গরুর ফার্মের আড়ালে অবৈধ জুস কারখানা, বিএসটিআইয়ের হানা

ভোক্তাকণ্ঠ রিপোর্ট: বাহিরের প্রধান ফটকে বড় করে লেখা ‘ফ্রেন্ডশীপ এগ্রো ফার্ম’। সাইনবোর্ডে গরু, ছাগল, মাছ, মুরগি আর ডিমের ছবি দেওয়া রয়েছে। তবে এর সবই মানুষের চোখে ধূলা দেওয়ার জন্য। বাহ্যিক দিক থেকে গরুর ফার্ম মনে হলেও ভেতরে চলছে অবৈধ জুস তৈরির রমরমা ব্যবসা। কোন প্রকার আম ছাড়াই তৈরি করা হচ্ছে ম্যাংগো জুস, লিচু ছাড়া তৈরি হচ্ছে লিচি ড্রিংকস। এছাড়া শিশুদের আইস ললি পপ, লাচ্ছি, ড্রিংকসহ বিভিন্ন পণ্য তৈরি করা হয় অবৈধ এই কারখানায়।

বিভিন্ন কেমিক্যাল, কাপড়ে ব্যবহারের রং, সেকারিন, লাইনের অপরিস্কার পানিসহ বিভিন্ন অস্বাস্থকর কাঁচামাল দিয়ে তৈরি হচ্ছে এসব জুস। যা স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্বক ক্ষতিকর। এসব অপরাধে আল ফারুক মাল্টি ফুড প্রডাক্টস নামের এই কারখানাটিকে দুই লাখ টাকা জরিমানা এবং সিলগালা করে দেওয়া হয়।

সোমবার সকালে নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার অংশ হিসেবে রাজধানীর ডেমরা থানার ডগাইর নতুন পাড়া এলাকায় অভিযান চালায় বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস এন্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই)।

মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেন বিএসটিআই’র নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ হাসিব সরকার। এছাড়াও বিএসটিআই’র সহকারী পরিচালক জিসান রহমান তালুকদার দায়িত্ব পালন করেন।

অভিযানে যা দেখে গেল
পূর্ব তথ্যে ভিত্তিতে অবৈধ এই কারখানায় অভিযানে যায় বিএসটিআই। তবে অভিযানে গিয়ে দেখে, কারখানাটির দুটি ফটকই তালাবদ্ধ। ফটকের ফাঁকা অংশ দিয়ে কর্মীদের কাজ করার দৃশ্য তখনও দেখা যাচ্ছিল। বিএসটিআই’র অভিযানের খবর পাওয়া মাত্র কর্মীরা ছোটাছুটি করে যে যার মতো পালিয়ে যায়।

পরে কারখানাটির প্রধান ফটক খুলে দেখা যায়, বড় বড় ড্রামে মিক্স করা কেমিক্যাল এবং পানি বোতলে ভরে তৈরি করা হচ্ছে ম্যাংগো জুস, লিচু ড্রিংকস, আইস ললি পপ, লাচ্ছি, ড্রিংকো সহ বিভিন্ন জুস জাতিয় পণ্য। এসব পণ্য তৈরি করতে বিএসটিআই’র কোনো অনুমোদন নেওয়া হয়নি। এছাড়া বাজারজাত করার ক্ষেত্রেও কোনো অনুমোদন নেই। অথচ জুসের বোতলে বিএসটিআই’র লোগো ব্যবহার করা হয়েছে। যা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ।

জরিমানা এবং শাস্তি
অবৈধ এই কারখানায় পাওয়া প্রায় ১০ লাখ টাকার বাজারজাত করার উপযোগী জুস এবং কেমিক্যাল জনসম্মুখে ধ্বংস করা হয়। এছাড়া বিএসটিআই আইন, ২০১৮ অনুসারে বিএসটিআই সিএম লাইসেন্স গ্রহণ ব্যতীত মানচিহ্ন ব্যবহারপূর্বক পণ্য উৎপাদন, বিক্রি ও বাজারজাত করার অপরাধে আল ফারুক মাল্টি ফুড প্রডাক্টস নামের প্রতিষ্ঠানকে এক লাখ টাকা এবং মোড়কের সনদ না নিয়েই পণ্য উৎপাদন, বিক্রি ও বাজারজাত করার অপরাধে আরও এক লাখ টাকা, মোট দুই লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। একই সঙ্গে জনস্বার্থে কারখানাটি সিলগালা করে দেওয়া হয়েছে।

যা বলছে বিএসটিআই
অভিযানের বিষয়ে বিএসটিআই’র সহকারী পরিচালক জিশান রহমান তালুকদার বলেন, ডেইরি ফার্মের আড়ালে আল ফারুক মাল্টি ফুড প্রডাক্টস নামের এই কারখানায় অবৈধভাবে, কোনো প্রকার বিএসটিআই’র অনুমোদন ছাড়া জুস, বিশেষ করে শিশু খাদ্য লাচ্ছি, ফুড ড্রিংকস, আর্টিফেশিয়াল ফ্লেভার ড্রিংকস, লিচি ড্রিংকস, ললিপপ, আইস ললি উৎপাদন, বাজারজাত এবং বিক্রি করছে।

তিনি আরও বলেন, এসব পণ্য তৈরি করার জন্য যেসব গুনাগুণ এবং ল্যাব সুবিধা থাকার কথা তাও নেই। এসব পণ্য তৈরি করতে যেসব কেমিক্যাল ব্যবহার করছে তা অ-অনুমোদিত। খোলা বাজার থেকে এসব কেমিক্যাল সংগ্রহ করেছে। নিম্নমানের কেমিক্যাল দিয়ে জুস তৈরি করা হতো। এসব অপরাধে বিএসটিআই আইন, ২০১৮ অনুসারে কারখানাটিকে দুই লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। একই সঙ্গে জব্দকৃত পণ্য জনসম্মুখে ধ্বংস করার পাশাপাশি কারখানাটি সিলগালা করে দেওয়া হয়েছে।

কারখানার মালিক পক্ষের পক্ষ থেকে প্রতিনিধি হিসেবে সেসময় উপস্থিত হোন বাংলাদেশ শিল্প উদ্যোক্তা এসোসিয়েশনের সভাপতি মো. কামরুল হাসান। তিনি বলেন, যেসব কারখানার বৈধ কাগজপত্র নেই তারা আমাদের সংগঠনের সদস্য হতে পারে না। এই প্রতিষ্ঠানের বৈধ কাগজ না থাকায় তারা আমাদের সদস্য হতে পারেনি। এসব অবৈধ কারখানার বিরুদ্ধে আমরা বিএসটিআই সহ সরকারের বিভিন্ন সংস্থাকে তথ্য দিয়ে থাকি। এই কারখানার ফটকে ডেইলি ফার্ম লেখা, ভেতরে যে এসব অবৈধ কাযক্রম চালাচ্ছিল তা দেখার সুযোগ হয়নি। সরকারের সংস্থার সহযোগিতা নিয়ে যখন আমরা দেখলাম, আমরাও চাই এসব অবৈধ কারখানা বন্ধ থাকুক। আমাদের নলেজে এমন অবৈধ কারখানার সন্ধান থাকলে আমরা অবশ্যই সরকারের সংস্থাগুলোকে জানাবো। আমরাও চাই অবৈধ কারখানা বন্ধ হোক।