সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকেই মিলছে না বিমা দাবির টাকা!

সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকেই মিলছে না বিমা দাবির টাকা!
দেশে ব্যবসা করা জীবন বিমা কোম্পানিগুলোর মধ্যে একমাত্র সরকারি প্রতিষ্ঠান ‘জীবন বীমা করপোরেশন’। অথচ এ প্রতিষ্ঠানটি থেকেও ঠিকমতো বিমা দাবির টাকা পাচ্ছেন না গ্রাহক। যত সংখ্যক বিমা দাবি গ্রাহক উত্থাপন করছেন, তার বড় অংশই থেকে যাচ্ছে অপরিশোধিত।

বিমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) কাছে কোম্পানিটির সবশেষ জমা দেওয়া প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৮ সাল থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত ৩০ হাজার ২১৮ জন বিমা গ্রাহকের মেয়াদোত্তীর্ণ এবং চার হাজার ৭৩৭ জন গ্রাহকের মৃত্যু দাবির টাকা পরিশোধ করেনি।

এসব গ্রাহকের বিমা দাবির পরিমাণ ২০৯ কোটি ৪৩ লাখ ৭৩ হাজার ২২৫ টাকা। এরমধ্যে মেয়াদোত্তীর্ণ বিমা দাবি ১২৪ কোটি দুই লাখ ৯০ হাজার ৭৩৮ টাকা এবং মৃত্যু দাবি ৮৫ কোটি ৪০ লাখ ৮২ হাজার ৪৮৭ টাকা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালে কোম্পানিটির ৩৫ হাজার ২২৩টি পলিসির মেয়াদোত্তীর্ণ বিমা দাবি উত্থাপন করেন গ্রাহক। এরমধ্যে ২৫ হাজার ৯০৫টি পলিসির বিপরীতে ১৬৯ কোটি ৩৫ লাখ ২৫ হাজার ৯০৩ টাকা পরিশোধ করে কোম্পানিটি। অন্যদিকে নয় হাজার ৩১৮টি পলিসির বিপরীতে ৪০ কোটি ৬৪ লাখ ৮৯ হাজার ১৫২ টাকা পরিশোধ করেনি।

একই বছরে বিমা গ্রাহকদের মৃত্যুর কারণে দুই হাজার ৩৮২টি দাবি উত্থাপিত হয়। এরমধ্যে এক হাজার ৮৬টি পলিসির বিপরীতে ১১ কোটি ২১ লাখ ১২ হাজার ৮৪৩ টাকা পরিশোধ করে জীবন বীমা করপোরেশন। অন্যদিকে এক হাজার ২৯৬টি পলিসির বিপরীতে উত্থাপন হওয়া ১৭ কোটি ৩৭ লাখ ৭১ হাজার ৫০ টাকা বিমা দাবি পরিশোধ করেনি কোম্পানিটি।

পরের বছর ২০১৯ সালে কোম্পানিটির কাছে ৩৬ হাজার ১৩৯টি পলিসির মেয়াদোত্তীর্ণ বিমা দাবি উত্থাপন করেন গ্রাহকরা। এরমধ্যে ২৮ হাজার ৬১৯টি পলিসির বিপরীতে ১৭৯ কোটি ৭৭ লাখ ৭৯ হাজার ৬২২ টাকা পরিশোধ করে কোম্পানিটি। অন্যদিকে সাত হাজার ৫২০টি পলিসির বিপরীতে ২৯ কোটি ৯১ লাখ ৭২ হাজার ৬৬৯ টাকা পরিশোধ করেনি প্রতিষ্ঠানটি।

একই বছরে বিমা গ্রহকদের মৃত্যুর কারণে এক হাজার ৮৫৮টি দাবি উত্থাপিত হয়। এরমধ্যে ৭৩৪টি পলিসির বিপরীতে ১১ কোটি ৯৩ লাখ ৮৪ হাজার ৯৪ টাকা পরিশোধ করে কোম্পানিটি। অন্যদিকে এক হাজার ১২৪টি পলিসির বিপরীতে উত্থাপন হওয়া ১৮ কোটি ৭৯ লাখ ৯২ হাজার ৮৬ টাকা বিমা দাবি পরিশোধ করেনি জীবন বীমা করপোরেশন।

