল্ক ও করাদির পরিমানসমুহ কত? ২০২১-২২ অর্থবছরে কয়লা বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত কত টন কয়লা কত মূল্যে আমদানি হবে? তাতে ভ্যাট, শুল্ক ও করাদি বাবদ কত ব্যয় হবে?

১৫.২০২১-২২ অর্থবছরে কত ইউনিট কয়লা ও গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ কত কত মূল্যহারে আমদানি হবে? তাতে ভ্যাট, শুল্ক ও করাদি বাবদ কত ব্যয় হবে?

১৬.কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ আমদানি ব্যয়হার ৬.৬০ টাকা হলে, দেশীয় কয়লায় উৎপাদিত বিদ্যুতের উৎপাদন ব্যয়হার ৮.৭১ টাকা হওয়া কি ন্যায়সংগত?

১৭.২০২১-২২ অর্থবছরে দেশীয় কয়লায় বিদ্যুৎ উৎপাদনে কত টন কয়লা কত মূল্যহারে ক্রয় করা হয়? কয়লা ক্রয়ের ক্ষেত্রে পিডিবি ও কয়লা খনি কোম্পানির ক্রয মূল্যহারে তারতম্য কি ন্যায্য ও যৌক্তিক? তাতে ভ্যাট, শুল্ক ও করাদি বাবদ কত ব্যয় হবে?

১৮.ব্যক্তি খাত বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত তরল জ্বালানি আমদানির সূযোগ তাদেরকে না দিয়ে বিপিসি’কে দিয়ে আমদানি করা হলে ২০২১-২২ অর্থবছরে কি পরিমান অর্থ সাশ্রয় হবে?

১৯.২০২১-২২ অর্থবছরে পিডিবি, পায়রা ও রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রে প্রতি একক বিদ্যুৎ উৎপাদনে কয়লা লাগে যথাক্রমে ০.৪৩, ০.৩৮, ও ০.৪১ কেজি। পায়রা ও রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত প্রযুক্তি কি সুপাক্রিটিক্যাল?

২০.অমদানিকৃত কয়লায় প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় পায়রা ও রামপালে যথাক্রমে ৩৯%ও ৫% প্লান্টÑফ্যাক্টরে ১৩.২৮, ও ১২.৪১ টাকা। প্রতি ইউনিট ফুয়েল কস্ট পায়রার ক্ষেত্রে ৫.০৪ টাকা। অথচ রামপালের ক্ষেত্রে ৭.৪৭ টাকা। এমন সব অসংগতি কি যৌক্তিক ও গ্রহণযোগ্য?

২১.ফিক্সড-কস্ট টু ক্যাপাসিটি রেসিও পায়রা ও রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের ক্ষেত্রে যথাক্রমে ২৭.৬৪ ও ১.০২। বিনিয়োগ ব্যয়ে এত বেশী তারতম্যের কারণ কি?

২২.৮০৫০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনক্ষমতা উন্নয়ন প্রক্রিয়াধীন। ২,৯৫২ মেগাওয়াট ক্ষমতা উৎপাদনে আছে। কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি তরল জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ ক্ষমতা কমিয়ে বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণের পরিকল্পনা কার্যকর করার ক্ষেত্রে চ্যলেঞ্জগুলি কি কি?

২৩.জ্বালানি ভেদে উক্ত কেন্দ্রসমূহ হতে বিদ্যুৎ গ্রহণের ক্ষেত্রে ‘Economic Merit Order’ অনুসরণ সম্পর্কিত তথ্যদি ঘখউঈনিয়মিত পিডিবি ও বিইআরসি’তে প্রেরণ করে কি? ২০২১-২২ অর্থবছরে তা অনুসরণ সম্পর্কিত কোন প্রতিবেদন কি বিইআরসিতে পাওয়া যাবে? NLDC কোন সংস্থা/কোম্পানির নিয়ন্ত্রণাধীন?

