কামরাঙ্গীর চরে অবৈধ গ্যাস, দায়ী কে?

এস এম রাজিব: রাজধানীর কামরাঙ্গীর চরে প্রায় মাসখানেক ধরে গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকার পর গত ০৩ জুন (শুক্রবার) পুনরায় সংযোগ দিয়েছে তিতাস উত্তরের ধানমন্ডি শাখা। তবে গ্যাস সংযোগ দেওয়া হলেও এখনও কোথাও কোথাও গ্যাস সরবরাহ করা হয়নি বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

গ্যাসের এ সঙ্কটকালীন সময়ে সেখানে লাকড়ির মণ ৮০০ থেকে হাজার টাকা পর্যন্ত হয়েছে। হোটেলেও বেড়ে যায় খাবারের দাম। গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় বিপাকে পড়েন নিম্নআয়ের লাখো মানুষ।

তাহলে প্রশ্ন, নজিরবিহীন এ অবৈধ সংযোগ এবং বকেয়া সৃষ্টির জন্য দায়ী কে? তিতাস না কি ভোক্তা না কি তৃতীয় পক্ষ?

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রসুলপুর এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, ‘অবৈধ এ গ্যাস সংযোগের জন্য তিতাসের অসাধু কর্মকর্তারাই দায়ী। কারণ তারা টাকার বিনিময়ে রাতের আধারে এসে গ্যাস সংযোগ দিয়ে যায়।’

টাকা কাকে দেন, এমন প্রশ্নের জবাবে তারা বলেন, ‘এটা নেয় তিতাসের ধানমন্ডি শাখার অফিসাররা। অফিসে গেলেই তারা বলেন- টাকা আর ঠিকানা দিয়ে যান লাইন দিয়ে আসব। তবে অফিসের কারো নাম জানেন না বলে জানিয়েছেন তারা।’

অবৈধ সংযোগ নিয়েছেন কেন, এমন প্রশ্নের জবাবে তারা বলেন, ‘আমরা তো বৈধ ভাবে গ্যাস লাইন নেওয়ার জন্যই অফিসে যাই। কিন্তু তারা তো মানা করে। তারা বলে গ্যাস সংযোগ দেওয়া বন্ধ রয়েছে। তবে টেবিলের নিচ দিয়ে ১০ হাজার টাকার বান্ডিল দিলেই রাতে এসে সংযোগ দিয়ে যায়।’

টাকা দিয়ে অবৈধ সংযোগ নেন কেন, এমন প্রশ্নের জবাবে রসুলপুর এলাকার বাসিন্দা মোশাররফ বলেন, ‘মনে করেন আমার পাঁচ তলা একটি বাড়ি রয়েছে৷ কিন্তু আমার বাড়িতে দুটা গ্যাস লাইনের বৈধতা দেওয়া হয়েছে। তাহলে আমি কি করবো। ৫ম তলার বাসিন্দা কী দ্বিতীয় তলায় এসে রান্না করবে? আর এটা কি সম্ভব?’

অন্য বাসিন্দা জাহাঙ্গীর মিয়া বলেন, ‘বর্তমানে তিতাস থেকে গ্যাস লাইন দিচ্ছে না, তারা বলে গ্যাস সঙ্কট। তাই বাধ্য হয়ে অনেকেই বোতলের (এলপি) গ্যাস ব্যবহার করছে বা ঘুষ দিয়ে অবৈধ সংযোগ নিচ্ছে।’

তবে তিতাসের ধানমন্ডি শাখার উপ-মহাব্যবস্থাপক (ডিএমডি) প্রকৌশলী নজীবুল হক বলেন, ‘অবৈধ গ্যাস সংযোগে তিতাসের কোন কর্মকর্তা দায়ী নয়। এটা তিতাসের নামে অন্য কেউ প্রতারণা করছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের এমডি সাহেব তো বলেই দিয়েছেন যদি তিতাসের কেউ দায়ী থাকে তাহলে তাকে ধরিয়ে থানায় দিন। আমরা ব্যবস্থা নেব।’

স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন- অবৈধ সংযোগের জন্য তিতাসের কর্মকর্তারা দায়ী এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা যদি বলি এর জন্য সাংবাদিকরা দায়ী তাহলে কী হবে? এর জন্য তারা (স্থানীয়রা) কী কোন প্রমাণ দেখাতে পেড়েছেন?’

