মেয়াদ বাড়িয়ে বাসী খাবার বিক্রি করছে ‘ওয়েল ফুড’

নিজস্ব প্রতিবেদক:

মুখরোচক ফাস্ট ফুড ও চোখ ধাঁধানো রঙ্গিন ডেকোরেশনের আড়ালে ডিসপ্লেতে মেয়াদ বাড়িয়ে বাসী খাবারের রমরমা ব্যবসা করছে ‘ওয়েল ফুড’। অপরাধ গুরুত্বর হওয়ায় জরিমানাও গুনতে হয়েছে প্রতিষ্টানটিকে।

নিয়মিত অভিযানের অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার রাজধানীর তাজমহল রোডের ‘ওয়েল ফুড’ নামের আউটলেটে যায় জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা। এসময় ডিসপ্লেতে সব মুখরোচক ফাস্ট ফুডের পাশে উৎপাদন মেয়াদ দেখা যায় ১৩ জানুয়ারি। এসব খাবার আজ (১৩ জানুয়ারি) উৎপাদন হয়েছি কি না তা যাচাই করতে কারখানা থেকে নিয়ে আসা পণ্যের তালিকা দেখতে চাওয়া হয়। তালিকায় দেখা যায়, মাত্র ১২ধরনের খাবার কারখানা থেকে শো-রুমে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু ‘ওয়েল ফুড’র এই আউটলেটে সর্বনিন্ম ২৫ ধরণের খাবার ডিসপ্লে করে রাখা হয়েছে, যার প্রত্যেকটির পাশে উৎপাদন মেয়াদ হিসেবে ১৩ জানুয়ারি লেখা রয়েছে।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, ১২ ধরণের খাবার কারখানা থেকে আসলো কিন্তু দোকানে সাজানো প্রায় ২৫ ধরণের খাবার। বাকি খাবার আসলো কোথা থেকে? এমন প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে দেখা যায়, শো-রুমে সাজিয়ে রাখা কয়েক প্রকারের কেক, বাহারি মিষ্টি এবং কয়েক প্রকারের ফাস্ট ফুড যা আজকের (১৩ জানুয়ারি) উৎপাদিত নয়। গত ১১ জানুয়ারি বা তার আগে নিয়ে আসা বাসী খাবারও আজকের মেয়াদ লাগিয়ে বিক্রি করছে।

 

ক্রেতাদের সঙ্গে প্রতারণা করে এমন বাসী খাবার বিক্রির অপরাধে অধিদপ্তর আইনের ৪৫ ধারায় দোসী সাবস্ত করে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনের ৪৫ ধারায় বলা হয়েছে:

প্রতিশ্রুত পণ্য বা সেবা যথাযথভাবে বিক্রয় বা সরবরাহ না করা: প্রদত্ত মূল্যের বিনিময়ে প্রতিশ্রুত পণ্য বা সেবা যথাযথভাবে বিক্রয় বা সরবরাহ না করার অপরাধে অনূর্ধ্ব ১ বছরের কারাদণ্ড বা অনধিক ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড হতে পারে।

এর আগে বিক্রমপুর মিষ্টান্ন ভান্ডারে অভিযান চালায় ভোক্তা অধিকার। সেখানেও উৎপাদন মেয়াদ বাড়িয়ে মিষ্টি বিক্রির প্রমাণ পাওয়া যায়। এই প্রতিষ্ঠানকেও ৪৫ ধারায় ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

 

একই এলাকায় ‘গরম মিষ্টির হেঁশেল’ স্লোগান দিয়ে মিষ্টি বিক্রি করছে ‘সুনীতি’ নামের একটি দোকান। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, ক্রেতার জন্য বানিয়ে রাখা মিষ্টি এবং রসের মধ্যে ভাসছে মরা ছোট ছোট তেলাপোকা। তৎক্ষণিক সব মিষ্টি ধ্বংস করা হয়। এবং এই প্রতিষ্ঠানকে ৪৩ ধারায় ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনের ৪৩ ধারায় বলা হয়েছে:
অবৈধ প্রক্রিয়ায় পণ্য উৎপাদন বা প্রক্রিয়াকরণ: মানুষের জীবন বা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতি হয় এমন কোন প্রক্রিয়ায়, যা কোন আইন বা বিধির অধীনে নিষিদ্ধ করা হয়েছে, কোন পণ্য উৎপাদন বা প্রক্রিয়াকরণ করা হলে অনুর্ধ্ব দুই বছরের কারাদণ্ড বা অনাধিক এক লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড হতে পারে।

 

এছাড়া নিত্যপণ্যের বাজার পরিদর্শন করে চাল, চিনি,পেঁয়াজ, কাঁচা সবজি, পোল্ট্রি, ভোজ্যতেলসহ অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য, পণ্য ক্রয়-বিক্রয় রসিদ, পণ্যের মূল্য তালিকা পরিবীক্ষণ করা হয়। এসময় বাজারে ন্যায্যমূল্যে নিত্যপণ্য বিক্রয়, পণ্য ক্রয়-বিক্রয়ের রসিদ সংরক্ষণ, মূল্য তালিকা প্রদর্শনের বিষয়ে ব্যবসায়ীদের হ্যান্ডমাইকে সতর্ক করা হয়।

ঢাকা মহানগরীতে অধিদপ্তরের ৩টি টিম কর্তৃক অভিযান পরিচালিত হয়। অভিযানে উপস্থিত ছিলেন- ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার, ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক (মেট্রো) ফাহমিনা আক্তার, প্রধান কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক রজবী নাহার রজনী।

আরইউ