২৪.পিডিবি, ইজিসিবি, নওপাজেকো ও আইপিপি’র প্রতি একক বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাস লাগে যথাক্রমে ০.২৩৯, ০.২২৩, ০.২২৫, ও ০.২২২ ঘনমিটার। অথচএপিএসসিএল, আরপিসিএল, এসআইপিপি, রেন্টাল,ও কু.রেন্টাল-এ লাগে যথাক্রমে ০.২৫৮, ০.২৪৬, ০.২৬৭, ০.৩২৭. ০.২৮২ ঘনমিটার। এই তারতম্য কি যৌক্তিক ও গ্রহণযোগ্য?

২৫.গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনে পিডিবি’র প্লান্টফ্যাক্টর৩৬%। অথচ এপিএসসিএল, ইজিসিবি, নওপাজেকো, আইপিপি, এসআইপিপি, ও রেন্টাল-এর প্লান্টফ্যাক্টর যথাক্রমে ৪৪%, ৫৩%, ৫৪%, ৬৩%, ৭৪%, ৫৫%। গ্যাস সরবরাহে এমন অসমতা কি ন্যায্য ও যৌক্তিক?

২৬.গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনে ফিক্সড-কস্ট টু ক্যাপাসিটি রেসিও পিডিবি ও ইজিসিবি’র ক্ষেত্রে ৭.০৪ ও ৭.৯৯। অথচ এপিএসসিএল, নওপাজেকো, আইপিপি, এসআইপিপি, রেন্টাল ও কুই্যক রেন্টাল-এর ক্ষেত্রে ৯.৪২, ১১.৭১, ১১.০৫, ৯.৮৮, ৯.০১ ও ১৪.০৪। উৎপাদনক্ষমতা বৃদ্ধিতে বিনিয়োগের এমন তারতম্য কি ন্যায্য ও যৌক্তিক?

২৭.উক্ত বিদ্যুৎ উৎপাদনে ও-এম কস্ট টু ক্যাপাসিটি রেসিও পিডিবি ও ইজিসিবি’র ক্ষেত্রে যথাক্রমে ০.৩৭ ও ০.৩২। অথচ নওপাজেকো, আইপিপি, এসআইপিপি, রেন্টাল ও কুই্যক রেন্টাল-এর ক্ষেত্রে ০.৪৯, ০.৩৯, ১.৬৬, ৪.৮২, ও ১.২২। এমন তারতম্যের কি কোন যৌক্তিক ও গ্রহণযোগ্য কারণ আছে?

২৮.প্রস্তাবে দেখা যায়, গ্যাস স্বল্পতা না থাকা সত্ত্বেও ভোলায় পিডিবি’র বিদ্যুৎকেন্দ্রে ৩৮% প্লান্ট-ফ্যাক্টরে বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়। উৎপাদন ব্যয়হার ৪.১৫ টাকা। ফিক্সড-কস্ট টু ক্যাপাসিটি রেসিও ৯.৬৩। ৭২% প্লান্ট-ফ্যাক্টরে উক্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন হলে উৎপাদন ব্যয়হার হতো ২.৫৮ টাকা। অধিক প্লান্ট-ফ্যাক্টরে কম ব্যয়হারে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদনে বাধা কোথায়?

২৯.তাছাড়া পিডিবি’র বিবিয়ানা (দ.) ও সিলেট বিদ্যুৎকেন্দ্র যথাক্রমে ৬৯% ও ৬৮% প্লান্ট-ফ্যাক্টরে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে এবং উৎপাদন ব্যয়হার যথাক্রমে ২.১৮ ও ২.৬১ টাকা। ফিক্সড-কস্ট টু ক্যাপাসিটি রেসিও যথাক্রমে ৭.২০ ও ৮.৪২। এসব-তথ্যে প্রতিয়মান হয়, বিদ্যুৎ উৎপাদন/গ্রহণের ক্ষেত্রে ‘Economic Merit Order’অনুসরণ করা হলে পিডিবি’র পক্ষে আরো কম ব্যয়হারে আরো বেশী পরিমান বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব ভোক্তাদের এমন অভিমতের সাথে টিসি কি একমত?

