পদ্মা ব্যাংকের সংকট কাটাতে বিদেশি বিনিয়োগ আনাই শ্রেয়: বাংলাদেশ ব্যাংক

রাষ্ট্রায়ত্ত কোনো ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হওয়ার পরিবর্তে বরং বিদেশ থেকে বিনিয়োগ এনে মূলধন ঘাটতি পূরণ করতে পারে বেসরকারি পদ্মা ব্যাংক লিমিটেড। অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগকে গত মঙ্গলবার এসব কথা জানিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী বা বিডিবিএলের সঙ্গে একীভূত হওয়ার বিষয়ে পদ্মা ব্যাংক গত ৮ জুলাই আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের কাছে আবেদন করে। ভবিষ্যতে যেকোনো বিপর্যয়ের হাত থেকে সুরক্ষা পাওয়ার জন্য এ একীভূতকরণ দরকার বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়। আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ ২৫ আগস্ট এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে মতামত চেয়ে চিঠি পাঠায়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক মঙ্গলবার সেই মতামত দিয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো নিজেরাই সমস্যায় আছে। খেলাপি ঋণ, মূলধন ঘাটতি ছাড়া অন্যান্য আর্থিক সূচকেও সুবিধাজনক অবস্থানে নেই তারা। এ অবস্থায় রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হওয়ার চেয়ে বিদেশ থেকে বিনিয়োগ আনার উদ্যোগ বাস্তবায়নই পদ্মা ব্যাংকের জন্য শ্রেয় হবে।
বিদ্যমান ব্যাংক কোম্পানি আইনে সরকারের অনুমোদন ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশের ভিত্তিতে একীভূতকরণ কর্মসূচি প্রণয়নের সুযোগ আছে। দুর্দশাগ্রস্ত ব্যাংককে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক অন্য কোনো ব্যাংকের সঙ্গে একীভূতকরণ বা অবসায়নের ব্যবস্থা নিতে পারে। তবে ব্যাংক কোম্পানি আইন ও কোম্পানি আইনের বিধি অনুযায়ী এ ধরনের একীভূতকরণে আমানতকারী, পাওনাদার ও শেয়ারহোল্ডারদের সমানভাবে লাভবান হওয়ার সুযোগ থাকতে হবে।

এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোকে হাইকোর্টে আবেদনের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে প্রত্যয়ন নিতে হবে যে একীভূতকরণের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের পাওনাদার, শেয়ারহোল্ডার ও আমানতকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না। এ জন্য একীভূত হওয়ার আবেদনকারী ও আবেদনকারীকে একীভূত করিয়ে নিতে রাজি হওয়া ব্যাংক দুটির দায় এবং সম্পদের মূল্য ও প্রকৃত অবস্থা নিরূপণে বিশেষ নিরীক্ষা করতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক এসব কথাও জানিয়েছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগকে।

পদ্মা ব্যাংক গত ১৫ জুন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়াভিত্তিক ডেল মরগান অ্যান্ড কোম্পানির সহায়তায় বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে মূলধন সংগ্রহের আবেদন করে। বাংলাদেশ ব্যাংক এ ব্যাপারে গত ২ আগস্ট নীতিগত অনুমোদনও দিয়েছে পদ্মা ব্যাংককে। পদ্মা ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডেল মরগান অ্যান্ড কোম্পানির প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বিদেশি বিনিয়োগ পাওয়ার বিষয়ে অগ্রগতিও আছে। পদ্মা ব্যাংকের কাছ থেকে জেনে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগকে দেওয়া মতামতে এসব কথা জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

একীভূতকরণের পাশাপাশি ঘুরে দাঁড়ানোর বিকল্প হিসেবে অগ্রাধিকারমূলক শেয়ার ও সাব অর্ডিনেটেড বন্ড ছাড়ার প্রস্তাবও দিয়েছিল পদ্মা ব্যাংক। তারা বলেছিল, ব্যাংকের এখন ২ হাজার ৪০০ কোটি টাকা মূলধন প্রয়োজন। এর মধ্যে ১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা অগ্রাধিকারমূলক শেয়ার ছেড়ে উত্তোলন করা যায়। পদ্মা ব্যাংকে রক্ষিত ১ হাজার ২০০ কোটি টাকার সরকারি সংস্থার আমানত ও ৬০০ কোটি টাকা সরকারি ব্যাংকের আমানতের অর্থ হবে অগ্রাধিকারমূলক শেয়ার। বাড়তি ৬০০ কোটি টাকা অতিরিক্ত সাব অর্ডিনেট বন্ড ছেড়ে ব্যাংকের মূলধন পর্যাপ্ততা ধরে রাখা সম্ভব হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, এমন প্রস্তাব ব্যাংক কোম্পানি আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় বলে তা রক্ষার সুযোগ নেই।

রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী ব্যাংক ও ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি) তিন বছর আগে ৭১৫ কোটি টাকা দিলেও ব্যাংকটি ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। ব্যাংকটি জানিয়েছে, তাদের মোট মূলধনে শেয়ারহোল্ডারদের ইকুইটি ২০১৯ সালের ৪৮৭ কোটি থেকে ২০২০ সালে ৩৩২ কোটি এবং এ বছরের জুন শেষে ২২১ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে এ বছর শেষে ইকুইটির পরিমাণ ১০০ কোটি টাকার নিচে চলে আসার আশঙ্কা রয়েছে।

২০২০ সালের নিরীক্ষিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, পদ্মা ব্যাংকের সুদযোগ্য সম্পদ ৫ হাজার ৬২২ কোটি টাকা। আর আয়যোগ্য সম্পদ ১ হাজার ৪৯০ কোটি টাকা। ওই বছর ব্যাংকের পরিচালন লোকসান হয়েছে ১৬০ কোটি টাকা। জুন পর্যন্ত ব্যাংকের পরিচালন লোকসান দাঁড়িয়েছে ১২০ কোটি টাকা।