গণপরিবহন, আতঙ্ক নারীদের

ভোক্তাকন্ঠ ডেস্ক:

রাজধানীর গণপরিবহনে চলাচলরত নারীরা প্রতিনিয়ত নানা রকম ভোগান্তিতে পরছেন। হচ্ছেন নানা ভাবে নাজেহাল। এমনকি মাঝে মাঝে প্রাণনাশের আশংকায় পরিণত হয়েছে। ভুক্তভোগী হওয়া এইসব নারীরা না পাচ্ছেন আশেপাশে থাকা ব্যক্তিদের সাহায্য না পাচ্ছেন ভিকটিম হয়ে প্রসাশনের দায়িত্বশীল আচরণ।

সহ যাত্রীসহ পরিবহনের চালক, স্টাফ কিংবা হেল্পার দ্বারা প্রতিনিয়ত হয়রানির শিকার হয়েও নিরবে রাস্তায় চলাচল করছে এসব নারী যাত্রীরা। ফলে রাস্তা চলাচলে দুর্ঘটনা, ছিনতাই কিংবা বেশি ভাড়া নিয়ে তারা যতটা না চিন্তা করেন তার চেয়ে সবার আগে মাথায় এই চিন্তা আসে যে নিজের সতীত্ব (সন্মান) নিয়ে বাসায় ফিরতে পারব কি না? দিন দিন গণপরিবহন রীতিমতো আতঙ্কে পরিণত হচ্ছে তাদের কাছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রাফিয়া তামান্ন সন্ধ্যা ৭টার দিকে শান্তিনগর থেকে তরঙ্গ প্লাস বাসে করে বাসায় ফিরছিলেন। শুরু থেকেই বাসের হেলপার স্টুডেন্ট ভাড়া নিয়ে ঝামেলা শুরু করে। প্রতি চেক পোস্টে স্টুডেন্ট হিসেবে হাত তুলে চেকারকে আইডি কার্ড দেখানোর চেষ্টা করে রাফিয়া। চেকারকে আইডি কার্ড দেখানোর চেষ্টা করছে দেখে ওই হেলপার তার উদ্দেশে নানা ধরনের মন্তব্য করতে থাকে। বাস থেকে নেমে যাওয়ার আগে রাফিয়াকে সেই হেলফার হুমকি দিয়ে বলে পরেরবার এই বাসে উঠলে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেবে। হুমকি দেওয়ার পর বাকবিতণ্ডার এক পর্যায়ে হেলপারকে থাপ্পড় দেন রাফিয়া। তখন হেলফার তাকে ধাক্কা দিয়ে বাসের ভেতর ফেলে দিয়ে কিল-ঘুষি দিতে থাকে। এক পর্যায়ে রাফিয়ার নাক দিয়ে রক্ত বের হতে থাকে, হাত কেটে যায় ও শরীরের নানা স্থানে আঘাত লাগে৷

সন্ধ্যা আনুমানিক ৬টায় যমুনা ফিউচার পার্কের সামনে উত্তরাগামী ‘আকাশ পরিবহন’ এর (ঢাকা মেট্রো- ব ১৩-০৪৩৯) বাসটি থামে। বাস থেকে নামার সময় নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া মনিকা নামের এক শিক্ষার্থীকে বাসের হেল্পার বাজেভাবে স্পর্শ করে এবং অশ্লীল ভাষায় সম্বোধন করে, যা পাশের গাড়িতে থাকা বেশ কয়েকজন যাত্রী শুনতে পান।

পরে পুলিশের সহায়তায় উত্তরা আজমপুর সিগনালে বাসটিকে আটক করা হয়। অভিযুক্ত হেল্পার দোষ স্বীকার করে মাফ চাইতে থাকলে ভুক্তভোগী মনিকা মামলা না করায় পুলিশ তাকে মুছলেকা নিয়ে কড়াভাবে সতর্ক করে ছেড়ে দেয়।

