শিক্ষার্থীদের টিকাদান নিয়ে তিন বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে বৈঠক কাল

ভোক্তাকন্ঠ ডেস্ক: তিন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দ্রুত কীভাবে টিকার আওতায় নিয়ে আসা যায়, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে মঙ্গলবার বৈঠকে বসছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সোমবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি।

তিনি বলেন, পাবলিক, বেসরকারি, জাতীয়, উন্মুক্ত ও ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৪৪ লাখ ৩৪ হাজার ৪৫১ জন। এর মধ্যে করোনার টিকার প্রথম ডোজ দেওয়া হয়েছে ২৩ লাখ ২৮ হাজার ৪৬৮ জনকে। দ্বিতীয় ডোজ টিকা নিয়েছেন ১৭ লাখ ১৩ হাজার ৩০২ জন। মোট নিবন্ধন করেছেন ২৭ লাখ ৩১ হাজার ২৮৭ জন। পাবলিক ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯৫ ভাগের বেশি শিক্ষার্থীর টিকাদান সম্পন্ন হয়েছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় এবং ইসলামি আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের টিকাদান কীভাবে দ্রুত সম্পন্ন করা যায়, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে আগামীকাল বৈঠকে বসব- বলেন শিক্ষামন্ত্রী।

দীপু মনি জানান, দেশে ১২ থেকে ১৮ বছর বয়সী মোট শিক্ষার্থী এক কোটি ১৬ লাখ ২৩ হাজার ৩২২ জন। তাদের মধ্যে টিকা পেয়েছে ৪০ লাখ ৩২ হাজার ৫৬৯ জন। শতকরা ৩৫ শতাংশ শিক্ষার্থী টিকার আওতায় এসেছে। ৭৫ লাখ ৯০ হাজার ৭৫৩ জনের টিকা নেওয়া বাকি আছে।

তিনি বলেন, শতকরা ১০ ভাগের নিচে টিকা দেওয়া হয়েছে, দেশে এমন জেলা চারটি। শতকরা ১০ থেকে ২০ ভাগ টিকা দেওয়া হয়েছে, এমন জেলার সংখ্যা ১২টি। ২০ থেকে ৩০ ভাগ টিকা দেওয়া হয়েছে ১১টি জেলায়। ৩০ থেকে ৪০ ভাগ টিকা দেওয়া হয়েছে ১০টি জেলায়। ৪০ থেকে ৫০ ভাগ টিকা দেওয়া হয়েছে চারটি জেলায়। ৫০ থেকে ৬০ ভাগ চারটি, ৬০ থেকে ৭০ ভাগ সাতটি, ৭০ থেকে ৮০ ভাগ ছয়টি, ৮০ থেকে ৯০ ভাগ চারটি এবং ৯০ ভাগের বেশি টিকা দেওয়া হয়েছে দুটি জেলায়।

তিনি আরও বলেন, জানুয়ারির মধ্যে শিক্ষার্থীদের টিকাদান কার্যক্রম শেষ করার চেষ্টা চলছে। এর মধ্যে ৩৯৭ উপজেলায় ১৫ জানুয়ারি, তিন উপজেলায় ১৭ জানুয়ারি, ৫৬ উপজেলায় ২০ জানুয়ারি, ১৫ উপজেলায় ২২ জানুয়ারি, ৩৫ উপজেলায় ২৫ জানুয়ারি এবং ১১ উপজেলায় ৩১ জানুয়ারির মধ্যে টিকাদান সম্পন্ন করতে হবে।

বুটেক্স শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, বুটেক্স বন্ধের মতো পরিস্থিতি তৈরি হলে বন্ধ করে দেওয়া হবে। শিক্ষার্থীরা এখন অনলাইন ক্লাসের দাবি জানাচ্ছেন। কিছুদিন আগে তারা সশরীরে ক্লাসের দাবি জানিয়েছিলেন। শিক্ষার্থীরা দাবি জানাতেই পারেন। তবে সে দাবি যৌক্তিক হতে হবে। আশা করছি শিক্ষক-শিক্ষার্থী দুই পক্ষই যৌক্তিক আচরণ করবেন।

১২-১৮ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের টিকা গ্রহণের বিষয়ে তিনি বলেন, শিক্ষার্থীরা আইডি কার্ড দেখিয়ে কেন্দ্রে গিয়ে টিকা নিতে পারবে। কারো আইডি কার্ড না থাকলে সেক্ষেত্রে রেজিস্ট্রেশন কার্ড দেখালে টিকা দেওয়া হবে। ১২ বছরের ঊর্ধ্বে যেকোনো শিক্ষার্থী টিকাকেন্দ্রে গেলে টিকা পাবে।

১২ বছরের কম বয়সী শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে কী হবে- জানতে চাইলে দীপু মনি বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এ বিষয়ে এখনো নির্দেশনা দেয়নি। আমরা তাদের নির্দেশনার অপেক্ষায়। এখনো প্রাথমিকে সংক্রমণের খবর পাওয়া যায়নি। কাজেই তারা ক্লাস চালিয়ে যাবে।

তিনি বলেন, এখনই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করব না, যেভাবে সীমিত পরিসরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চলছিল; সেভাবেই চলবে। ১২ জানুয়ারির মধ্যে যারা এক ডোজ টিকা নেবে, তারা ক্লাসে আসবে, বাকিরা অনলাইনে ক্লাস করবে আর অ্যাসাইনমেন্ট জমা দেবে। সবার অন্তত এক ডোজ টিকা নেওয়া হলে তারপর থেকে তারা সশরীরে ক্লাস করতে পারবে। আশা করছি ৩১ জানুয়ারির মধ্যে সবাইকে এক ডোজ টিকার আওতায় আনা সম্ভব হবে।

তিনি আরও বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্যবিধি মানার কাজ চলছে। আরও কঠোরভাবে মানার জন্য আমরা মনিটরিংয়ের আওতায় নিয়ে আসব। কওমি মাদরাসায় স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে ঘাটতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। তারা যেহেতু আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই, তাই সরাসরি কিছু করা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। আমরা স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে সেখানে মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা করব। দুয়েকদিনের মধ্যেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব।

এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষা না হওয়ার গুঞ্জনের বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমরা পরীক্ষাগুলো নিতে চাই। সময়মতো হবে না এটা খুবই স্বাভাবিক। কারণ শিক্ষার্থীরা ঠিকমতো ক্লাস করতে পারেনি। আমরা একটা আভাস দিয়েছি বছরের মাঝামাঝি সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে পরীক্ষা নেওয়ার। কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে তারিখ নির্দিষ্ট করে বলতে পারছি না। যদি পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকে, আশা করছি পরীক্ষার তারিখ দুই-তিন মাস আগে বলতে পারব। আর পরিস্থিতি স্বাভাবিক না থাকলে সময় পেছাবে। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিবে শিক্ষা বোর্ড, শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তাই কেউ গুজবে কান দেবেন না।

তিনি আরও বলেন, নতুন কারিকুলামে মাধ্যমিক স্তরের ৬০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাইলটিং শুরু হবে ফেব্রুয়ারির ১ তারিখ থেকে। কনটেন্ট লেখা হয়েছে, রিভিউ হয়েছে। এখন কারেকশনের কাজ চলছে। এই স্কুলগুলোতে ১৩টি করে বই যাবে। এরপর প্রতি সপ্তাহে আমরা আপডেট নেব।