প্রাণের মেলা খ্যাত বই মেলা এবার যেন মন খারাপের মেলা

করোনা পরিস্থিতির অবনতির কারণে ১৪ এপ্রিলের বদলে ১২ এপ্রিল শেষ হলো অমর একুশে বই মেলা। প্রাণের মেলা বলে খ্যাত এই মেলাকে এবার প্রকাশকেরাই অভিহিত করলেন ‘মন খারাপের মেলা’ বলে। বিপুল ক্ষতির কবলে পড়েছেন বলে দাবি বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির। অন্যদিকে একাডেমির ঘোষণা অনুযায়ী করোনা পরিস্থিতির অবনতির কারণে ১৪ এপ্রিলের বদলে ১২ এপ্রিল শেষ হলো মেলা।

বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করে বলা হয়েছে, বিপুল অঙ্কের ক্ষতির কবলে পড়েছে তারা। মেলাকে তাঁরা বললেন ‘মন খারাপের মেলা’। লিখিত বক্তব্যে সংগঠনের সহসভাপতি এবং বইমেলা স্ট্যান্ডিং কমিটির আহ্বায়ক শ্যামল পাল বললেন, এবার মেলায় তাঁদের হিসাবে বিক্রি হয়েছে ৩ কোটি ১১ লাখ ৯১ হাজার ৯২৮ টাকার বই। গত বছর বাংলা একাডেমির হিসাবে বই বিক্রির পরিমাণ ছিল প্রায় ৮০ কোটি টাকা। এ থেকেই এবারের মেলার অবস্থা বোঝা যাবে।

প্রকাশক নেতারা বললেন, এবারের মেলায় ৪১৩টি প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে। এক ইউনিটের স্টলের ভাড়া, নির্মাণ ও পরিচালনার অনুৎপাদন খাতে সারা মাসে খরচ হয় ১ লাখ ১০ হাজার টাকা থেকে দেড় লাখ টাকা। এ ছাড়া বই প্রকাশের জন্য ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা বিনিয়োগ করতে হয়। যাঁরা দুই, তিন ও চার ইউনিটের স্টল এবং প্যাভেলিয়ন পেয়েছেন, তাঁদের খরচ আনুপাতিক হারে অনেক বেশি। সব মিলিয়ে প্রকাশকেরা প্রায় এক শ কোটি টাকার বিনিয়োগ করেছেন। মেলা থেকে তাঁদের এই বিনিয়োগের ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ উঠে আসে এবং বাদবাকি টাকা সারা বছরের বিক্রি থেকে আসে। এবার মেলায় বিক্রি একেবার তলানিতে ঠেকেছে। আর করোনার কারণে মেলার পরও বিক্রি বাড়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। গত বছরের মেলার পর থেকেই সৃজনশীল বইয়ের বিক্রি কমে গেছে। তাঁরা আশা করছিলেন, এবারের মেলায় কিছুটা হলেও ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে পারবেন। কিন্তু তা হয়নি।

মেলার বিপর্যয়ের কারণ হিসেবে তাঁরা ফেব্রুয়ারির বদলে চৈত্র মাসের খররোদের সময় মেলা করা এবং বারবার সময় পরিবর্তন করাকে দায়ী করেছেন। এ ছাড়া স্টল বিন্যাসেরও সমালোচনা করে তাঁরা বলেন, মূল মাঠে প্যাভেলিয়নগুলো একসঙ্গে রেখে ছোট প্রকাশকদের স্টলগুলো দূরে ঠেলে দেওয়ায় এসব প্রতিষ্ঠানে ক্রেতাদের উপস্থিতি খুবই কম ছিল। স্টল ও প্যাভেলিয়ন মিলেমিশে সারা মাঠে ছড়িয়ে দিলে সবাই ক্রেতা পেতে পারতেন।

প্রকাশকেরা তাঁদের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সহায়তা করার জন্য সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেছেন, নগদ আর্থিক সহায়তা তাঁরা চান না। এর বদলে সরকার যদি ১০০ কোটি টাকার বই কেনার জন্য বিশেষ বাজেট করে এই ৪১৩টি প্রতিষ্ঠান থেকে মানসম্মত বই কেনে, তবে প্রত্যেকেই তাঁদের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারবেন। এর পাশাপাশি তাঁরা সহজ শর্তে ঋণ প্রদানেরও আবেদন জানান।

সূত্রঃ প্রথম আলো

Leave a Comment