ভুক্তভোগী নারীরা বলছেন, যত দিন যাচ্ছে পরিবহনে চলাচল নারীদের জন্য অস্বস্তি বেড়ে যাচ্ছে। সহ যাত্রীদের সাথে ঠেলাঠেলি করে বাসে উঠা, গায়ের সাথে ধাক্কা লাগা, হেলপাররা ওঠার সময় পিঠে হাত দেওয়ার চেষ্টা করা, বাসভর্তি মানুষ থাকলেও দাঁড়িয়ে যাওয়া। কাজ শেষ করে বাস পাওয়া খুব ঝামেলা। নারীদের জন্য বরাদ্দ বিশেষ বাসের সংখ্যা কম। ইচ্ছা থাকা স্বত্তেও দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করেও বিশেষ বাস পাওয়া যায় না।

ফলে সাধারণ বাসেই যাতায়াত কর‍তে হয়। বাসে যাওয়ার সময় কোনও নারীর সাথে বাজে কিছু হলে আশেপাশের যাত্রীরা হাঁ করে তাকিয়ে থাকে। সেভাবে কেউ এগিয়ে আসে না তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ করবার জন্য। নারীদের জন্য আলাদা কোনও সংরক্ষিত আসন লেগুনায় না থাকায় গায়ের সাথে গা লাগিয়ে অন্য যাত্রীর সাথে বসে যেতে হয়। অনেক সময় পাশের যাত্রী বাজেভাবে স্পর্শ করার চেষ্টা করে।

এই বিষয়ে লালবাগ জোনের উপ পুলিশ কমিশনার জসিম উদ্দিন বলেন, এখন পর্যন্ত আমার কাছে এই ধরনের অভিযোগ নিয়ে কেউ আসেনি। তবে কেউ ধরনের হয়রানির শিকার হয়ে অভিযোগ নিয়ে আসলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেব।

গণপরিবহনে যাত্রী হয়রানি বিষয়ে বাস মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, যৌন হয়রানির ঘটনা ঢাকা শহরের যে কয়েকটা গাড়িতে ঘটেছে তার ৪/৫ ঘটনায় আমরা নিজেরাই দোষীদের ধরিয়ে দিয়েছি পুলিশকে।

তিনি বলেন, এজন্য যাত্রীদের ও সচেতন হতে হবে। অনেক বাসে পুরুষ যাত্রীরা মহিলাদের সিটে বসে থাকে মহিলারা দাঁড়িয়ে থাকে। মহিলাদের জন্য নির্দিষ্ট সংখ্যক সিটের ব্যবস্থা আছে।

এ বিষয়ে নারী ঐক্য পরিষদের নেত্রী জাহেদা আক্তার বলেন, শুধু গণপরিবহন নয় সর্ব ক্ষেত্রে নারীরা হয়রানির শিকার হচ্ছে।জেল ফাঁসি এগুলো দিয়ে কি হবে? এগুলো তো সমাধান না। পুরুষশাসিত সমাজ তাদের যে লোভ লালসা, তাদের ভিতর যে অসভ্য শালিনতা এসব তো মনে করেন আইন করে রোধ করা যাবে না। এসব নিয়ে সমাজ বিজ্ঞানীরা গবেষণা করছেন এসব ঘটনা কেন ঘটছে। একজন পুরুষ যতক্ষণ না পর্যন্ত নিজেকে সংযত না করে এই জিনিসটা যে রাস্তায় যে বের হয়েছে সে আমার মা বা বোন আমি নিজেকে সংযত রাখব।তাহলে কিন্তু এগুলো ঠিক হয়ে যাবে।

একজন পুলিশ যদিও সে পুলিশ সে কিন্তু পুরুষ মানুষ। কাজেই এই পেশায় আসতে তাকেও পরিবার থেকে তৈরি হয়ে আসতে হবে যে ভিকটিম যারা তাদের কাছে সাহায্যের জন্য আসবে তারা আমার মা বা তারা আমার বোন। তাকে পুরুষতান্ত্রিক দৃষ্টিকোন থেকে না দেখে মানুষ হিসেবে ট্রিট করা।

খবর: বার্তা২৪.কম