অবৈধ সংযোগ কে দেয়- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘গ্রাহকরাই লাগিয়ে নেয়।’

নজীবুল হক বলেন, ‘গ্যাস লাইন সংযোগের জন্য তিতাস কর্মকর্তাদের দরকার হয় না। এর জন্য দরকার পাইপ, প্রয়োজনীয় মালামাল, ওয়েলডার এগুলো বাজারে পাওয়া যায়। আর এগুলো থাকলে যেকোনো অভিজ্ঞ লোক লাইন সংযোগ লাগিয়ে নিতে পারে। তিতাসের ওয়েলডার নেই। আমাদের যখন প্রয়োজন হয় আমরা তাদের ভাড়া করে আনি।’

এতো অরক্ষিত ব্যবস্থা থাকা ঠিক কী না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘তাহলে কী করবো আপনারা পরামর্শ দেন।’

স্থানীয়রা বলেছেন, প্রিপেইড মিটার লাগালে অবৈধ সংযোগ দূর করা সম্ভব। এমন মন্তব্যের প্রতিউত্তরে নজীবুল হক বলেন, ‘প্রিপেইড মিটার লাগানোর মানে হচ্ছে কে কতোটুকু গ্যাস ব্যবহার করেছে তা দেখে বিল দেওয়া। কিন্তু কেউ যদি অবৈধ ভাবে লাইন লাগিয়ে নেয় বা মিটার খুলে রেখে ব্যবহার করে তাহলে কী করবেন। প্রিপেইড মিটারেও চুরি করার সুযোগ রয়েছে।’

সময়মত বিল আদায় না করার কারণে বকেয়ার সৃষ্টি হয়েছে ভোক্তাদের উদৃতি দিয়ে এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘গ্যাস বিল কেন তারা (গ্রাহক) নির্দিষ্ট সময়ে পরিশোধ করলো না। আমাদের কেন আনতে যেতে হবে? নাগরিক হিসাবে কী তাদের দায়িত্ব নেই?’

তিতাসের নিয়মে তো রয়েছে এক/দুই বিল বকেয়া থাকলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। কিন্তু মাসের পর মাস চলে যাওয়ার পরও সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেননি কেন?- এমন প্রশ্নের জবাবে নজিবুল হক বলেন, ‘আমি তো বললামই তারা কেন সময় মতো বিল দেয়নি। আর বিল আদায় করার দায়িত্ব কেন আমাদের নিতে হবে। নাগরিক হিসেবে তাদেরও তো দায়িত্ব রয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘৫০ হাজার অবৈধ চুলার সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। তবে বকেয়া পাওনা কতো টা কালেকশন হয়েছে সেটা হিসাব শাখা বলতে পারবে।’

৮০/৯০ হাজার অবৈধ সংযোগ রয়েছে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এটা তো ওই এলাকায় কতগুলো বাড়ি আছে এমন হিসাব করে বলা হয়েছে। তবে এটা সঠিক হিসাব না।’

এক প্রশ্নের জবাবে নজিবুল হক বলেন, ‘গ্যাসের অবৈধ সংযোগ পুরোপুরি ভাবে বিচ্ছিন্ন হয়েছে এটা নিশ্চিত করে বলা যাবে না। এখনো অবৈধ সংযোগ থাকতে পারে।’

অবৈধ সংযোগ থাকায় ও বকেয়া পাওনা পরিশোধ না করায় গত ১০ মে থেকে কামরাঙ্গীরচরে পুরোপুরি ভাবে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেয় তিতাস। তিতাস দাবি করে, কামরাঙ্গীর চরে ১২ হাজার বৈধ লাইনের বিপরীতে প্রায় ৯০ হাজার অবৈধ গ্যাস সংযোগ রয়েছে। এছাড়াও বৈধ ভাবে গ্যাস ব্যবহারকারীদের কাছেও পাওনা রয়েছে ৬৭ কোটি টাকা।