এতো এতো অভিযোগ রেস্টুরেন্টের বিরুদ্ধে, দণ্ড ৩০ হাজার

নিজস্ব প্রতিবেদক:

রান্না ঘরের পরিবেশ অপরিষ্কার-অপরিচ্ছন্ন, বাসী খাবার, ফ্রিজে বাসী খাবার এবং কাঁচা খাবার এক সঙ্গে রাখা, পানির ব্যবহৃত পুরাতন বোতলে বোরহানি বিক্রি, বোতলে উৎপাদন এবং মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ নেই। এতো এতো অভিযোগের পরেও রেস্টুরেন্টটিকে অর্থ দণ্ড হিসেবে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

সোমবার নিয়মিত অভিযানের অংশ হিসেবে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার প্রবেশ পথের দুই ধারে অবস্থিত রেস্টুরেন্ট এবং মিষ্টান্নের দোকানগুলোতে অভিযান চালায় জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।

অভিযানের অংশ হিসেবে মেঘপাই রেস্টুরেন্টে যায় ভোক্তা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। মেঘপাই রেস্টুরেন্টটির নিচ তলায় বাংলা খাবার এবং দু’তোলায় চায়নিজ খাবার বিক্রি করা হয়। সামনে থেকে দেখলে ভিতরের পরিবেশ সম্পর্কে কারো তিক্ত ধারণা হবে না। তবে ভোক্তা অধিকার সামনের দৃশ্যের থেকে ভিতরের দৃশ্যকে গুরুত্ব দেয় বেশি। তাই দেরি না করে মেঘপাই রেস্টুরেন্টটির রান্না ঘরে গেলেন কর্মকর্তারা। রান্না ঘরের অবস্থা দেখে চোখ কোপালে ওঠার মত। অপরিষ্কার-অপরিচ্ছন্ন পরিবেশের মধ্যেই তৈরি হচ্ছে বাংলা এবং চায়নিজ খাবার। এছাড়া ফ্রিজের মধ্যে দেখতে পায় বাসী খাবার। পানির ব্যবহৃত পুরাতন বোতলে বিক্রির জন্য সাজিয়ে রাখা হয়েছে বোরহানি। সেই বোতলের গায়ে নেই কোন উৎপাদন বা মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ।

পরে এসব অভিযোগে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর আইনের ৪৩ ধারায় দোসী সাবস্ত করে মেঘপাই রেস্টুরেন্টটিকে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। জরিমানাকৃত টাকা তাৎক্ষণিক আদায় করা হয়।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনের ৪৩ ধারায় বলা হয়েছে:
অবৈধ প্রক্রিয়ায় পণ্য উৎপাদন বা প্রক্রিয়াকরণ: মানুষের জীবন বা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতি হয় এমন কোন প্রক্রিয়ায়, যা কোন আইন বা বিধির অধীনে নিষিদ্ধ করা হয়েছে, কোন পণ্য উৎপাদন বা প্রক্রিয়াকরণ করা হলে অনুর্ধ্ব দুই বছরের কারাদণ্ড বা অনাধিক এক লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড হতে পারে।

এর আগে বিয়ে বাড়ি নামের একটি রেস্টুরেন্টেও অভিযান চালানো হয়। সেখানেও দেখা যায়, বোরহানির বোতলের গায়ে উৎপাদন বা মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ নেই। এই অপরাধে প্রতিষ্ঠানটিকে অধিদপ্তরের ৩৭ ধারায় দোষী সাবস্ত করে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। নগদে সেই টাকা আদায় করা হয়।

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনের ৩৭ ধারায় বলা রয়েছে:
পণ্যের মোড়ক, ইত্যাদি ব্যবহার না করা: কোন আইন বা বিধি দ্বারা কোন পণ্য মোড়কাবদ্ধভাবে বিক্রয় করার এবং মোড়কের গায়ে সংশ্লিষ্ট পণ্যের ওজন, পরিমাণ, উপাদান, ব্যবহারবিধি, সর্বোচ্চ খুচরা বিক্রয় মূল্য, উৎপাদনের তারিখ, প্যাকেটজাতকরণের তারিখ ও মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ স্পষ্টভাবে লিপিবদ্ধ করার বাধ্যবাধকতা লঙ্ঘন করলে অনুর্ধ্ব এক বছরের কারাদণ্ড বা অনাধিক ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড হতে পারে।

বাসী খাবার রাখার অপরাধে অধিদপ্তরের ৪৩ ধারায় দোসী সাবস্ত করে নিউ আমন্ত্রণ হোটেল এণ্ড রেস্টুরেন্টকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। জরিমানাকৃত টাকা তাৎক্ষণিক আদায় করা হয়।

এছাড়া লন্ডন পার্ক রেস্টুরেন্টেও অভিযান চালানো হয়। ফ্রিজে বাসী খাবার, চিকেন গ্রিল এবং মসলা পাওয়া যায়। এসব অপরাধে অধিদপ্তরের ৪৩ ধারায় দোসী সাবস্ত করে ১০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।

দই’র উৎপাদন এবং মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ না থাকায় এক্সিলেন্ট সুইট নামের একটি দোকানকে অধিদপ্তরের ৩৮ ধারায় দোসী সাবস্ত করে ৮ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনের ৩৮ ধারায় বলা রয়েছে:
মূল্য তালিকা প্রদর্শন না করা: কোন আইন বা বিধি দ্বারা আরোপিত বাধ্যবাধকতা অমান্য করে দোকান বা প্রতিষ্ঠানের সহজে দৃশ্যমান স্থানে পণ্যের মূল্য তালিকা লটকিয়ে প্রদর্শন না করার অপরাধে অনূর্ধ্ব এক বছর কারাদণ্ড বা অনধিক ৫০ হাজার টাকা
অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড হতে পারে।

এছাড়া নিত্যপণ্যের বাজার পরিদর্শন করে চাল, চিনি,পেঁয়াজ, কাঁচা সবজি, পোল্ট্রি, ভোজ্যতেলসহ অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য, পণ্য ক্রয়-বিক্রয় রসিদ, পণ্যের মূল্য তালিকা পরিবীক্ষণ করা হয়। এসময় বাজারে ন্যায্যমূল্যে নিত্যপণ্য বিক্রয়, পণ্য ক্রয়-বিক্রয়ের রসিদ সংরক্ষণ, মূল্য তালিকা প্রদর্শনের বিষয়ে ব্যবসায়ীদের হ্যান্ডমাইকে সতর্ক করা হয়।

ঢাকা মহানগরীতে অধিদপ্তরের ৩টি টিম কর্তৃক অভিযান পরিচালিত হয়। অভিযানে উপস্থিত ছিলেন- ঢাকা জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. আব্দুল জব্বার মণ্ডল এবং ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক ফাহমিনা আক্তার এবং রজবী নাহার রজনী।

এ প্রসঙ্গে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বাবলু কুমার সাহা জানান, নিত্যপণ্যের দাম ভোক্তা সহনীয় পর্যায়ে রাখতে সাপ্তাহিক ছুটিরদিনসহ নিয়মিতভাবে সারাদেশে অধিদপ্তরের মনিটরিং অব্যাহত রয়েছে। বাজারে কোন প্রকার অনিয়ম পরিলক্ষিত হলে আইন অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে অসাধু ব্যবসায়ীদের তিনি সতর্ক করেন।

আরইউ