গ্রীষ্মে লোডশেডিং বাড়ার শঙ্কা

ভোক্তাকণ্ঠ রিপোর্ট: এ মাসে সেচ মৌসুম শুরু হয়ে গেছে। আগামী মার্চ মাসে শুরু হচ্ছে পবিত্র রমজান। বাড়ছে গরমও। বিদ্যুতের চাহিদাও বাড়ছে। কিন্তু ডলার সংকটের কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদনে গ্যাস, কয়লা ও তেল চাহিদামতো আমদানি করা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। উৎপাদন সক্ষমতা থাকলেও জ্বালানির অভাবে বিদ্যুৎকেন্দ্র বসিয়ে রাখতে হতে পারে। এতে গরমের সময় (গ্রীষ্ম) লোডশেডিং বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, দেশে সাধারণত মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত বিদ্যুতের চাহিদা বাড়ে। এবার এই সময়ে বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে দাঁড়াবে ১৬ হাজার মেগাওয়াটের বেশি। বর্তমানে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২৪ হাজার ১১৪ মেগাওয়াট। এখন সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদিত হচ্ছে ১১ হাজার মেগাওয়াট। উৎপাদন সক্ষমতা উদ্বৃত্ত থাকা সত্ত্বেও বিদ্যুৎকেন্দ্রের জ্বলানি সংকটের কারণে সক্ষমতার কতটা উৎপাদন করা যাবে, তা নিয়ে সংশয় আছে।

বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) তথ্য মতে, গরমের সময় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে প্রয়োজন হবে প্রায় ৬০০ কোটি ডলার বা ৬৩ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। এ চাহিদা সরকারকে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো। সরকার এই ডলার জোগান দেওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকার বেশ কিছু আগাম পদক্ষেপ নিয়েছে। সরকারের এসব পদক্ষেপের মধ্যে বিদ্যুৎকেন্দ্রে গ্যাস সরবরাহ বাড়াতে স্পট মার্কেট থেকে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি শুরু করেছে। কয়লা ও জ্বালানি তেলের মজুদ বাড়ানোর উদ্যোগও নেওয়া হয়েছে। এবার সরকারের বড় ভরসা কয়লাভিত্তিক বৃহৎ তিন বিদ্যুৎকেন্দ্র রামপাল, পায়রা ও ভারতের আদানির বিদ্যুৎ। তবে রামপাল ও পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রে কয়লার সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন রাখা যাবে কি না, তা নিয়ে এখনো শঙ্কা আছে।

বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্র বলছে, প্রতি বছর ফেব্রুয়ারি থেকে সেচ মৌসুম শুরু হয়, যা ৩১ মে পর্যন্ত চালু থাকে। এ সময়ে বিদ্যুতের চাহিদা বাড়ে। গতবার সেচ মৌসুমে (এপ্রিল) বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদা ছিল ১৪ হাজার ৭৮২ মেগাওয়াট। চলতি বছর সেচ মৌসুমে বিদ্যুতের সম্ভাব্য চাহিদা ধরা হয়েছে ১৬ হাজার মেগাওয়াট। চলতি সেচ মৌসুমে দৈনিক অতিরিক্ত দুই হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ লাগবে। সেচ মৌসুমসহ গ্রীষ্মে তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় আগামী জুন পর্যন্ত বিদ্যুতের চাহিদা বাড়তে থাকবে। আগামী মার্চেই শুরু হচ্ছে রোজা। এ সময় মানুষের বাড়তি স্বস্তির জন্য রোজার পুরো মাস নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করা দরকার। ফলে বিদ্যুৎ সরবরাহে ঘাটতি দেখা দিলে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ বাড়বে।

এদিকে, কয়লা সংকটে এক মাস বন্ধ থাকার পর ১৪ ফেব্রুয়ারি আবার উৎপাদন শুরু করেছে বাংলাদেশ-ভারতের যৌথ বিনিয়োগে নির্মিত রামপাল তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের একটি ইউনিট। গ্রীষ্মে এখান থেকে প্রায় ৬০০ মেগাওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ পাওয়া যেতে পারে। কিন্তু ঋণপত্র (এলসি) খোলার জটিলতা স্বাভাবিক না হলে কয়লা সংকটে এপ্রিলের পর ফের কেন্দ্রটির উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাওয়ার শঙ্কা আছে।

আগামী জুন থেকে উৎপাদনে যাওয়ার কথা ছিল বিদ্যুৎকেন্দ্রটির দ্বিতীয় ইউনিটের। কিন্তু কয়লা সংকটে অগাস্টের আগে উৎপাদনে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎকেন্দ্রটির প্রকল্প পরিচালক সুভাষ চন্দ্র পাণ্ডে। 

তিনি বলেন, বর্তমানে যে কয়লা মজুদ রয়েছে এবং পাইপলাইনে আছে, তা দিয়ে কেন্দ্রটির একটি ইউনিট আগামী এপ্রিল পর্যন্ত চালানো সম্ভব হবে। এলসি জটিলতা না কাটলে কয়লা আমদানি ব্যাহত হবে, ফলে এপ্রিলের পর কেন্দ্রটি চালু রাখা সম্ভব হবে না।

কয়লা সংকটে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধের শঙ্কায় পটুয়াখালীতে অবস্থিত পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রও। কয়লার সরবরাহ স্বাভাবিক থাকলে গ্রীষ্মে এই বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে এক হাজার ২০০ মেগাওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে। কিন্তু ডলার সংকটে বকেয়া বিল পরিশোধ করতে না পারায় কয়লা আমদানি করতে পারছে না পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র কর্তৃপক্ষ। 

বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের (বিসিপিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এ এম খোরশেদুল আলম বলেন, ‘বকেয়া পরিশোধ না করায় ০১ জানুয়ারি থেকে পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রে কয়লা আমদানি বন্ধ রয়েছে। মজুদ কয়লা দিয়ে মার্চের ২০ থেকে ২২ তারিখ পর্যন্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাবে। পায়রা ও রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের কয়লা আমদানির জন্য ৭৫০ মিলিয়ন ডলার চেয়ে সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ।’

এদিকে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এবারও যদি জ্বালানির সরবরাহ নিশ্চিত করা না যায় তাহলে গতবারের মতো এবারও লোডশেডিংয়ে ভুগতে হবে দেশের মানুষকে।

তবে বিদ্যুৎ বিভাগের নীতি ও গবেষণা শাখা পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক (ডিজি) মোহাম্মদ হোসাইন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এবার বিদ্যুৎ সংকট মোকাবেলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। আশা করছি, জ্বালানি সংকটে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হবে না। তবে নিশ্চিত ভাবে বলা যায়, গত বছরের মতো লোডশেডিং থাকবে না।’