৩০.অথচ গ্যাসে ৭৫% প্লান্ট-ফ্যাক্টরে ৩.২৬ টাকা ব্যয়হারে ভোলায় আইপিপি’র বিদ্যুৎকেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদন হয় এবং এ-বিদ্যুৎকেন্দ্রের ফিক্সড-কস্ট টু ক্যাপাসিটি রেসিও ১৪.০৭। নির্মান ব্যয় ও উৎপাদনক্ষমতা ব্যবহারের ক্ষেত্রে পিডিবি ও আইপিপি’র প্লান্টসমূহের মধ্যে বিদ্যমান এমন অসমতা ও অসামঞ্জস্যতা সম্পর্কে টিসি’র মূল্যায়ন কি?

৩১.পিডিবি’র কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎকেন্দ্রসমূহের উৎপাদনক্ষমতা প্রায় ৭,৩০০ মেগাওয়াট।গত ৯ মে তারিখের তথ্য বিবরণীতে দেখা যায়, ওই দিন উক্ত ক্ষমতার মধ্যে ৩,৮৭৫ মেগাওয়াট উৎপাদনে ছিল। গ্যাস সরবরাহ ছিল প্রায় ১১০০ এমএমসিএফডি। সিঙ্গেল সাইকেল বিদ্যুৎকেন্দ্রসমূহ ওইদিন কত উৎপাদনক্ষমতায় কি পরিমান গ্যাসে কত বিদ্যুৎ উৎপাদন করেছে? এ-ক্ষেত্রে ‘Economic Merit Order’অনুসরণ করা হয়েছে কিনা, টিসি কি সে-ব্যাপারে নিশ্চিত?

৩২.এমন সব অসংগতি ফর্ণেসওয়েল ও ডিজেলভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনেও রয়েছে। তাই তা নিরসনে প্রতিটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের পারফর্মেন্স নিয়মিত মূল্যায়ন হওয়া সমীচিন বলে পিডিবি ও বিইআরসি মনে করে কি?

৩৩.ফার্ণেসওয়েল ও ডিজেলভিত্তিক প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনে জ্বালানি লাগে পিডিবি’র ক্ষেত্রে যথাক্রমে ০.২২৯ ও ০.২৪৩ লিটার। অন্যদের তুলনায় বেশী। তরল জ্বালানি সরবরাহে সরবরাহকারীর কারচুপির প্রমান কোন কোন ক্ষেত্রে পাওয়া যায়। সরবরাহকারীরা এতই প্রভাবশালী যে এর প্রতিকারের জন্য জনমত দরকার। তাতে বিইআরসি’র ভূমিকা কি হতে পারে?

৩৪.ডিজেলভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনে ফিক্সড-কস্ট টু ক্যাপাসিটি রেসিও নওপাজেকো’র ক্ষেত্রে ১৩.২৮। অথচ পিডিবি’র ক্ষেত্রে ০.৭৫৩। নওপাজেকো’র ক্ষেত্রে বিনিয়োগ ব্যয় এতবেশি অযৌক্তিক বৃদ্ধি প্রমানিত হওয়া সত্ত্বেও তামূল্যহারে সমন্বয় করা কি টিসি যৌক্তিক মনে করে?

৩৫.গ্যাসভিত্তিক রেন্টাল/কুই্যক রেন্টাল বিদ্যুৎ ক্রয়মূল্যভূক্ত ক্যাপাসিটি চার্জ বিদ্যুতের বাল্ক মূল্যহারে সমন্বয় না হলে পিডিবি’র রাজস্ব চাহিদা তথা ঘাটতি কতটা কমবে?

৩৬.ডিজেলভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনে পিডিবি’র ক্ষেত্রে ৩% প্লান্টফ্যাক্টরে উৎপাদন ব্যয়হার ২২.৬৩ টাকা। অথচ আইপিপি’র ক্ষেত্রে ১৩% প্লান্টফ্যাক্টরে সে ব্যয়হার ৩১.৮৯ টাকা। আইপিপি’র প্লান্টে এমন অযৌক্তিক ব্যয়বৃদ্ধি কি মূল্যহারে সমন্বয়যোগ্য?

