করোনার মতো ছোয়াচে নয় মাঙ্কিপক্স, প্রয়োজন সচেতনতার

ভোক্তাকণ্ঠ রিপোর্ট: মাঙ্কিপক্স নিয়ে গত শনিবার (২৩ জুলাই) বিশ্বব্যাপী জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

মাঙ্কিপক্স নিয়ে বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ভাইরাসটি করোনার মতো এতো ছোয়াচে নয়। এটা মানুষ থেকে মানুষে সরাসরি সংস্পর্শ ছাড়া খুব কম ছড়ায়। একইসঙ্গে বাংলাদেশের চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের বহুকাল ধরে চিকেনপক্স রোগীর সেবা করার অভিজ্ঞতা রয়েছে। তাই আতঙ্ক নয় প্রয়োজন সর্তকতা ও সচেতনতা।

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এ এস এম আলমগীর বলেন, ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন অনুযায়ী ইতিমধ্যে বাংলাদেশে প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। বিশেষ করে বিমানবন্দর, আমাদের যে পোর্টগুলো রয়েছে এবং সীমান্ত এলাকায় সতর্কতা অবলম্বন করার জন্য বলা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘মাঙ্কিপক্স একটি ভাইরাস জনিত প্রাণিবাহিত রোগ। এটি ইঁদুর, কাঠবিড়ালি, খরগোশ প্রভৃতি পোষক প্রাণী থেকে মানুষে ছড়ায়। বিশেষ করে মাঙ্কিপক্সে আক্রান্ত বানরজাতীয় প্রাণী থেকে এ রোগ ছড়ানোর প্রমাণ পাওয়া গেছে। তবে এখন পর্যন্ত সাধারণত গৃহপালিত প্রাণী গরু, ছাগল, ভেড়া, হাঁস, মুরগী, মহিষ, বিড়াল থেকে এখন পর্যন্ত রোগ ছড়ানোর কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি।’

এ রোগ মানুষ থেকে মানুষে কিভাবে সংক্রমিত হয় এমন প্রশ্নের জবাবে আইইডিসিআর’র এই প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা বলেন, ‘এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির সরাসরি শারীরিক সংস্পর্শ, ফুসকুড়ির রসের সংস্পর্শে ও ফুসকুড়ির খোসা, শরীরের নিঃসরণের সংস্পর্শে বা ব্যবহার্য সামগ্রীর সংস্পর্শে ছড়ায়।’

১৯৫৮ সালে ডেনমার্কে বানরের দেহে সর্বপ্রথম এ রোগ শনাক্ত হয় বলে একে মাঙ্কিপক্স বলা হয়।

এ এস এম আলমগীর বলেন, ‘সাধারণত উপসর্গ দুই-চার সপ্তাহ পর্যন্ত স্থায়ী হয়। যেহেতু ২১ দিন পর্যন্ত এটির সুপ্তিকাল। সুতরাং আক্রান্ত দেশ থেকে যারাই আসবো আমরা যেন নিজেকে আলাদা রাখি। অর্থাৎ নিজেকে আইসোলেশন থাকা নট কোয়ারেন্টাইন।’

মাঙ্কিপক্সে রোগে কি কি উপসর্গ দেখা যায়?
এ এস এম আলমগীর বলেন, ‘জ্বর (৩৮° সেন্টিগ্রেডের বেশি তাপমাত্রা), প্রচন্ড মাথা ব্যথা, ফুলে যাওয়া ও শরীরের বিভিন্ন জায়গায় লসিকাগ্রন্থি ফুলে যাওয়া ও ব্যথা, মাংসপেশীতে ব্যথা, অবসাদগ্রস্ততা, ফুসকুড়ি যা মুখ থেকে শুরু হয়ে পর্যায়ক্রমে হাতের তালু, পায়ের তালুসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে।’

তিনি বলেন, ‘এ রোগটির প্রাদুর্ভাব প্রধানত মধ্য ও পশ্চিম আফ্রিকায় দেখা যায়। ইতিপূর্বে এছাড়া অন্যান্য দেশেও এ রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা গেছে। তবে সে ক্ষেত্রে ওই দেশসমূহে ভ্রমণের ইতিহাস অথবা ওই দেশসমূহ থেকে আমদানিকৃত প্রাণীর সংস্পর্শে আসার প্রমাণ আছে।

উপসর্গ দেখা দিলে করণীয় কি?
সবার আগে নিজেকে অন্যদের কাছ থেকে আলাদা বা আইসোলেশনে থাকা। চিকিৎসক পরামর্শ নেওয়া, বিশেষ করে যারা আগে থেকেই দীর্ঘমেয়াদী অসুস্থতায় ভুগছেন (যেমন- অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, ক্যান্সার) তারা অতিদ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন।

গুটি বসন্তের টিকা, মাঙ্কিপক্সের প্রতিষেধক হিসেবে অনেকাংশেই কার্যকর হবে। তবে, বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এ টিকা গ্রহণের বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত প্রদান করেনি।

উল্লেখ্য, যারা ইতিপূর্বে গুটি বসন্তের টিকা গ্রহণ করেছেন (১৯৮০ সালে সর্বশেষ গুটি বসন্তের টিকা দেয়া হয়), তারা মাঙ্কিপক্স সংক্রমণ থেকে অনেকাংশে সুরক্ষিত।