বছরের শেষ কার্যদিবসে বাড়লো সূচক-লেনদেন

বিদায়ের পথে থাকা ২০২২ সাল মোটেও ভালো যায়নি শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীদের। বছরের সিংহভাগ সময় পতনের মধ্যেই ছিল দেশের শেয়ারবাজার। ফলে মুনাফার পরিবর্তে বছরটিতে বিনিয়োগকারীদের লোকসানের পাল্লা ভারী হয়েছে।

একই সঙ্গে বছরের শেষ সময়ে এসে দেখা দেওয়া লেনদেন খরা বিনিয়োগকারীদের উদ্বেগ আরও বাড়িয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই বছরটিকে ‘অপয়া’ হিসেবে চিহ্নিত করবেন শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীরা। তবে বছরের বেশিরভাগ সময় পতনের মধ্যে থাকলেও শেষ কার্যদিবসটি ভালোই গেলো বিনিয়োগকারীদের।

বছরের শেষ কার্যদিবস বৃহস্পতিবার (২৯ ডিসেম্বর) প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সবকয়টি মূল্যসূচক বেড়েছে। একই সঙ্গে বেড়েছে লেনদেনের পরিমাণ।

মূল্যসূচক ও লেনদেন বাড়লেও ডিএসইতে দাম বাড়ার তুলনায় দাম কমার তালিকায় বেশি সংখ্যক প্রতিষ্ঠান স্থান করে নিয়েছে। অবশ্য দাম বাড়া বা কমার তুলনায় দাম অপরিবর্তিত থাকা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বেশি রয়েছে।

বাজার পর্যালোচনায় দেখা যায়, বৃহস্পতিবার ডিএসইতে লেনদেন শুরু হয় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম বাড়ার মাধ্যমে। এতে লেনদেনের শুরুতে ডিএসই’র প্রধান সূচক ৫ পয়েন্ট বেড়ে যায়। লেনদেনের শুরুতে দেখা দেওয়া এই ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা লেনদেনের শেষ পর্যন্ত অব্যাহত থাকে।

এদিন মূল্যসূচক বাড়লেও দাম কমার তালিকায় স্থান করে নেয় বেশি সংখ্যক প্রতিষ্ঠান। দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে ৬০ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১০৭টির। আর ১৮৭টির দাম অপরবর্তিত রয়েছে। এরপরও ডিএসই’র প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ১০ পয়েন্ট বেড়ে ৬ হাজার ২০৬ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।

অপর দুই সূচকের মধ্যে বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় এক পয়েন্ট বেড়ে ২ হাজার ১৯৫ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর ডিএসই শরিয়াহ আগের দিনের তুলনায় ৩ পয়েন্ট বেড়ে এক হাজার ৩৫৮ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। এর মাধ্যমে টানা দুই কার্যদিবস ঊর্ধ্বমুখী থাকলো শেয়ারবাজার।

সবকয়টি মূল্যসূচক বাড়ার পাশাপাশি ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণও বেড়েছে। দিনভর ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ৩৪৫ কোটি ৭১ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয় ২৫৮ কোটি ২২ লাখ টাকা। সে হিসাবে লেনদেন বেড়েছে ৮৭ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। এর মাধ্যমে চার কার্যদিবস পর ডিএসইতে তিনশ কোটি টাকার বেশি লেনদেন হলো।

লেনদেনে এমন খরা দেখা দিলেও নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) লেনদেন বাড়াতে সম্প্রতি ১৬৯টি প্রতিষ্ঠানের ফ্লোর প্রাইস (শেয়ারের সর্বনিম্ন দাম) তুলে দিয়েছে।

শেয়ারবাজারে ভয়াবহ দরপতন দেখা দিলে চলতি বছরের ২৮ জুলাই প্রতিটি সিকিউরিটিজের ফ্লোর প্রাইস বেঁধে দেয় বিএসইসি। এতে শেয়ারবাজারে দরপতন কিছুটা কমলেও দেখা দেয় লেনদেন খরা। সম্প্রতি লেনদেন খরা আরও প্রকট হয়। এতে ফ্লোর প্রাইসের সমালোচনা করে বিভিন্ন পক্ষ।

এমন পরিস্থিতিতে গত ২১ ডিসেম্বর ১৬৯ প্রতিষ্ঠানের ফ্লোর প্রাইস তুলে দিয়ে একটি নির্দেশনা জারি করা বিএসইসি। ফ্লোর প্রাইস তুলে দেওয়ার পাশাপাশি এসব প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে নতুন সার্কিট ব্রেকার (দাম বাড়া বা কমার সীমা) চালু করা হয়।

নতুন সার্কিট ব্রেকারের নিয়ম অনুযায়ী, ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়া ১৬৯ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম একদিনে এক শতাংশের বেশি কমতে পারবে না। তবে দাম বাড়ার ক্ষেত্রে স্বাভাবিক সার্কিট ব্রেকারের নিয়ম কার্যকর হবে।

সার্কিট ব্রেকারের এই নিয়মের কারণে ফ্লোর প্রাইস তুলে দেওয়ার পরও ১০ টাকার নিচে থাকা প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম নতুন করে আর কমার সুযোগ নেই। আবার যে ১৬৯ প্রতিষ্ঠানের ফ্লোর প্রাইস তুলে দেওয়া হয়েছে বাজার মূলধনে সম্মিলিতভাবে সেসব প্রতিষ্ঠানের অবদান ৫ শতাংশের মতো। ফলে এসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম কমলেও মূল্যসূচকে খুব একটা প্রভাব রাখছে না।

এদিকে, ডিএসইতে টাকার অঙ্কে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে ইন্ট্রাকো রিফুয়েলিং স্টেশনের শেয়ার। কোম্পানিটির ১৭ কোটি ১৬ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা জেনেক্স ইনফোসিসের ১২ কোটি ৩২ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। ১০ কোটি ৯৪ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে ওরিয়ন ইনফিউশন।

এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- মুন্নু সিরামিক, বসুন্ধরা পেপার, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন, ওরিয়ন ফার্মা, আনোয়ার গ্যালভানাইজিং, নাভানা ফার্মা এবং ইস্টার্ন হাউজিং।

অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই বেড়েছে ৩৩ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৩৪ কোটি ২ লাখ টাকা। লেনদেন অংশ নেওয়া ১৫৮টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৩৬টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ২৮টির এবং ৯৪টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।