৩৭.প্রস্তাব মতে ২০২১-২২ অর্থবছরে মোট ডিজেলভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে ১৭৫২ মিলিয়ন ইউনিট। অর্থাৎ মোট উৎপাদনের ২%। তা উৎপাদন না হলে সাশ্রয় হতে পারে ৪,৬৮১ কোটি টাকা। ভোক্তাদের এই অভিমতের ব্যাপারে টিসি’র অভিমত কি?

৩৮.প্রস্তাবে পাওয়া গ্রীডভিত্তিক সৌরবিদ্যুৎ পরিস্থিতি সম্পর্কিত তথ্যাদি নিম্নের ছকে দেখানো হলো:
ইউটিলিটি পিডিবি নওপাজেকো আইপিপি
MW ৮ ৭ ২২৫
MkWh ৯.৪৫ ৯ ৩১১
MTk ৬৮ ১০০ ৩৯০৪
পিএফ (%) ১৩.৪৮ ১৪ ১৬
মূল্যহার ($) ৭.১৯ ১১.১১ ১২.৫৫
F.cost/Capacity ৮.৫০২ ১৪.২৮ ১৭.৩৫

স্রেডার হিসাবে বর্তমানে গ্রীডভিত্তিক সৌর বিদ্যুতের উৎপাদন ব্যয়হার ৪.৫ টাকা।
(ক) বিদ্যুৎ উন্নয়ন তহবিলের অর্থে পিডিবি কত মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনক্ষমতা বৃদ্ধি করেছে?
(খ) ফসিল-ফুয়েল বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত গ্যাস ও বাল্ক বিদ্যুতে প্রদত্ত মোট ভর্তুকির আনুপাতিক হারে সৌর তথা আরই বিদ্যুৎ উৎপাদনে ভর্তুকি প্রদান করা হলে পিডিবি’র ক্ষেত্রে বর্তমানে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় কত কমবে?
(গ) সরকারি ভর্তুকি ও বিনিয়োগ ব্যতিত ব্যক্তি খাত বিনিয়োগে বাণিজ্যিকভাবে দ্রুত বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ আইন (বিশেষ বিধান), ২০১০ এর আওতায় আরই বিদ্যুৎ উন্নয়ন কৌশলবিদ্যমান ফসিল ফুয়েলভিত্তিক বিদ্যুৎ উন্নয়ন কৌশল বা নীতির সাথে সাংঘর্ষিক। এমন চরম বৈষম্যের প্রতিকার ও প্রতিরোধে বিইআরসি’র করণীয় কি?

৩৯. প্রস্তাব মতেভারিত গড়ে বাল্ক বিদ্যুতের সরবরাহ ব্যয়হার ৮.৫৮ টাকা। বিদ্যুতের বিদ্যমান বাল্ক মূল্যহার ২০২১-২২ অর্থবছরে হবে ৫.০৮ টাকা। অর্থাৎ মূল্যহার বৃদ্ধির প্রস্তাব প্রায় ৬৯%। সরকার বিদ্যুৎ তথা জ্বালানি খাতকে বাণিজ্যিক খাতে পরিণত করার নীতি গ্রহণ করেছে এবং রাজস্ব আহরণের মূল উৎস বলে বিবেচনা করে। সে লক্ষ্যে এ-খাত সংষ্কার হচ্ছে। সে নীতি অব্যহত ঘাটতি এবং ভর্তুকিও মূল্যবৃদ্ধি অনিবার্য করেছে।আলোচ্য মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাবে তারই প্রতিফলন ঘটেছে। আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি মূল্যবৃদ্ধি সে-ক্ষেত্রে বাড়তি নিয়ামক। ভোক্তাদের এই অভিমতের সাথে টিসি’র কি কোন ভিন্নমত আছে?

