রপ্তানি আয় কমলো টানা দুই মাস

ভোক্তাকণ্ঠ ডেস্ক: বাংলাদেশের তৈরি পণ্য বিশ্ববাজারে রপ্তানি বাবদ চলতি বছরের এপ্রিল মাসে আয় হয়েছে ৩৯৫ কোটি ৬০ লাখ মার্কিন ডলার; যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ৭৮ কোটি ২৬ লাখ ৭০ হাজার ডলার কম। বুধবার (৩ এপ্রিল) রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

রপ্তানি আয় কমার খবরের আগে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স কমার খবরও এসেছে। অর্থাৎ ঈদের পর দেশের অর্থনীতিতে দুটি নেতিবাচক খবর এলো। 

ব্যবসায়ীরা অবশ্য আগেই বলেছিলেন, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে সারা বিশ্বে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমেছে। ফলে পোশাকসহ অন্যান্য পণ্য যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নে রপ্তানি কমেছে। তাদের আশঙ্কা সামনের দিনে আরও কমতে পারে রপ্তানি আয়।

রপ্তানি আয় আগের বছরের চেয়ে কমার পাশাপাশি চলতি বছর এপ্রিল মাসের রপ্তানি আয়ের যে লক্ষমাত্রা ছিল সেই লক্ষ্যমাত্রাও পূরণ হয়নি সরকারের। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ২১ দশমিক ৬৭ শতাংশ কম আয় হয়েছে এপ্রিলে।

চলতি বছরের এপ্রিল মাসে সরকারের রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫০৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বা ৫০৫ কোটি ডলার। রপ্তানি আয় হয়েছে ৩৯৫৬ মিলিয়ন বা ৩৯৫ কোটি ৬০ লাখ ইউএস ডলার সমপরিমাণ পণ্য।

ফেব্রুয়ারি মাসের পর মার্চ ও এপ্রিল টানা দুই মাস বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানি বাবদ আয় কমলো। চলতি বছরে মার্চ মাসে রপ্তানি আয় ছিল ৪৬৪ কোটি ৩৯ লাখ ৪০ হাজার মার্কিন ডলার। গত বছরের একই সময়ে ছিল ৪৭৬ কোটি ২২ লাখ ২০ হাজার ইউএস ডলার। অর্থাৎ ১১ কোটি ৮২ লাখ ৮০ হাজার ডলার পরিমাণ কম পণ্য রপ্তানি হয়েছিল মার্চে।  

ফেব্রুয়ারিতে রপ্তানি আয় ছিল ইতিবাচক ধারায়। ওই মাসে রপ্তানি হয়েছিল ৪৬৩ কোটি ডলারের পণ্য। আর বছরের শুরুতে অর্থাৎ ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে ৫১৩ কোটি ৬২ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছিল।

এদিকে মার্চ ও এপ্রিলে রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যামাত্রা পূরণ না হলেও ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসের মোট রপ্তানি আয় ৫ দশমিক ৩৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধিতে রয়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাই ২০২২ থেকে এপ্রিল ২০২৩ সাল পর্যন্ত মোট ১০ মাসে বিশ্ববাজারে মোট ৪ হাজার ৫৬৭ কোটি ৭৬ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। যা এর আগের বছরের একই সময়ে হয়েছিল ৪ হাজার ৩৩৪কোটি ৪৩ লাখ ৪০ হাজার ডলার।

কিন্তু এ সময়ে সরকারের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ হাজার ৭৩১ কোটি ৪০ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানির। সেই হিসেবে অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসের রপ্তানি আয় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩ দশমিক ৪৬ শতাংশ পিছিয়ে আছে। অর্থাৎ ১৬৩ কোটি ৬৩ লাখ ৮০ হাজার ডলার পরিমাণ পণ্য কম রপ্তানি হয়েছে।

খাতওয়ারি তথ্যে দেখে গেছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে তৈরি পোশাক, প্লাস্টিক পণ্য ও চামড়াবিহীন জুতা রপ্তানি ইতিবাচক ধারায় রয়েছে। অন্যদিকে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, হিমায়িত খাদ্য, কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য, পাট ও পাটজাত পণ্য, হোম টেক্সটাইল ও প্রকৌশল পণ্যের রপ্তানি কমে গেছে।

চলতি অর্থবছরের জুলাই–এপ্রিল সময়ে ৩ হাজার ৮৫৭ কোটি ৭৫ লাখ ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এই রপ্তানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৯ শতাংশ বেশি। এদিকে গত মার্চ পর্যন্ত চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের রপ্তানি ইতিবাচক ধারায় ছিল। তবে এপ্রিল শেষে এই খাতের রপ্তানিও নেতিবাচক ধারায় চলে গেছে। চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের রপ্তানি দাঁড়িয়েছে ১০০ কোটিতে। এই রপ্তানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় দশমিক ৫২ শতাংশ কম।

সার্বিক বিষয়ে তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর পরিচালক ও ডেনিম এক্সপার্ট লিমিটেডের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল ঢাকা পোস্টকে বলেন, এপ্রিল মাসে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক পণ্য বিশ্ববাজারে রপ্তানি হয়েছে ৩ দশমিক ৩২ বিলিয়ন ডলার। যা আগের বছরের তুলনায় ১৫ দশমিক ৪৮ শতাংশ বেড়েছে। এক্ষেত্রে বিশ্ববাজারে ওভেন খাতের পোশাক পণ্য রপ্তানি হয়েছে ১ দশমিক ৪৯ বিলিয়ন ডলার। আর নিট খাতের পোশাক পণ্য রপ্তানি হয়েছে ১দশমিক ৮৩ বিলিয়ন ডলার।

তিনি বলেন, শুধু এপ্রিল মাসে লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার আর অর্জন হয়েছে ৩ দশমিক ৩২ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ১৮ দশমিক ৪০শতাংশ পিছিয়ে রয়েছে।

চলতি অর্থবছরে (২০২২-২৩) পোশাক রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, ৪৬ দশমিক ৮০ বিলিয়ন ডলার বা ৯ দশমিক ৮৩ শতাংশ। আর এখন পর্যন্ত ১০ মাসে পোশাক রপ্তানি অর্জিত হয়েছে ৩৮ দশমিক ৫৮ বিলিয়ন ডলার।

তিনি বলেন, আগামী ২ মাসে (প্রতি মাসে) কমপক্ষে ৪ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার করে রপ্তানি হলে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হবে 

উল্লেখ্য, ঈদের পর এপ্রিল মাসে রেমিট্যোন্স বা প্রবাসী আয় এসেছে মাত্র ১৬৮ কোটি ৩৪ লাখ ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, গত বছরের এপ্রিলে প্রবাসী আয় এসেছিল ২০১ কোটি ডলার। ফলে গত বছরের এপ্রিলের তুলনায় এ বছর এপ্রিলে প্রবাসী আয় কমেছে ১৬ দশমিক ২৬ শতাংশ। ঈদের মাসেও প্রবাসী আয়ে নেতিবাচক বার্তা দিয়েছে। আর প্রবাসী আয়ের নেতিবাচক বার্তার সঙ্গে সঙ্গে দেশের রপ্তানি আয়েও হোঁচট খাওয়ার তথ্য এলো।