বিশ্ববাজারে সোনার বড় দরপতন

ভোক্তাকণ্ঠ ডেস্ক: বিশ্ববাজারে টানা দরপতনের মধ্যে পড়েছে সোনা। প্রায় এক মাস ধরে চলছে এ দরপতন। এতে চলতি বছরের মধ্যে সোনার দাম সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে গেছে। বিশ্ববাজারে সোনার দামে বড় পতন হলেও এখনই দেশের বাজারে দামি এ ধাতুর দাম কমাচ্ছে না বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস)। আরও কয়েকদিন বিশ্ববাজারের চিত্র দেখে দেশের বাজারে সোনার দাম পুনঃনির্ধারণ করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন বাজুসের দায়িত্বশীলরা।

বাজুসের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, দেশের বাজারে সোনার দাম নির্ধারণ করা হয় স্থানীয় বাজারের পাকা সোনার দামের ওপর ভিত্তি করে। সম্প্রতি বিশ্ববাজারে সোনার দামে বড় পতন হলেও দেশের বাজারে পাকা সোনার দাম খুব একটা কমেনি।

তাছাড়া টাকার বিপরীতে ডলারের দামও কিছুটা বেড়েছে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে বিশ্ববাজারের চিত্র আরও কয়েকদিন দেখে দেশের বাজারে সোনার দাম পুনরায় নির্ধারণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

বিশ্ববাজারে সোনার দাম কমায় দেশের বাজারে দাম কমবে কি না, জানতে চাইলে বাজুসের মূল্য নির্ধারণ ও মূল্য পর্যবেক্ষণ সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান এম এ হান্নান আজাদ বলেন, ‘আমরা দাম নির্ধারণ করি স্থানীয় বাজারের পাকা সোনার দামের ওপর নির্ভর করে। বিশ্ববাজারে সোনার দাম কমলেও দেশের বাজারে পাকা সোনার দাম খুব একটা কমেনি। তাছাড়া ডলারের বাড়তি দাম রয়েছে। আমরা আরও কয়েকদিন দেখবো। তারপর সোনার দাম পুনঃনির্ধারণ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নেবো।’

দেশের বাজারে সোনার দাম সর্বশেষ পুনঃনির্ধারণ করা হয় গত ৫ ফেব্রুয়ারি। ৪ ফেব্রুয়ারি বাজুস থেকে ঘোষণা দিয়ে প্রতি ভরি সোনার দাম ৮১৬ টাকা থেকে এক হাজার ১৬৭ টাকা পর্যন্ত কমানো হয়। অবশ্য তার আগে চলতি বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতে দু’দফায় এক ভরি সোনার দাম পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত বাড়ানো হয়।

চলতি বছর দেশের বাজারে প্রথম সোনার দাম পুনঃনির্ধারণ করা হয় ৮ জানুয়ারি। সেসময় সবচেয়ে ভালো মানের অর্থাৎ ২২ ক্যারেটের (১১.৬৬৪ গ্রাম) এক ভরি সোনার দাম দুই হাজার ৩৩৩ টাকা বাড়িয়ে ৯০ হাজার ৭৪৬ টাকা করা হয়।

এছাড়া ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি সোনার দাম দুই হাজার ২১৬ টাকা বাড়িয়ে ৮৬ হাজার ৬০৫ টাকা, ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি সোনার দাম এক হাজার ৯২৪ টাকা বাড়িয়ে ৭৪ হাজার ২৪১ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি সোনার দাম এক হাজার ৫৭৫ টাকা বাড়িয়ে ৬১ হাজার ৮৭৮ টাকা করা হয়।

এরপর ১৫ জানুয়ারি আরেক দফা সোনার দাম বাড়ানো হয়। সেসময় সবচেয়ে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের এক ভরি সোনার দাম দুই হাজার ৬৮৩ টাকা বাড়িয়ে ৯৩ হাজার ৪২৯ টাকা করা হয়।

এছাড়া ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি সোনার দাম দুই হাজার ৫৬৬ টাকা বাড়িয়ে ৮৯ হাজার ১৭১ টাকা, ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি সোনার দাম দুই হাজার ২১৭ টাকা বাড়িয়ে ৭৬ হাজার ৪৫৮ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির সোনার দাম ভরিতে এক হাজার ৮০৭ টাকা বাড়িয়ে ৬৩ হাজার ৬৮৫ টাকা করা হয়।

এতে দেশের বাজারে প্রথমবারের মতো এক ভরি সোনার দাম ৯৩ হাজার ৪২৯ টাকা করা হয়। এ রেকর্ড দামের পর ৫ ফেব্রুয়ারি দেশের বাজারে সোনার দাম কিছুটা কমানো হয়। সেসময় সবচেয়ে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি সোনার দাম এক হাজার ১৬৭ টাকা কমিয়ে ৯২ হাজার ২৬২ টাকা করা হয়।

২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি সোনার দাম এক হাজার ১০৮ টাকা কমিয়ে ৮৮ হাজার ৬৩ টাকা, ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি সোনার দাম ৯৯২ টাকা কমিয়ে ৭৫ হাজার ৪৬৬ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির সোনার দাম ভরিতে ৮১৬ টাকা কমিয়ে ৬২ হাজার ৮৬৭ টাকা করা হয়।

দেশের বাজারে সর্বশেষ যখন সোনার দাম পুনঃনির্ধারণ করা হয়, বিশ্ববাজারে তখন প্রতি আউন্স সোনার দাম ছিল এক হাজার ৮৬৬ ডলার। এখন তা কমে এক হাজার ৮১০ ডলারে নেমে এসেছে। অর্থাৎ দেশের বাজারে সোনার দাম কমানোর পর এরইমধ্যে বিশ্ববাজারে প্রতি আউন্স সোনার দাম ৫৬ ডলার কমে গেছে। এর মধ্যে গত এক সপ্তাহে কমেছে ৩০ ডলার বা ১ দশমিক ৬৭ শতাংশ। আর মাসের ব্যবধানে সোনার দাম কমেছে ১৩৫ ডলার বা ৬ দশমিক ৯৪ শতাংশ।

সোনার দামের বিশ্ববাজারের চিত্র পর্যালোচনায় দেখা যায়, চলতি বছরের শুরুতে প্রতি আউন্স সোনার দাম ছিল এক হাজার ৮২৪ ডলার। নতুন বছর ২০২৩ সালের প্রথম মাস জানুয়ারিতে দফায় দফায় সোনার দাম বাড়ে। এতে ফেব্রুয়ারির প্রথমদিন প্রতি আউন্স সোনার দাম এক হাজার ৯৫০ ডলারে উঠে যায়। এরপর থেকেই সোনার দাম কমতে শুরু করে।