মাঙ্কিপক্স কি, কিভাবে ছড়ায়?

শিমুল মাহমুদ: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স, জার্মানি ও বেলজিয়ামসহ বিশ্বের প্রায় ৮০ টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে মাঙ্কিপক্স। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত এসব দেশে শনাক্ত হয়েছে ২১ হাজারের বেশি মানুষ। আফ্রিকায় মারা গেছে ৭৫ জন। ব্রাজিলে এক জন, স্পেনের দুই জন আর প্রতিবেশী দেশ ভারতে শনাক্ত ৪ জনের মধ্যে মারা গেছে এক জন।

মাঙ্কিপক্স কি? কতটা সংক্রামক, কিভাবে ছড়ায়, এটি রোধ করার উপায় নিয়ে কথা বলেছেন বিএসএমএমইউ ভাইরোলজি বিভাগ সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সাইফ উল্লাহ মুন্সী।

ভোক্তাকণ্ঠের সাথে আলাপকালে ডা. সাইফ উল্লাহ মুন্সী মাঙ্কিপক্স প্রসঙ্গে বলেন, মাঙ্কিপক্স ভাইরাস, স্মলপক্সের মতো ভাইরাস পরিবারের সদস্য। এটি একটি বিরল রোগ এবং প্রধানত মধ্য এবং পশ্চিম আফ্রিকার দেশ যেগুলো গ্রীষ্মমণ্ডলীয় রেইনফরেস্টের কাছাকাছি সেখানে দেখা যায়। ভাইরাসের দুটি প্রধান স্ট্রেন রয়েছে। যথা-পশ্চিম আফ্রিকান এবং মধ্য আফ্রিকান।

উপসর্গ বিষয়ে তিনি বলেন, প্রাথমিক লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে জ্বর, মাথাব্যথা, ফোলাভাব, পিঠে ব্যথা, লিম্ফ নোড ফোলা, ঠাণ্ডা লাগা এবং ক্লান্তি। এতে ফুসকুড়ি তৈরি হয়, প্রায়শই মুখ থেকে শুরু হয়, তারপর শরীরের অন্যান্য অংশে, সাধারণত হাতের তালু এবং পায়ের তলায় ছড়িয়ে পড়ে।

ফুসকুড়িতে অত্যন্ত চুলকানি হতে পারে। ফুসকুড়ি পরিবর্তিত হয় এবং অবশেষে তা একটি ক্ষত তৈরি করে এবং যা পরে পড়ে যায়। ক্ষত দাগ হতে পারে। সংক্রমণ সাধারণত ১৪ থেকে ২১ দিন স্থায়ী হয় এবং নিজেই নিজেই ভালো হয়ে যায়।

সংক্রমণ বিষয়ে বলেন, কেউ সংক্রমিত ব্যক্তির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সাহচর্যে গেলে তিনি এতে আক্রান্ত হতে পারেন।
ভাইরাসটি ভাঙা চামড়া, শ্বাসতন্ত্র, শরীরের তরল বা চোখ, নাক বা মুখ দিয়ে শরীরে প্রবেশ করতে পারে। এটিকে আগে যৌনবাহিত সংক্রমণ হিসেবে বর্ণনা করা হয়নি। তবে যৌনতার সময় সরাসরি যোগাযোগের মাধ্যমে স্থানান্তরিত হতে পারে। এটি সংক্রমিত প্রাণী, যেমন- বানর, ইঁদুর এবং কাঠবিড়ালির সংস্পর্শে বা ভাইরাস-দূষিত বস্তু, যেমন: বিছানা ও পোশাকের মাধ্যমেও ছড়াতে পারে। আসলে কেউ সংক্রমিত ব্যক্তির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে অনেকক্ষণ থাকলে এটি ছড়িয়ে পড়তে পারে। এবারের আউট ব্রেকে যারা আক্রান্ত হচ্ছেন, তাদের মধ্যে অনেকে সমকামী এবং উভকামী পুরুষ রয়েছে।

চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়ে বলেন, মাঙ্কিপক্সের কোনো চিকিৎসা নেই। তবে এন্টিভাইরাল Tecovirimat, Cidofovir বা Brincidofovir মাধ্যমে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করা যায় বলে দাবি করা হয়ে থাকে। মাঙ্কিপক্স প্রতিরোধে গুটিবসন্তের (স্মল পক্স) বিরুদ্ধে টিকা ৮৫% কার্যকর বলে প্রমাণিত হয়েছে। এ ছাড়া অ্যান্টিভাইরাল ওষুধগুলোও সহায়ক হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ভয়াবহতা বিষয়ে ডা. সাইফ উল্লাহ মুন্সী বলেন, ভাইরাসের বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই হালকা, কখনও কখনও চিকেনপক্সের মতো হয় এবং কয়েক সপ্তাহের মধ্যে নিজেই পরিষ্কার হয়ে যায়। মাঙ্কিপক্স কখনও কখনও আরও গুরুতর হতে পারে। তবে পশ্চিম আফ্রিকায় মৃত্যুর কারণ (১০%) বলে জানা গেছে।