‘জ্বালানি সাশ্রয়ে উদ্যোগ নিতে হবে’

ভোক্তাকণ্ঠ ডেস্ক: জ্বালানি সাশ্রয়ে সিস্টেম লস ও অপচয় কমাতে হবে। সংকট উত্তরণে নিজস্ব জ্বালানি ব্যবহারে জোর দিতে হবে।

রোববার বাংলাদেশ এনার্জি সোসাইটির আয়োজনে ‘চলমান জ্বালানি সংকট: বাংলাদেশের করণীয়’ শীর্ষক ওয়েবিনারে এসব কথা বলেন বক্তারা।

ওয়েবিনারে মূল নিবন্ধ উপস্থাপন করেন এনার্জি সোসাইটির সভাপতি ও সাবেক মুখ্যসচিব আবুল কালাম আজাদ।

মূল নিবন্ধে বলা হয়, গ্যাসের অনুসন্ধান নানা কারণে বাধাগ্রস্ত হয়েছে। ২০০৯ সালে ৮৯ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদন হতো গ্যাস থেকে। এখন তা ৫৫ শতাংশে নেমে গেছে। গ্যাসের জায়গা দখল করেছে ডিজেল ও ফার্নেস অয়েলের মতো তরল জ্বালানি। গ্যাস বা কয়লার ওপর নির্ভরতা বাড়াতে পারলে তরল জ্বালানির ওপর নির্ভর করতে হতো না। বিদ্যুৎ উৎপাদনে সবচেয়ে বেশি খরচ হচ্ছে তরল জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে।

আরও বলা হয়, গ্যাসের সিস্টেম লস দুই শতাংশের বেশি হওয়ার কথা নয়। বৈশ্বিক ভাবে এটাই স্বীকৃত। দেশে এখন সিস্টেম লস হচ্ছে ১০ শতাংশ। অবৈধ সংযোগ আছে অনেক। এ অপচয়ের বড় অংশ কমানো সম্ভব। এছাড়া স্থলভাগে যতটা গ্যাস অনুসন্ধান করা গেছে, সমুদ্রে সেভাবে করা যায়নি। গ্যাসের উৎপাদন বাড়লেও তা ধরে রাখা যায়নি। গ্যাসের উৎপাদন দৈনিক ২৭০ কোটি ঘনফুটে গিয়ে আবার ২৩০ কোটিতে নেমে এসেছে। কয়লার দামও বিশ্ব বাজারে বেড়েছে। তাই দেশিয় কয়লা উত্তোলনের বিষয়টি বিবেচনা করে দেখা যেতে পারে।

প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি, খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বলেন, সমাধান করতে না পারলেও সবার সহযোগিতায় চলমান সংকট মোকাবিলা করা সম্ভব। একদিকে বিশ্ব বাজারে জ্বালানির দাম বেড়েছে, আরেক দিকে ডলারের বিপরীতে টাকার অবনমন হয়েছে। এতে জ্বালানি আমদানিতে লোকসান বেড়েছে।

দেশে অনুসন্ধান বাড়ালেও বিপুল গ্যাস পাওয়ার তেমন সম্ভাবনা দেখছেন না জ্বালানি উপদেষ্টা। তিনি বলেন, দক্ষ ব্যবহারের মাধ্যমে জ্বালানির চাহিদা কমাতে হবে। বিকল্প জ্বালানি ব্যবহারের চিন্তা করা যেতে পারে। তবে এখন বড় সমস্যা তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি)। এলএনজি আমদানি করতেই হবে। তাই এটি আমদানির জন্য আরও অবকাঠামো গড়ে তুলতে হবে।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ম. তামিম বলেন, নবায়নযোগ্য জ্বালানির জন্য অবকাঠামো গড়ে তোলা অনেক বিনিয়োগের বিষয়। এটি অল্প সময়ে করা কঠিন। শিগগির জ্বালানি তেলের দাম কমার সম্ভাবনাও খুব কম। কয়লা উত্তোলন নিয়ে কোনো পরিকল্পনাও দেখা যাচ্ছে না। বাংলাদেশের জন্য সামনে বড় নিয়ামক হতে যাচ্ছে গ্যাস। উৎপাদন বাড়াতে পেট্রোবাংলা যে কর্মসূচি নিয়েছে, তা উচ্চাভিলাষী। এলএনজি আমদানি করা লাগবেই। তবে বর্তমান সংকটের ওপর ভিত্তি করে কোন সিদ্ধান্ত নিলে তা ভুল হতে পারে।

আলোচনা শেষে সারসংক্ষেপে বলা হয়, পরিত্যক্ত গ্যাসকূপ সংস্কার, বন্ধ কূপ চালু ও নতুন কূপ খননের মাধ্যমে দেশে গ্যাসের উৎপাদন বাড়াতে হবে। সেচ, বাসাবাড়ি, শিল্পকারখানার ছাদ, রাস্তাঘাটে সৌরবিদ্যুতের ব্যবহার বাড়াতে হবে। সিস্টেম লস কমাতে পারলে খোলা বাজার থেকে এলএনজি আমদানির প্রয়োজন হবে না।

বিদ্যুৎ খাতের বেসরকারি উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ ইনডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসার অ্যাসোসিয়েশনের (বিআইপিপিএ) সভাপতি ইমরান করিম বলেন, বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণ ছাড়া বিদ্যুৎ উৎপাদন তিন গুণ করা সম্ভব হতো না। ফার্নেস অয়েলে ৩০ শতাংশ শুল্ক কর দিতে হয়। এটি না থাকলে ভোক্তাদের কম দামে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যেত।

ওয়েবিনারে আরও বক্তব্য দেন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) জ্বালানি স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান হুমায়ূন রশীদ, সামিট গ্রুপের পরিচালক মোহাম্মদ ফয়সাল করিম খান, জ্বালানি পরামর্শক খন্দকার আবদুস সালেক।

অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সাবেক বিদ্যুৎ সচিব মনোয়ার ইসলাম। স্বাগত বক্তব্য দেন বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) সাবেক চেয়ারম্যান এ এস এম আলমগীর কবির। 

আলোচনার সারসংক্ষেপ তুলে ধরেন পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) সাবেক চেয়ারম্যান মঈন উদ্দিন।