৪০.২০১৫ সালের বিদ্যুতের বাল্ক মূল্যহার বৃদ্ধি আদেশের ৭(২) উপানুচ্ছেদে বিইআরসি’র নিম্নরূপ নির্দেশনা রয়েছে:
“Least Cost Generation Expansion Plan’ প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন নিশ্চিত করবে যাতে ভোক্তারা সহনীয় মূল্যে বিদ্যুৎ সুবিধা ভোগ করতে পারে।”
মূল্যহার বৃদ্ধিরপ্রস্তাবটি বিইআরসি’র এই নির্দেশনার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ কিনা, সে ব্যাপারে টিসি কি নিশ্চিত?

৪১.উক্ত আদেশের ৭(৩) উপানুচ্ছেদে বিইআরসি’র নিম্নরূপ নির্দেশনা রয়েছে:
“বিউবো বিদ্যুৎ উৎপাদনে Economic Load dispatch/Merit Order Load Despatch Principle অনুসরণ করবে এবং তা বাস্তবায়ন হচ্ছে কিনা সে সম্পর্কে ৩(তিন) মাস অন্তর কমিশনকে অবহিত করবে।”
মূল্যহার বৃদ্ধির প্রস্তাবটি বিইআরসি’র এই নির্দেশনার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ কিনা, সে ব্যাপারে টিসি কি নিশ্চিত?

৪২.২০২০ সালের বিদ্যুতের বাল্ক মূল্যহার বৃদ্ধি আদেশের ৮.৯ উপানুচ্ছেদে বর্ণিত আদেশ নিম্নরূপ:
ÔMerit Order Load Despatch Principle’ অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং সরবরাহ-চাহিদার সামঞ্জস্যতা সঠিকভাবে প্রতিপালিত হচ্ছে কিনা তা ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে পর্যালোচনা করার জন্য বিউবো, এনএলডিসি, ও পিজিসিবি এর একজন করে প্রতিনিধি এবং দুই জন বহিঃ বিশেষজ্ঞের সমন্বয়ে বিউবো একটি কমিটি গঠন করবে।
উক্ত কমিটি গঠন ও কমিটির কার্যক্রম সম্পর্কে টিসি কি অবহিত?

৪৩.প্রস্তাবে সরকারি ভর্তুকি বিবেচনা করা হয়নি। অথচ সরকারের সিদ্ধান্তে পল্লী অঞ্চলে বিদ্যুতায়নেরব্যাপক সম্প্রসারণ হয়েছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে মোট বিদ্যুতের ৫৫% আরইরির আওতাধীন এলাকায় বিতরণ হবে এরং সে বিদ্যুতের বিদ্যমান বাল্ক মূল্যহার ৪.৩২ টাকা। অথচ প্রস্তাব মতে সরবরাহ ব্যয়হার ৮.৫৮ টাকা। ঘটতিহার ৪.২৬টাকা। অর্থাৎ আরইবিতে ঘাটতি ২০,২৫৭.৫৮ কোটি টাকা। এই ঘাটতি সমন্বয়ের দায় ও দায়িত্ব সরকারের। তাই এ-ঘাটতি সমন্বয়ে সরকার কি পরিমান ভর্তুকি দেবে সে ব্যাপারে কি বিইআরসি নিশ্চিত?

৪৪.প্রস্তাবে ১৩২ কেভি থেকে উচ্চতর ভোল্টেজ লেভেলের ভোক্তাদের বিদ্যুতের মূল্যহার এক ও অভিন্ন নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে। ক্রয় ও বিক্রয় মূল্যহারের মধ্যেপার্থক্য সঞ্চালন চার্জসহ ০.৫০ টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে। ৩৩ কেভি ভোল্টেজ লেভেলের ভোক্তাকেও প্রস্তাবভূক্ত করা কি যৌক্তিক নয়? তাতে পিডিবি’র আয় ২০২১-২২ অর্থবছরে কত বৃদ্ধি হবে?

