লবণযুক্ত চামড়া কেনা শুরু বৃহস্পতিবার থেকে

ভোক্তাকণ্ঠ ডেস্ক: রাজধানীসহ সারাদেশের লবণযুক্ত চামড়া বৃহস্পতিবার থেকে দেশের ১৫৪টি ট্যানারি কেনা শুরু করবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএ) চেয়ারম্যান ও এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক শাহীন আহমেদ। 

বুধবার রাজধানীর ধানমন্ডি ক্লাব লিমিডেটের ভিআইপি লাউঞ্জে ঈদ পরবর্তী কাঁচা চামড়া ক্রয়-বিক্রয়, সংরক্ষণ ও পরিবহনসহ সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত বিটিএ’র সংবাদ সম্মেলন তিনি এ কথা বলেন।

শাহীন আহমেদ বলেন, ‘এ বছর এক কোটি চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও পাঁচ থেকে ছয় লাখ ছাগল, ভেড়া ও বকরির চামড়া নষ্ট হওয়ায় ৯৫ লাখ চামড়া সংগ্রহ করা সম্ভব হবে।’

তিনি বলেন, ‘বৈদেশিক মুদ্রা আয়, জাতীয় প্রবৃদ্ধি, কর্মসংস্থান ও মূল্য সংযোজনের নিরিখে চামড়া শিল্প একটি সম্ভাবনাময় খাত। এ শিল্পের মূল উপাদান কাঁচা চামড়ার মোট জোগানের ৫০ ভাগেরও বেশি ঈদ-উল-আযহার সময় সংগ্রহ করা হয়। ঈদ উপলক্ষে ট্যানারি মালিকরা গত ১০ জুলাই থেকে ১২ জুলাই পর্যন্ত পাঁচ লাখ কাঁচা চামড়া সংগ্রহ করেছেন। সংগৃহীত কাঁচা চামড়া প্রক্রিয়াজাত করাই বড় চ্যালেঞ্জ।’

বিটিএর চেয়ারম্যান বলেন, ‘কাঁচা চামড়া প্রক্রিয়াকরণের জন্য ক্যামিকেলস প্রয়োজন। সুপারভাইজড বন্ড সুবিধার আওতায় ট্যানারিসমূহ ক্যামিকেলস সংগ্রহ করে থাকে। সুপারভাইজড বন্ড বহাল রাখা ও এর সুবিধার আওতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। সুপারভাইজড বন্ড ব্যবস্থা বহাল রাখার জন্য বিটিএ জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে আবেদন করেছে। বোর্ড এ বিষয়ে হ্যাঁ বললে কাঁচা চামড়া প্রক্রিয়াকরণের ক্যামিকেলস সহজলভ্য হবে।’

তিনি বলেন, ‘এলডব্লিইউজি সনদ না থাকায় ব্র্যান্ড বায়ার্সদের কাছে চামড়া বিক্রি করতে পারছি না। চায়নার বায়ার্সদের মাধ্যমে বিক্রি করতে হচ্ছে। এ জন্য কঠিন বর্জ্যের ব্যবস্থাপনা ইসিআর/১৭ প্রতিপালন এলডব্লিইউজি সনদ অর্জনে সহায়ক হবে। এলডব্লিইউজি সনদ অর্জন ব্র্যান্ড বায়ার্সদের আকৃষ্ট করবে। সরকার যদি আমাদের সহায়তা করে তাহলে এক দুই বছরের মধ্যে আমাদের ২৫ থেকে ৩০টি ট্যানারি এলডব্লিইউজি সনদ পেয়ে যাবে। তখন আমরা সরাসরি ব্র্যান্ড বায়ার্সদের কাছে চামড়া রপ্তানি করতে পারবো। এছাড়া জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজন পরিবেশগত ছাড়পত্র/ছাড়পত্রের নবায়ন।’

বিটিএর চেয়ারম্যান বলেন, ‘চামড়া ব্যবস্থাপনা নিয়ে ঈদের আগে থেকেই সরকার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেটা যুগপোযুগী হয়েছে। সরকারের বেঁধে দেওয়া দামেই ট্যানারি মালিকরা চামড়া সংগ্রহ করবে। আগামীতে আমরা চামড়ার বাজার নৈরাজ্য রোধে লবণযুক্ত চামড়া ও লবণছাড়া কাঁচা চামড়ার দাম নির্ধারণের জন্য সরকারের (বাণিজ্য মন্ত্রণালয়) কাছে প্রস্তাব দেবো বা অনুরোধ করবো।’

তিনি বলেন, ‘লিজ ডিডের ক্ষেত্রে কমপ্লাইয়েন্স শর্ত আরোপ করায় লিজ ডিড সম্পাদনে জটিলতা দেখা দিয়েছে। ফলে হাজারীবাগের জায়গা রেড জোন করায় ট্যানারি মালিকরা তা কাজে লাগাতে পারছেন না। হাজারীবাগে থাকার সময় নেওয়া ব্যাংক ঋণের ২০১৭, ২০১৮ ও ২০১৯ বর্ষের সুদ মওকুফ সুবিধা পেলে ট্যানারি মালিকদের ঋণের ভার কিছুটা হলেও লাঘব হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আধুনিক সিইটিপির সুবিধা প্রাপ্তির আশায় হাজারীবাগ থেকে ট্যানারিগুলো চামড়া শিল্প নগরী, ঢাকায় স্থানান্তরিত হয়েছে। সিইটিপির ত্রুটি বিচ্যুতির দূর করে ক্রোম রিকভারী ইউনিট স্থাপন প্রয়োজন। চামড়া খাতে জুন-২০২২ পর্যন্ত ১২৪৫ দশমিক ১৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার রপ্তানি আয় অর্জিত হয়েছে।’

কিছু দাবি তুলে ধরে শাহিন আহমেদ বলেন, চামড়া শিল্প নগরীর ভূমি বরাদ্দ নীতিমালা হালনাগাদ করা হলে ট্যানারি ব্যবসা সম্প্রসারিত হবে, রপ্তানি বৃদ্ধি পাবে। এছাড়া চামড়া প্রক্রিয়ায়ণের ক্যামিকেলসের সহজলভ্যতার ক্ষেত্রে সুপারভাইজড বন্ড ব্যবস্থা বহাল রাখা, পরিবেশগত ছাড়পত্র, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, সিইটিপির সক্ষমতা বৃদ্ধি, জমির জিডিও সম্পাদন সহজীকরণ, এলডব্লিইউজি সনদ অর্জনে সহায়তা, হাজারীবাগের জায়গা রেডজোন মুক্ত করা।

এবার ৯৯ লাখ ৫০ হাজারের মতো পশু কোরবানি হয়েছে। প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত গরুর কাঁচা চামড়ার দাম গত বছরের চেয়ে সাত টাকা বৃদ্ধি করে ঢাকায় ৪৭-৫২ টাকা করা হয়েছে। ঢাকার বাইরে ৪০-৪৪ টাকা দর নির্ধারণ করা হয়েছে। খাসির কাঁচা চামড়ার দর প্রতি বর্গফুটে তিন টাকা বাড়িয়ে ১৮-২০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। বকরির লবণযুক্ত চামড়ার দর অপরিবর্তিত রয়েছে।