২০২০ সালে কোম্পানিটির কাছে ৩২ হাজার ৩৯৪টি পলিসির মেয়াদোত্তীর্ণ বিমা দাবি উত্থান করেন গ্রাহক। এরমধ্যে ২৫ হাজার ৭৮০টি পলিসির বিপরীতে ১৮২ কোটি ৭৬ লাখ ৪৭ হাজার ৪২৩ টাকা পরিশোধ করে কোম্পানিটি। অন্যদিকে ছয় হাজার ৬১৪টি পলিসির বিপরীতে ২৭ কোটি ৮৫ লাখ ৩৬ হাজার ৫৭০ টাকা পরিশোধ করেনি প্রতিষ্ঠানটি।

একই বছরে বিমা গ্রাহকদের মৃত্যুর কারণে এক হাজার ৮৫০টি দাবি উত্থাপিত হয়। এরমধ্যে ৬৫৪টি পলিসির বিপরীতে ১৩ কোটি ৬৭ লাখ ৯ হাজার ৫৫৩ টাকা পরিশোধ করে কোম্পানিটি। অন্যদিকে এক হাজার ১৯৬টি পলিসির বিপরীতে উত্থাপন হওয়া ২৪ কোটি আট লাখ ২৬ হাজার ৩৬৬ টাকা বিমা দাবি পরিশোধ করেনি কোম্পানিটি।

চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত কোম্পনিটির কাছে ২১ হাজার ৭৫টি পলিসির মেয়াদোত্তীর্ণ বিমা দাবি উত্থাপন করেন গ্রাহক। এরমধ্যে ১৪ হাজার ৩০৯টি পলিসির বিপরীতে ১০৪ কোটি ৮৬ লাখ ৫২ হাজার ৮৩৮ টাকা পরিশোধ করে কোম্পানিটি। অন্যদিকে ছয় হাজার ৭৬৬টি পলিসির বিপরীতে ২৫ কোটি ৬০ লাখ ৯২ হাজার ৩৪৭ টাকা পরিশোধ করেনি।

বিমা গ্রহকদের মৃত্যুর কারণে এ সময়ের মধ্যে এক হাজার ৫৮২টি দাবি উত্থাপিত হয়। এরমধ্যে ৪৬১টি পলিসির বিপরীতে ১৩ কোটি ৩৩ লাখ ১৪ হাজার ৮৮২ টাকা পরিশোধ করেছে কোম্পানিটি। অন্যদিকে এক হাজার ১২১টি পলিসির বিপরীতে উত্থাপন হওয়া ২৫ কোটি ১৪ লাখ ৯২ হাজার ৯৮৫ টাকা বিমা দাবি পরিশোধ করেনি কোম্পানিটি।

তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যাচ্ছে, কোম্পানিটিতে মেয়াদোত্তীর্ণের তুলনায় গ্রাহকের মৃত্যুজনিত কারণে উত্থাপন হওয়া বিমা দাবি বেশি হারে অপরিশোধিত থেকে যাচ্ছে। এমনকি বছরে কোম্পানিটিতে যত সংখ্যক মৃত্যু দাবি উত্থাপন হয়েছে, তার অর্ধেকের কম পরিশোধ করেছে প্রতিষ্ঠানটি।

যোগাযোগ করা হলে জীবন বিমা করপোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. জহুরুল হক বলেন, জীবন বীমা করপোরেশন ১৯৭৩ সাল থেকে কাজ করছে। পলিসি সংখ্যা লাখ লাখ। ৩০ হাজার পেন্ডিং (দাবি অপরিশোধিত থাকা) কাউন্টেবলের (গোনার) মধ্যে আসার বিষয় না।

তিনি বলেন, ২শ কোটি টাকা বিমা দাবি বকেয়া থাকা এটা খুবই নগণ্য। কোনো ক্লেম (দাবি) নিয়ে কোনো ধরনের প্রবলেম আমাদের নেই। আমাদের প্রতিষ্ঠানের সেটেলমেন্ট সবচেয়ে ভালো। টাকা আটকে রাখলে আমার পকেটে যায় না। সরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে করোনার মধ্যে আমরা প্রচুর বিমা দাবি পরিশোধ করেছি।

তিনি আরও বলেন, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্মই হয়নি ৩০ বছর। তাদের নিয়ে অনেক কথা আছে। আমি এ বিষয়ে কথা বলতে চাই না। কিন্তু আমার প্রতিষ্ঠান সরকারি। টাকা রাখলে তো আমি নিজে নিতে পারছি না, এটা সরকারের কাছে থাকছে। আমি যদি লাভ করি, লাভের অংশ সরকার পায়। আমি যদি লস (লোকসান) করি, এটা সরকার বহন করবে।’