৪৫.বিদ্যুতের মূল্যহার নির্ধারণের একক এখতিয়ার বিইআরসি’র। অথচ আরইরি প্রত্যেকটি পিবিএস-এর জন্য ভিন্ন ভিন্ন বাল্ক মূল্যহার নির্ধারণ করে, যা বিইআরসি আইনের ৩৪ ধারার সাথে সাংঘর্ষিক। এ ব্যাপারে টিসি’র অভিমত কি? প্রতিটি পিবিএস-এর রাজস্ব চাহিদার সাথে সামঞ্জস্য রেখে তাদের বাল্ক মূল্যহার ও ভর্তুকি নির্ধারণ করা কি বিইআরসি’র এখতিয়ার নয়?

৪৬.পিডিবিবাণিজ্যিক কোন কোম্পনি বা প্রতিষ্ঠান নয়। পি.ও. ৯ এর আওতায় প্রতিষ্ঠিত সেবামূলক সংস্থা। ফলে তার কোন মুনাফা লাভের সুযোগ নেই। তাই তার রাজস্ব চহিদা নির্ধারণে কোন মুনাফা বা কর্পোরেট ট্যাক্স বিবেচনা করার সূযোগ কি বিইআরসি’র আছে?বাল্ক বিদ্যুতে কিউৎস কর আরোপের সুযোগ আছে? তাছাড়া লস কারবারে এ-সবের সুযোগ থাকে কি এবং তা কি ভোক্তার ওপর আরোপযোগ্য?

৪৭.‘বিদ্যুৎ খাত উন্নয়ন তহবিল’ বাবদ ব্যয় পিডিবি’র রাজস্ব চাহিদা বহির্ভূত এবং ভোক্তা অনুদান হিসেবে বিবেচিত। এ-ব্যয় কিভাবে বাল্ক মূল্যহারে সমন্বয় হয়? এ-তহবিলের অর্থ বিনিয়োগের প্রকৃতি কি?

৪৮.উক্ত তহবিল থেকে১,১৮৫ কোটি টাকা পায়রা কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে ইকুয়িটি হিসেবে বিনিয়োগ করা হয়েছে। এই বিনিয়োগের বিপরীতে আনুপাতিক হারে উক্ত বিদ্যুৎ কেন্দ্রের শেয়ার ভোক্তা পক্ষে পিডিবি’কে দেয়ার জন্য ক্যাব প্রস্তাব করেছে। পিডিবি’র পক্ষ থেকে কি কোন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে?

৪৯.সরকারি মালিকানাধীন, যৌথমালিকানাধীন এবং ব্যক্তি মালিকানাধীন প্লান্টসমূহের ইক্যুইটির ওপর আরওআর কত?

৫০.বিদ্যুৎ উন্নয়ন তহবিলের অর্থে ভোলায় গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ প্লান্ট নির্মানে বাধা কোথায়?

৫১.ভোক্তা পার্যায়ে ডিমান্ড চার্জের ন্যায় লাইসেন্সী পর্যায়েও ডিমান্ড চার্জ আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে। অর্থাৎ ভোক্তারা একাধিবার ডিমান্ড চার্জ দেবে। তাতে পিডিবি’র একদিকে আয় বাড়বে, অন্যদিকে রাজস্ব চাহিদা বৃদ্ধিতে মূল্যবৃদ্ধির চাপ সৃষ্টি হবে। নতুনভাবে বাল্ক বিদ্যুতে এই ডিমান্ড চার্জ আরোপের প্রস্তাব কি টিসি যৌক্তিক মনে করে?

৫২.৬৯% মূল্যহার বৃদ্ধির প্রস্তাবে সম্মতি জ্ঞাপনে বিদ্যুৎ বিভাগ ও মূল্যায়নে টিসি কি অনুধাবন করেছে যে,(ক) রাজস্ব চাহিদায় কোথায় কতটা ব্যয়বৃদ্ধি পেয়েছে, সে-সব ব্যয়বৃদ্ধি কতটা ন্যায্য ও যৌক্তিক, (খ) মাইক্রো ও ম্যাক্রো অর্থনীতি এবং ভোক্তার জীবনযাত্রা মূল্যহার বৃদ্ধিতে কতটা অভিঘাতের শিকার হবে, এবং (গ) এই সব বিবেচনায় সরকার কতটা ভর্তুকি দিলে মূল্যবৃদ্ধি সহনীয় পর্যায়ে রাখা যাবে? সে-সংক্রান্ত কোন প্রতিবেদন কি পাওয়া সম্ভব?

৫৩.পিডিবি একক ক্রেতা। তবুও লাইসেন্সীরা পিডিবি ছাড়াও অন্যান্য উৎস থেকে সরাসরি বিদ্যুৎ ক্রয় করে। সকল উৎস থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ পিডিবি মাধ্যমে লাইসেন্সীদের ক্রয়ে সুবিধা বা অসুবিধা কি?

৫৪.সম্পূরক চুক্তির আওতায় আরইবি সামিট পাওয়ার লিঃ এর বিদ্যুৎ ক্রয় করে ‘বিএসটি-৩ পয়সা’ মূল্যহারে। পিডিবি যে মূল্যহারে গ্যাস পায়, সামিটও সেই মূল্যহারে গ্যাস পায়, এবং সেই গ্যাসে ওই বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়। মূলচুক্তি মতে সামিটের বিদ্যুৎ ক্রয় মূল্যহার পরিশোধের লক্ষ্যে সম্পূক চুক্তিটি বাতিলের জন্য ক্যাব বিইআররি’র নিকট আবেদন করেছে। বিইআরসি নিষ্ক্রিয়। বর্তমানে আরইবি কত মূল্যহারে সামিট থেকে প্রাপ্ত বিদ্যুতের মূল্য পরিশোধ করে?

৫৫.বিদ্যুৎ খাত উন্নয়নে ডিপিএম পদ্ধতির পরিবর্তে ওটিএম পদ্ধতিতে সকল ক্রয় নিশ্চিত করা কি সম্ভব?

৫৬.বিদ্যুৎ তথা জ্বালানি খাত সমস্যা সমাধান অনেকটাই সহজ হতো, যদি বিইআরসি ক্যাব-এর আনীত অভিযোগ নিষ্পত্তিতে নিষ্ক্রীয় না থেকে সক্রীয় ভূমিকা পালন করতো। ক্যাবের এই অভিমতে টিসি’র কি কোন ভিন্নমত আছে?

৫৭.২০১৫, ২০১৭, এবং ২০২০ সালে বিদ্যুতের বাল্ক মূল্যহার আদেশসমূহে বিইআরসি প্রদত্ত আদেশ ও নির্দেশনাবলী প্রতিপালন বিষয়ক কোন প্রতিবেদন বিইআরসি’তে আছে কি? এমন প্রতিবেদন প্রতিটি গণশুনানিতে উপস্থাপন কি অবশ্যক নয়?

৫৮.প্রস্তাবে বলা হয়েছে, উৎপাদন স্বল্পতার কারণে দেশে লোডসেডিং নেই। কিন্ত ভোক্তা পর্যায়ে লোডসেডিং বিদ্যমান। আরইবি’র কোন কোন অঞ্চলে প্রকট। তার সঠিক তথ্য কি বিইআরসি’তে আছে?

৫৯.প্রস্তাবে বিদ্যুৎ চাহিদা ১০ শতাংশ বৃদ্ধি বিবেচনা করা হয়েছে। লোডসেডিং পরিকল্পিত হলে তার অভিঘাত সহনীয় হতো। পরিকল্পিত লোডসেডিং-এর মাধ্যমে চাহিদা বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ দ্বারা মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে অসুবিধা কোথায়? লোডসেডিং-এর সঠিক তথ্য ভোক্তাদের জানাতে অসুবিধা কি?

৬০.বিদ্যুৎ উৎপাদন, সঞ্চালন, ও বিতরণ স্বার্থসংঘাতযুক্ত। স্বার্থসংঘাত মুক্ত না হলে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হবেনা। ভোক্তা স্বার্থ ও অধিকার সুরক্ষা নিশ্চিত হবেনা। সুতরাং স্বার্থসংঘাত মুক্ত হতে হলে কি করণীয়? তাতে বিইআরসি’র ভূমিকা কি হতে হবে?

(ড. এম শামসুল আলম)
সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট, ক্যাব